আক্ষেপ বাড়লো রাব্বির

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের জন্য স্কোয়াডে ডাক পেয়েছিলেন। প্রস্তুতি ম্যাচে ৯২ রানের দারুণ একটি ইনিংসও খেলেন। কিন্তু মূল একাদশে জায়গা হয় নি। এবারও শ্রীলংকার সঙ্গে আসন্ন টেস্ট সিরিজে ২১ জনের স্কোয়াডে ছিলেন।

অপেক্ষা ছিলো, এবার হয়তো জাতীয় দলের জার্সিটা শরীরে গলাতে পারবেন। তা হলো না।

বাংলাদেশ একাদশ ঘোষনা করলো ইয়াসির আলী রাব্বিকে বাদ দিয়েই। তিন পেসার ও দুই স্পিনার; পাঁচ বোলার নিয়েই খেলছে বাংলাদেশ। মিরাজকে সহ খেলছেন ৭ ব্যাটসম্যান। এর মধ্যে ঠাই হয়নি রাব্বির। তার অপেক্ষা ও আক্ষেপ আরেকটু লম্বা হলো।

মনে করা হচ্ছিলো সাকিবের অনুপস্থিতিতে ছয় নাম্বার পজিশনে সবচেয়ে ভালো চয়েজ ইয়াসির আলী রাব্বি। মনে করার যথেষ্ট কারণও রয়েছে। ২০১৯ সালে বিপিএল এর পারফরমেন্স দিয়ে নজরে আসার পর থেকেই জাতীয় দলের রাডারে রয়েছেন এই ক্রিকেটার। বাংলাদেশ দলের পাইপলাইন বলতে যা বোঝানো হয়, তার প্রতিটি ধাপেই নিজের সামর্থের প্রমাণ দিয়েছেন এই ডানহাতি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান।

২০১৪ সালে অনূর্ধ্ব – ১৯ বিশ্বকাপ খেলা ইয়াসির আলী রাব্বির প্রথম শেণি ও লিস্ট এ ক্রিকেট অভিষেক হয় যথাক্রমে ২০১২ ও ২০১৩ সালে। এরপর থেকেই ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত মুখ চট্টগ্রামের এই মারকুটে ব্যাটসম্যান। তার সাথে বিশ্বকাপ খেলা লিটন কুমার দাস, মোস্তাফিজুর রহমান, মেহেদি হাসান মিরাজ, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, আবু হায়দার রনি, সাদমান ইসলাম সহ প্রত্যেকেই ইতমধ্যে জাতীয় দলে খেলে ফেলেছেন। এর মধ্যে কেউ কেউ জাতীয় দলে নিজের জায়গাটা পাকা করে ফেলেছেন, কেউ আবার আসা যাওয়ার মধ্যে আছেন। কিন্তু ইয়াসির আলী রাব্বি সমসাময়িক সবার সাথে পাইপলাইনে খেললেও জাতীয় দলে এখনো অভিষেক হয়নি।

পাশের দেশ ভারতে, পাইপলাইনে থাকা ক্রিকেটাররা বছরের পর বছর পারফর্ম করেও জাতীয় দলে সুযোগ পাননা। তবে সুযোগ পেলেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ জানান। বলা বাহুল্য ভারতের তুলনায় আমাদের ঘরোয়া টুর্নামেন্টের সংখ্যা নিতান্তই কম। তাছাড়া ঘরোয়া ক্রিকেটের কাঠামো দুর্বল হওয়ায় মানসম্মত ক্রিকেটার পাইপলাইনে নেই। আর যারা আছেন তারা আন্তর্জাতিক পরিসরে নিজেদের জাত চেনাতে ব্যর্থ।

সে বিবেচনায় ইয়াসির আলী রাব্বি একটু ব্যাতিক্রমই বটে। শুরু থেকেই এইচ পি দলের সাথে যুক্ত এবং নিয়মিত পারফর্ম করে নিজেকে আলাদা করেছেন তিনি।

২০১৯ এর বিপিএল এ ১১ ম্যাচে ১২৪.২৯ স্ট্রাইক রেটে ৩ ফিফটিতে ৩০৭ রান করে নির্বাচকদের নজর কাড়েন এই ডানহাতি। সে সময় জাতীয় দলের কোচ স্টিভ রোডস ও ক্যাপ্টেন মাশরাফি বিন মুর্তজার সম্মতিতে ইয়াসির আলী রাব্বিকে আয়ারল্যান্ড-এ বিশ্বকাপ প্রস্তুতির মঞ্চ হিসেবে ট্রাইনেশন সিরিজের দলে নেওয়া হয়। সেবারও মূল একাদশে জায়গা হয়নি এই ব্যাটসম্যানের।

এরপর জিম্বাবুয়ে ও উইন্ডিজদের বিপক্ষেও টেস্ট স্কোয়াডে ডাক পেয়েছিলেন, কিন্তু জাতীয় দলের জার্সি গায়ে দেওয়ার সুযোগ হয়নি।

ব্যাটিং-এ তামিমকে আদর্শ মানা ইয়াসির আলী রাব্বি তামিমের মতো আগ্রাসী ক্রিকেট খেলতে পছন্দ করলেও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৫৪ ম্যাচ ৫১.২০ গড়ে করেছেন ৩৭৮৯ রান। যার মধ্যে ৮ টা শতক আর ২৪ টা অর্ধ শতক! যেখানে অধিনায়ক মমিনুলের টেস্ট ও ফার্স্ট ক্লাস মিলে ব্যাটিং গড় – ৪১.৫৫। তামিম (৪০.৮৭) ও মুশফিকেরও (৩৮.৩৫) গড়টা রাব্বির থেকে নিচে।

জাতীয় দলের নিজের জায়গা পাকা করা, লংগার ভার্সন ক্রিকেটে জাতীয় দলের অন্যতম ভরসার নাম হওয়াটা রাব্বির স্বপ্ন। এখন দেখা যাক, কতদিনে রাব্বির এই স্বপ্নপূরণ হয়।

বিশেষ করে বাংলাদেশের পাইপলাইনে সেই আস্থার জায়গাটা তৈরি করা যা বছরের পর বছর সূর্যকুমার যাদভরা পারফর্ম করে ৩০ বছর বয়সেও ভারতীয় দলে আসছে, পারফর্ম করছে। মনিশ পান্ডে, শ্রেয়াস আইয়্যার, সাঞ্জু স্যামসনরা বারবার প্রমাণ করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link