সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ফেলেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। সেই একবিংশ শতাব্দীর প্রাক্কাল থেকে এখন অবধি কি সুবিশাল এক পথ! কত চড়াই-উৎরাই, কত আনন্দ-লজ্জার সময় পার করে তবেই বাংলাদেশ ক্রিকেট এখন বর্তমান অবস্থানে। এই অবস্থানটুকুও যে খুব শক্তপোক্ত তাও নয়। সত্যি বলতে টাইগাররা ওয়ানডে খেলাটা শিখে গেছে। তবে পুরোপুরি আয়ত্ত্বে চলে আসেনি।
বাকি দুই ফরম্যাটের অবস্থা এখনও শোচনীয়। লজ্জা বাঁচানোর মত হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয়। হামাগুড়ি দিয়ে হাঁটার সময় পার করে ফেলেছে বাংলাদেশ। এখন সময় দৌড়বার। নিশ্চয়ই অচিরেই ওয়ানডের মত করেই বাকি দুই ফরম্যাট গুলোও আয়ত্ত্ব করা শুরু করবে বাংলাদেশ। তবে দীর্ঘ এই পথযাত্রায় এখন পর্যন্ত বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়া অধিনায়কদের মধ্য থেকে আলোচিত অধিনায়কদের নিয়েই আজকের আয়োজন।
- হাবিবুল বাশার সুমন
টেস্ট ক্রিকেটের তিন নম্বর পজিশনে কাকে দিয়ে ব্যাটিং করানো যায় তা নিয়ে খানিকটা দুশ্চিন্তায় রয়েছে বর্তমান বাংলাদেশ দল। তবে একটা সময় এই দায়িত্বটা দারুণভাবে সামলেছিলেন হাবিবুল বাশার সুমন। অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি তিনি নিজের ব্যাটটাও চালিয়েছেন দারুণভাবে। তাঁর অধিনায়কত্বের আমলেই বাংলাদেশে একটা বিপ্লব হয়।
সেটা বা-হাতি স্পিনারদের বিপ্লব। তিনি মোহাম্মদ রফিক, আবদুর রাজ্জাকদের ব্যবহার করতে পেরেছিলেন যথার্থভাবে। বাংলাদেশ তখনও নবাগত। হাবিবুল বাশার সে সময়ে লড়াই করে গেছেন গড়পরতা মানের খেলোয়াড়দের নিয়েও। তবে তিনি ম্যাচের পরিস্থিতি বেশ ভাল পড়তে পারতেন। দলের খেলোয়াড়দের শক্তিমত্তা সম্পর্কেও বেশ ভাল জ্ঞান ছিল তাঁর। সে অনুযায়ী পরিস্থিতি বুঝে চটজলদি পরিকল্পনা করতে পারতেন।
- মুশফিকুর রহিম
বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে একটা বড় জায়গা দখল করে থাকবেন নিশ্চয়ই মুশফিকুর রহিম। ব্যাটার হিসেবে তিনি আদায় করে নিয়েছিলেন ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ তকমা। একটা সময় তাঁর কাঁধেও এসে পড়েছিল অধিনায়কত্বের দায়িত্ব। তাঁর আমলে টেস্টে বাংলাদেশের সাফল্যও এসেছিল। তবে সেখানে ব্যাটার মুশফিকে কখনোই ছাপিয়ে যেতে পারেনি অধিনায়ক মুশফিক।
বরং তাঁকে বেশ নির্লপ্ত মনে হত মাঠে। অথচ উইকেটের পেছন থেকে ম্যাচের পরিস্থিতি আর ব্যাটারদের শরীরি ভাষা খুব সহজেই পড়তে পারার কথা। সেই সাথে সে মোতাবেক সিদ্ধান্ত নিলেই নিজের অধিনায়কত্বের রেকর্ডটা আরও বেশি সমৃদ্ধ করতে পারতেন।
তবে, রক্ষণাত্মক অধিনায়ক মুশফিকুরের সেটা হয়ত কখনোই প্রধান লক্ষ্য ছিল না। তিনি বরং একজন ব্যাটার হিসেবেই ইতিহাস লিখে রাখতে চেয়েছেন। যদিও, অধিনায়ক হিসেবে এই মুশফিকই বাংলাদেশকে প্রথমবারের মত এশিয়া কাপের ফাইনালে নিয়ে যান।
- মাশরাফি বিন মর্তুজা
ওয়ানডে ফরম্যাটে বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সফল অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। ইনজুরি ভয়াল থাবা তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারেনি কখনোই। বরং তিনি যখন ফিরলেন একটা লম্বা বিরতির পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তখন তাঁর হাতে দিয়ে দেওয়া হয় অধিনায়কের দায়িত্ব। আর সে কাজটায় তিনি ছিলেন সফল।
অধিনায়কের দায়িত্ব যতদিনে পেলেন ততদিনে বোলার মাশরাফির তেজ কমেছে। তবে নিজের বুদ্ধি আর ইচ্ছেশক্তির বলের কার্য্যকর বোলিং করতে পারতেন মাশরাফি। তাছাড়া অধিনায়ক হিসেবে পুরো দলকে একটা সুতোয় বেঁধে রাখতে সক্ষম হয়েছিল। তিনি খেলোয়াড়দের ওই বিশ্বাসটুকু জাগিয়েছিলেন যে টাইগাররাও বাকিদের থেকে কম নয়। যার ফলশ্রুতিতেই ওয়ানডেতে একটা শক্ত অবস্থান গড়ে ফেলেছে বাংলাদেশ।
২০১৫ বিশ্বকাপে তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বকাপের কোয়ার্টর ফাইনাল খেলে। দুই বছর বাদে খেলে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনাল। তবে, নিশ্চয়ই ২০১৯ বিশ্বকাপটা ভুলেই যেতে চাইবেন তিনি।
- তামিম ইকবাল খান
মাশরাফির ফেলে যাওয়া দায়িত্বভার এখন তামিম ইকবাল খানের কাঁধে। বাংলাদেশের ওপেনিংয়ের দায়িত্বটা একটা লম্বা সময় পর্যন্ত সামলেছেন তিনি। এখন তিনি দল সামলাচ্ছেন। মাশরাফি ওয়ানডে দলকে যে একটা অবস্থানের রেখে গিয়েছিলেন সে অবস্থান থেকেই শুরু করেছেন তামিম ইকবাল। ভালও করছে দল তাঁর নেতৃত্বে। তিনি খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাসের উপর ভর করেই এগিয়ে যাচ্ছেন।
তামিমের অধিনায়কত্বের বেশ প্রশংসাও শোনা যাচ্ছে। তিনি বেশ আক্রমণাত্মক অধিনায়ক। তবে মস্ত বড় সমস্যা হচ্ছে তিনি ক্রিকেটের গদবাধাঁ নিয়ম মেনে চলার চেষ্টা করেন। সে জায়গাটা থেকে সরে আসা প্রয়োজন। একজন সফলতম অধিনায়ক হতে হলে বাক্সের বাইরের চিন্তাও করতে হবে। একটু ঝুঁকি নিতেই হবে। নতুন মোড়কে তামিমকে দেখার অপেক্ষা থাকবে নিশ্চয়ই।
- সাকিব আল হাসান
বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘পোস্টার বয়’। বাংলাদেশ ক্রিকেটকে বিশ্বদরবারে সুপরিচিত করার কাজটা তিনিই করেছেন, এ নিয়ে সন্দেহ নেই। অলরাউন্ডার হিসেবে তিন ফরম্যাটেই শীর্ষে থাকতে তো আর সবাই পারে না। বাংলাদেশের অধিনায়ক হিসেবেও তাঁর প্রচেষ্টা নিশ্চয়ই তাই থাকে। তিনি তৃতীয় মেয়াদে বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়েছেন।
টেকনিক্যালি তিনি বাংলাদেশর সবচেয়ে আক্রমণাত্মক অধিনায়কদের একজন। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা তিনি ভারসাম্য বজায় রাখতে পারেন না। নিজের পারফরম্যান্স আর অধিনায়কত্বের ভারসাম্যতা বজায় রাখতে গিয়ে হোঁচট খান ‘ব্যাডবয়’ সাকিব। সেটার সামঞ্জস্য করতে পারলেই তিনি বনে যেতে পারেন বাংলাদেশের ইতিহাস নন্দিত অধিনায়ক। ইতোমধ্যে তিনি নিজের নতুন মেয়াদে পরিবর্তনের আভাস দিয়ে রেখেছেন।