বডিলাইন সিরিজ: রক্ত, ঘাম ও কান্না

সাল ১৯৩০। অ্যাশেজ সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ চলছে লর্ডসে। আগের ম্যাচেই ইংলিশ বোলিং অ্যাটাককে গুড়িয়ে দিয়ে ডাবল সেঞ্চুরি তুলে নেয়া তরুণ ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান যখন আবারো আরেকটা ডাবলের পথে, টাইম ম্যাগাজিনের ক্রিকেট কোরেস্পন্ডেন্ট তার ভয়ডরহীন অথচ নিখুঁত ব্যাটিং দেখে তুলনা করে বসলেন উনিশ শতকের বিখ্যাত ইংরেজ গায়িকা, অভিনেত্রী ম্যারি টেম্পেস্টের সাথে যাকে কিনা তখন ‘কুইন অফ হার প্রফেশন’ বলা হতো!

তিনি বলেন, ‘দুজনেরই মৌলিক জিনিষগুলো অসাধারণ এবং তাদের তা কাজে রূপ দেয়ার ক্ষমতাও অতিপ্রাকৃত!’ হয়তোবা তুলনাটা নেহায়েতই কাগজের কাটতি বাড়ানোর জন্যে ছিলো, কিন্তু দিনশেষে তা ব্র্যাডম্যানের জন্য যথার্থ ছিলো। ম্যারিকে তার পেশার রানী বলা হতো, হোক মাত্র একুশ বছর বয়েস, সে সময়ে ব্র্যাডম্যানও ক্রিকেটে নিজের রাজত্ব সামলাচ্ছিলেন বৈকি!

দিনপনেরো পরে হেডিংলিতে প্রথম দিনেই করেন ৩০৯! তাও সেটা ছিলো নিজের অষ্টম ম্যাচে। ইতিহাসের দ্রুততম হাজার রানও পূর্ণ হয় এদিনে। বিখ্যাত টাইমস ম্যাগাজিন তাঁদের কলামে লেখে, ‘তিনি ইংলিশ বোলিং লাইনআপকে ধ্বংস করেছেন এমন ব্যাটিং দিয়ে যা ছিলো সব সমালোচনার উর্ধ্বে, কেননা এতে যেমন অবলীলায় রান তোলা ছিলো তেমনি ছিলো চূড়ান্ত নিরাপত্তা। তাকে খেলতে দেখে কখনো মনে হয়নি যে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠানো সম্ভব!’

সফরকারীরা ২-১ ব্যাবধানে সে সিরিজ জিতে অ্যাশেজ পুনরুদ্ধার করে আর ব্র্যাডমানের ঝুলিতে জমা পড়ে ১৩৯.১৪ গড়ে ৯৭৪ রান, যাতে ছিলো একটা ত্রিপল সেঞ্চুরি, দুটো ডাবল আর টেন্ট ব্রিজে একটা ১৩১, সাথে আরো কিছু প্রশংসার ফুলঝুরি। ম্যানচেস্টার গার্ডিয়ানের বিখ্যাত ক্রীড়া লেখক নেভিল কার্ডাস তাঁকে বলেন, ‘ঈশ্বরপ্রদত্ত চোখ আর হাত সাথে যোগ করুন দারুণ উদ্দীপনা আর দ্রুত অথচ জোরালো ক্রিকেটীয় শট, ফলস্বরূপ আপনি ডন ব্র্যাডম্যানকে দেখতে পাবেন যিনি কিনা একুশেই নিজের স্বভাব থেকে যৌবনের সব অপরিপক্বতা আর আবেগকে ছেঁটে ফেলে এ বয়সের শক্তি আর উদ্দীপনাটাকে ধরে রেখেছেন।’

ব্র্যাডম্যানের আত্মবিশ্বাস কখনোই তার ঔদ্ধত্ব ছিলোনা এবং কোনো মাইলফলক ছোঁয়ার পরে তার নম্রতা কখনোই কপট ছিলোনা। তারপরও ১৯৩২-৩৩ মৌসুমের ওশেনিয়া সফরে নির্বাচিত হওয়া ইংল্যান্ডের অধিনায়ক ডগলাস জার্ডিনের মনে হতে থাকে তার এ নম্রতা, এ ব্যাগ্রতা মেকি। জার্ডিন তাঁকে একজন স্যাডিস্ট হিসেবে দেখতেন যে কিনা মিথ্যে নম্রতার মুখোশ পরে আছে।

যাই হোক, মাত্র একুশ বছর বয়সী ব্র্যাডম্যানের এমন পারফরমেন্স নাকউঁচু ব্রিটিশদের আঁতে ঘা লাগিয়ে দিয়েছিলো। তারা ‘যে কোনো মূল্যে’ অ্যাশেজ ফেরত পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলো। দরকার ছিলো একটা রণকৌশলের যা কিনা একটু অভিনব, প্রতিপক্ষের কল্পনার বাইরে। আগের অ্যাশেজে প্রচলিত সব ছকেই ব্র্যাডম্যান নামক পাগলা ঘোড়াটার মুখে লাগাম পরানোর চেষ্টা তদবির করা হয়েছিলো এবং রিক্ত হাতে ফিরতে হয়েছিলো। তাই এবারেরটাকে অভিনব হতেই হতো, হোক সেটা সহিংস, অসুন্দর কিংবা ক্রিকেটীয় স্পিরিটের বাইরে।

পার্সি চ্যাপম্যানের অধীনে জার্ডিন ১৯২৯ অ্যাশেজে খেললেও ব্যবসায়িক দায়বদ্ধতার কারণে ১৯৩০ এর সবগুলো ম্যাচ মিস করেছিলেন। ব্যবসায়িক ব্যস্ততা সেরে ক্রিকেটে ফেরার পরে তাকে অধিনায়কত্ব দেয়া হয় ইংল্যান্ড দলের। অধিনায়কত্ব করেছিলেন ১৯৩১ এর নিউজিল্যান্ড সিরিজে আর ১৯৩২ এ ভারতের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে। লর্ডসের প্রায়ান্ধকার এক রুমে বসে যখন ব্র্যাডম্যানের ওভালে করা ২৩২ এর নিউজরিল ফুটেজ দেখছিলেন জার্ডিন, তখন লক্ষ্য করলেন হ্যারল্ড লারউডের করা হঠাত একটা বাউন্সারে হকচকিয়ে গিয়ে লেগসাইডে খেলতে চেয়েছিলেন, মিস করে ফেলায় বলটা আঘাত হানলো সরাসরি বুকে। তীব্র ব্যাথায় কাতরাচ্ছিলেন ব্র্যাডম্যান। যা বুঝার বুঝে নিয়েছিলেন জার্ডিন।

ডানকান হ্যামিল্টন তার লেখা লারউডের বায়োগ্রাফিতে এ মূহুর্তটাকে বলেছেন জার্ডিনের ‘ইউরেকা মোমেন্ট’, যা জার্ডিনের কাছে ব্র্যাডম্যানের কাপুরুষতার প্রমাণ হিসেবে মনে হতে থাকে।

ব্র্যাডম্যান বল মাটিতে খেলতেই ভালোবাসতেন। বাতাসে খেলতেন কদাচিত। জার্ডিন বুঝে গিয়েছিলেন শরীরের দিকে ধেয়ে আসা শর্টবলই ব্র্যাডম্যানের একমাত্র দুর্বলতা, যা তাকে ব্র্যাডম্যানের রানের ফল্গুধারা আটকানোর সুবর্ণ সুযোগ এনে দেবে, সাথে তাকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেয়ারও!

১৯১১-১২ মৌসুমের অ্যাশেজে ইংলিশ বোলার ফ্র্যাঙ্ক ফস্টার তার বিষাক্ত ইনসুইনঙ্গার দিয়ে অস্ট্রেলীয়দের থাই আর লেগস্ট্যাম্পকে দুর্বিষহ দেড়টি মাস উপহার দিয়েছিলেন। তার প্রায় একযুগ পরে সাউথ অস্ট্রেলিয়াও একই রকম কৌশল অবলম্বন করে সফল হয়েছিলো। জার্ডিন এতে কোনোপ্রকারের নতুনত্ব আনেননি। তবে এবার এর বিশেষত্ব ছিলো এর নিয়মতান্ত্রিক প্রয়োগে, আর জার্ডিনের চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায়।

লারউড, বিল ভোস আর বিল বওস ছিলেন জার্ডিনের তূণের এমন তিনটে তীর যা ছিলো একাধারে শক্তিশালী, নির্ভুল, নির্দয়, পেশাদার এবং অতি গুরুত্বপূর্ণভাবে জার্ডিনের আজ্ঞাবহ। প্রথম দুজন নটিংহামশায়ারে জার্ডিনের বন্ধু আর্থার কারের তত্বাবধানে সে মৌসুমের শেষদিকে এবং অ্যশেজের ওয়ার্মআপ ম্যাচে বডিলাইন বোলিংয়ের কার্যকরিতা পরীক্ষা করেন।

ব্র্যাডম্যান তিনটা ওয়ার্মআপ ম্যাচে খেলেন এবং ছয় ইনিংসে করেন সাকুল্যে ১০৩ রান! অথচ আগের অ্যাশেজের পর থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দোষ টেস্টে রান তুলেছিলেন ১২৫৩, যাতে আরো তিনটে ডাবল সেঞ্চুরি ছিলো। যদিও এ সিরিজ শুরুর আগে তার সাথে বোর্ড ঝামেলা পাকাচ্ছিলো তার একটা পত্রিকার কলামিস্টের খন্ডকালীন চাকরি নিয়ে। বোর্ডের ধারণা ছিলো, তার ক্যালিবারের একজন খেলোয়াড়ের এ খন্ডকালীন চাকরি ২৮% বেকারত্বের দিনে অস্ট্রেলীয় জনগণের মনে বিরূপ প্রভাব ফেলবে।

অবসাদের কারণে সিরিজের প্রথম ম্যাচটা মিস করলেন ব্র্যাডম্যান। যদিও জার্ডিন মনে করেছিলেন ওয়ার্মআপ ম্যাচের ক্রমাগত ব্যর্থতা তাকে নাড়িয়ে দিয়েছিলো। লেগ থিওরি যতোটা ট্যাকটিকাল অস্ত্র ছিলো, ঠিক সমানভাবে একটা সাইকোলজিক্যাল অস্ত্রও ছিলো। আর তাই জার্ডিন তার প্রধান লক্ষ্যবস্তু ব্র্যাডম্যানের অনুপস্থিতি সত্বেও প্রথম ম্যাচে এ ট্যাকটিকসে দলকে খেলালেন।

থাই আর হিপ ক্রমাগত বাউন্সার আর ইনসুইঙ্গারের আঘাতে জর্জরিত হওয়ার পরও স্ট্যান ম্যাককেব করলেন ১৮৭ যা অ্যাশেজ ইতিহাসেরই সেরা ইনিংস হিসেবে অনেক বিশেষজ্ঞ মত দেন। কিন্তু লারউডের ১০ উইকেট জার্ডিনকে এনে দেয় সিরিজে ১-০ লিড। মেলবোর্ন হেরাল্ড প্রথম দিনের খেলা শেষে ইংল্যান্ডের এই কৌশলের নাম দেয় ‘বডিলাইন বোলিং’, এডওয়ার্ড সিওয়েল বলেন ‘টরসো বোলিং’, নেভিল কার্ডাসের ভাষায় জার্ডিন-লারউডের এ কূটচাল হয়ে গিয়েছিলো ‘লেগ স্লিঙ্গিং’।

ব্র্যাডম্যান ফিরলেন দ্বিতীয় টেস্টে। যথারীতি তাকেও তিন লেগস্লিপ, দুটো লেগ গালি আর একটা করে ফরোয়ার্ড শর্ট লেগ, লেগ গালি আর মিড অন দিয়ে স্বাগত জানানো হলো। অতি আত্মবিশ্বাসের কানাগলিতে আটকে গিয়ে বওস বাউন্সারের বদলে করে বসলেন প্রায় ফুলার লেন্থের একটা বল। এদিকে বাউন্সার আঁচ করে হুকের জন্য স্ট্যান্স নেয়া ব্র্যাডম্যানের ব্যাটের নিচের দিকে এক কোনায় লেগে সে ফুলার লেন্থ বলটা আঘাত হানলো স্ট্যাম্পে। ব্র্যাডম্যান আউট! তাও ইনিংসের প্রথম বলে! অকল্পনীয়! এতদসত্বেও, বওস জার্ডিনের বকুনির ভয় পাচ্ছিলেন! বাউন্সার করতে পারেননি যে! কিন্তু কিসের কি! জার্ডিন তখন আনন্দে আত্মহারা! হতচ্ছাড়া ব্র্যাডম্যানকে রোখাই যে প্রধান লক্ষ্য ছিলো!

দ্বিতীয় ইনিংসে ব্র্যাডম্যান করেন ১০৩ যেখানে পুরো অস্ট্রেলিয়া সংগ্রহ করে সাকুল্যে ১৯১ রান। এ ইনিংসে ব্র্যাডম্যানের ব্যাটসম্যানশিপের অন্য দিকটা দেখে ইংল্যান্ড। মাত্র সাতটা চার মারেন এতে, কিন্তু খেলেছেন পুরো স্টেডিয়ামজুড়েই। যখন সেঞ্চুরিতে পৌঁছেন তিনি, এমসিজির দর্শক মাঠে নেমে আসেন তাকে অভিনন্দন জানাতে, খেলা বন্ধ থাকে প্রায় মিনিট পাঁচেকের মতো। চতুর্থ দিনে প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নেয়া বিল ও’রেইলির আরেকবার ৫ উইকেট শিকারে সিরিজে সমতায় ফেরে অজিরা।

অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানরা যখন লারউড, ভোস, বওসের ক্রমাগত বাউন্সারে আঘাতপ্রাপ্ত হতে থাকেন এমসিজির দর্শক তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়েন। এ নিয়ে প্রেস কনফারেন্সেও কম ঝক্কি সইতে হয়নি তাদের। পরিস্থিতি সামাল না দিয়ে জার্ডিন উল্টো দিলেন আগুনে ঘি ঢেলে। নেট প্র্যাকটিসের সময়ে সব দর্শককে বের করে দেন নেটের আশপাশ থেকে যারা তাকে ‘ফা** সার্ডিন’ বলে গাল দিচ্ছিলো। অ্যাডিলেডে পরিস্থিতি এতোটাই ঘোলাটে হয়ে গিয়েছিলো যে স্টেডিয়ামের ভেতরে-বাইরে পুলিশ মোতায়েন করতে হয়েছিলো!

ইংল্যান্ড টসে জিতে ব্যাট করলো, স্কোরবোর্ডে তুললো ৩৪১। অস্ট্রেলিয়া জবাব দিতে নেমে শুরুতেই হারায় ফিঙ্গলটনকে। এর কিছুক্ষণ পরে লারউডের হঠাত লাফিয়ে উঠা একটা বল সরাসরি আঘাত হানে অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক বিল উডফুলের বুকে। উইকেটে চিত হয়ে শুয়ে পড়েন বিল, শার্ট খুলতেই দেখা মেলে একটা বড়সড় কালশিটের, ছয় সপ্তাহ আগে একটা চোট পেয়েছিলেন যেখানে সেখানেই আবার বলের আঘাত লেগেছে!

দর্শকদের দুয়োতে তখন অ্যাডিলেড উত্তাল। এসবে পাত্তা না দিয়ে ব্র্যাডম্যানকে খোঁচাতেই কিনা জার্ডিন বলে উঠলেন ‘ওয়েল বোল্ড হ্যারল্ড!’ বলটা লেগ থিওরির অন্তর্ভুক্ত ছিলো না কিন্তু একে ওর ফলাফল হিসেবেই ধরে নেয়া হচ্ছিলো।

এরপরে যা করলেন জার্ডিন তাতে অস্ট্রেলীয়দের সামনে তার খলনায়ক বনে যাওয়াটা অবধারিতই ছিলো। চোট সামলে উঠে ব্যাটসম্যানরা যখন ওভারের সপ্তম বল মোকাবেলা করতে প্রস্তুত, লারউড বোলিং মার্ক থেকে ধেয়ে আসছিলেন বোলিং প্রান্তে, তখনই খেলা থামালেন জার্ডিন। নিজের ফিল্ডারদের ইশারা করলেন লেগসাইডে ছাতার মতো করে দাঁড়িয়ে যেতে। আশি বছর পেরিয়ে গেছে কিন্তু আজও এ দৃশ্যটা খলনায়কোচিত বলেই মনে করা হয়। জার্ডিনের বাধ্যগত ছাত্রের মতো লারউডও বডিলাইন বোলিং করে গেলেন, আরো একবার উডফুলের হাত থেকে ব্যাট ছিটকে দিতে সক্ষম হলেন। দর্শকদের দুয়ো তীব্র থেকে তীব্রতর হতে লাগলো।

অন্যপাশ থেকে ব্র্যাডম্যান আর ম্যাককেবের ফিরে যাওয়া সত্বেও উডফুল আরো ঘণ্টা দেড়েকের মতো লড়াই করে গেছেন বুক চিতিয়ে। যখন আউট হয়ে সাঝঘরে ফিরলেন এমসিসির ট্যুর ম্যানেজার দুজন রিচার্ড প্যালাইরেট আর পেলহাম ওয়ার্নার তাকে দেখতে অস্ট্রেলিয়ান ড্রেসিং রুমে যান। তাদের দেখতে পেয়েই উডফুল বলে উঠলেন ‘চলে যাও এখান থেকে তোমরা’। খেলতেও অসম্মতি জানালেন এই বলে যে, ‘দুটো দল খেলছে এখানে। একটা ক্রিকেট খেলছে আরেকটা ক্রিকেটের নামে অন্য কিছু খেলছে।’ এ কথাগুলো ওয়ার্নারের আত্মসম্মানে আঘাত হানলো ভালমতোই। পরে তাকে তার হোটেল রুমে চোখের পানি মুছতে দেখা যায়।

উডফুলের কাছে অপশন ছিলো বুনো উলের জবাব বাঘা তেঁতুল দিয়ে দেয়ার। সহ-অধিনায়ক ভিক রিচার্ডও তাকে বলছিলেন জার্ডিনের ব্যাটিং লাইনআপের বিরুদ্ধে লেগসাইডে ছাতার মতো ফিল্ডার দাঁড় করাতে। কিন্তু উডফুল এটা না করার সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। তার মতে এটা ছিলো ক্রিকেটীয় স্পিরিটের পরিপন্থী। ফলাফল যা হবার তাই হলো।

অজিরা সিরিজ হারলো ৪-১ ব্যবধানে। ১১২.২৯ ক্যারিয়ার গড় নিয়ে খেলতে নামা ডন ব্র্যাডম্যান এ সিরিজ শেষ করলেন ৫৬.৫৭ গড় নিয়ে। হ্যাঁ, এমসিসি দলের ম্যানেজার ওয়ার্নারের অস্ট্রেলিয়ার উপরে প্রতিশোধটা নেয়া হয়ে গিয়েছিলো বটে কিন্তু এতে বলির পাঠা বনতে হয়েছিলো অনেককে। লারউডকে আর কখনো ক্রিকেট মাঠে দেখা যায়নি, ক্রিকেটীয় স্পিরিট, নীতি-নৈতিকতাকে জলাঞ্জলি দিয়ে ঘৃণ্য ট্যাকটিকস বেছে নেয়ায় জার্ডিনও হয়ে উঠেছিলেন হাসির পাত্র, বডিলাইন বোলিংও নিষিদ্ধ হয় ক্রিকেট থেকে।

শত শত বই, আর্টিকেল, ফিচার লেখা আছে এই বডিলাইন সিরিজ নিয়ে, বিল উডফুলের ক্রিকেটীয় স্পিরিট নিয়ে, জার্ডিনের কূটচাল নিয়ে, লারউডের পরিণতি নিয়ে, ব্র্যাডম্যানের ক্যারিয়ার গড়ে আচমকা ধ্বস নিয়ে। লোকের মনে দাগ কাটতে হলে আপনাকে দুটো পথের একটা বেছে নিতে হবে। হয় খুব ভালো কিছু করে ফেলতে হবে কিংবা খুবই খারাপ কিছু। ব্র্যাডম্যানকে রুখে দেবার কারণেই হোক কিংবা ক্রিকেটের স্পিরিটের বিরুদ্ধে গিয়ে ফলাফল নিজেদের অনুকূলে আনাই হোক, জার্ডিনকে আজও স্মরণ করা হয় প্রতিবার অ্যাশেজ এলেই। ‘ব্লাড-টয়েল-টিয়ার্স-সোয়েট’ শব্দগুচ্ছের আড়ালে আরো একটা বার স্মৃত হয় এই বডিলাইন সিরিজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link