এক ম্যাচে দশ লাল কার্ড

বিশ্বকাপ শুরুর আগেই আলোচনায় আর্জেন্টিনার ফুটবল। তবে ফুটবলশৈলী কিংবা স্কোয়াড ঘোষণা নয়, বরং নেতিবাচক এক ঘটনারই শিরোনাম হতে হলো আর্জেন্টাইন ফুটবলকে। আর্জেন্টাইন ঘরোয়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে রেফারি দেখিয়েছেন দশটি লাল কার্ড!

আর্জেন্টিনার ফুটবলে ঘরোয়া লিগ এবং কাপের পাশাপাশি জনপ্রিয় এক টুর্নামেন্ট চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। সেই টুর্নামেন্টের ফাইনালেই মুখোমুখি হয়েছিল ঐতিহ্যবাহী দুই ক্লাব বোকা জুনিয়র্স এবং রেসিং। এদিন নির্ধারিত সময়ের খেলা সমতায় শেষ হলে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। ম্যাচ শেষের তিন মিনিট আগে কর্নার থেকে ভাসানো বলে বক্সের মধ্যে জটলায় হেড করে দলকে এগিয়ে দেন রেসিং মিডফিল্ডার কার্লোস আলকারাজ।

এরপরই ঘটে বিপত্তি, আনন্দের আতিশয্যে আলকারাজ বোকার ডাগ আউটের সামনে গিয়ে নানা অঙ্গভঙ্গি করতে শুরু করেন। সেখান থেকেই অগ্ন্যুৎপাতের শুরু, ক্ষেপে যান ডাগ আউটে থাকা বোকা জুনিয়র্সের কোচিং স্টাফ এবং খেলোয়াড়রা। হাতাহাতির এক পর্যায়ে আলকারাজের কান ধরে টানতে থাকেন বোকার এক খেলোয়াড়।

ম্যাচের দায়িত্বে ছিলেন আর্জেন্টাইন প্রখ্যাত রেফারি ফাকুন্দো তেল্লো। এবারের কাতার বিশ্বকাপেও বাঁশি হাতে মাঠে দৌড়ানোর কথা ৪০ বছর বয়সী এই রেফারির। তিনি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য সবার প্রথমেই লাল কার্ড দেখান আলকারাজকে। পরে লাল কার্ড কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন পাঁচ ফুটবলার।

এর মাঝে ছিলেন জাতীয় দলে খেলা ফরোয়ার্ড দারিও বেনেদেত্তো। ভিডিও অ্যাসিট্যান্ট রেফারির সহায়তায় তাঁকে তাঁকে এবং বেঞ্চে থাকা কার্লোস জামব্রানোকে লাল কার্ড দেখান রেফারি। এছাড়া রেসিংয়ের বদলি খেলোয়াড় জোনাথন গালভানকেও লাল কার্ড দেখান রেফারি।

এর আগে অতিরিক্ত সময়ের পাঁচ মিনিটের মাথায় বাতবিতন্ডায় জড়িয়ে লাল কার্ড দেখেন বোকা জুনিয়র্সের সেবাস্টিয়ান ভেলা এবং রেসিংয়ের জোহান কারবোনেরো। সবমিলিয়ে ম্যাচে দশজনকে মাঠছাড়া করেন রেফারি ফাকুন্দো তেয়ো, এর মাঝে বোকার ছিলেন সাতজন এবং রেসিংয়ের তিনজন। বিশ্বকাপ শুরুর আগেই যেন এই রেফারি জানান দিলেন মাঠে তিনিই সর্বেসর্বা, তাঁর সাথে ঝামেলা করে পার পাবে না কেউই।

ফিফার নিয়ম অনুযায়ী খেলা চলতে হলে প্রতি দলে কমপক্ষে সাতজন ফুটবলার মাঠে থাকতে হবে। কিন্তু লাল কার্ডের ঘটনার পর বোকা পরিণত হয় ছয়জনের দলে। ফলে ঘটনার পরপরই নির্ধারিত সময় শেষ না হলেও ম্যাচ শেষের বাঁশি বাজাতে বাধ্য হন রেফারি। এবারের ঘরোয়া লিগ এবং কাপ বোকা জিতলেও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি তাই গেছে রেসিংয়ের ঘরেই। 

বিশ্বকাপে এক সর্বোচ্চ লাল কার্ডের রেকর্ড চারটি। ২০০৬ সালে নেদারল্যান্ডস বনাম পর্তুগালের কুখ্যাত সেই ব্যাটল অব নুরেমবার্গের ম্যাচে এই ঘটনা ঘটেছিল। বিশ্বকাপে না হলেও আর্জেন্টিনার ঘরোয়া ফুটবলে দশ কিংবা তাঁর অধিক লাল কার্ড দেখানোর ইতিহাস বেশ পুরনো। ২০১১ সালে বুয়েন্স আয়ার্সে পঞ্চম বিভাগের ক্লেইপোল এবং ভিক্টোরিয়ানো অ্যারেনাসের ম্যাচে ৩৬টি লাল কার্ড দেখিয়েছিলেন রেফারি। সেদিন মাঠের হাতাহাতি গড়িয়েছিল ড্রেসিংরুমেও, পরিস্থিতি সামলাতেই তাই বাধ্য হয়ে লাল কার্ড দেখাতে হয়েছিল রেফারিকে। 

বিশ্বকাপ শুরুর আগে শিরোপাপ্রত্যাশী সকল দলই ব্যস্ত নিজেদের দল গুছিয়ে নিতে। কিন্তু ঘরোয়া টুর্নামেন্টের ফাইনালে নেতিবাচক এই ঘটনায় কিছুটা হলেও বিব্রত আর্জেন্টাইন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন। ঘটনায় জড়িত ফুটবলাররা তাই ভবিষ্যতে শাস্তি এবং জরিমানার সম্মুখীন হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।  

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link