ফুটবলের তীর্থস্থান ব্রাজিল থেকে উঠে এসেছিলেন রোনালদিনহো। বল পায়ে কারুকার্য আর অবিশ্বাস্য সব মূহুর্তের জন্ম দিয়ে গোটা বিশ্ববাসীকে মোহাবিষ্ট করে রেখেছেন বহু বছর। স্বপ্নীল সেই দিনগুলো একদিন ফুরিয়েছে, রোনালদিনহোও অবসর নিয়েছিলেন ফুটবল থেকে।
তবে ভক্তদের জন্য সুখবর, ৪২ বছর বয়সী এই তারকাকে আরো একবার বল পায়ে দেখা যাবে সবুজ গালিচায়। স্পেনের কিংস লিগের দল পোরসিনোস এফসির হয়ে মাঠে নামতে দেখা যাবে তাঁকে।
আরো একবার বার্সেলোনাতেই ফিরবেন তিনি। পিএসজি থেকে ক্যাম্প ন্যুতে এসেই তিনি বদলে দিয়েছিলেন কাতালান ক্লাবটির ভবিষ্যৎ। তবে এবারে আর ক্যাম্প ন্যু নয়, বার্সেলোনা শহরেরই ছোট্ট স্টেডিয়াম কোপ্রা অ্যারেনাতে মুগ্ধতা ছড়াতে নামবেন তিনি।
পোরসিনোসের প্রেসিডেন্ট ইবাই রোনালদিনহোকে দলে ভেড়ানোর ঘোষণা দিয়ে চমকে দেন গোটা বিশ্বকে। তবে খুব সম্ভবত এক ম্যাচের জন্য দলটির সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন তিনি।
তবে কিংস লিগটা তথাকথিত নব্বই মিনিটের প্রথাগত ফুটবলের মতো নয়। অনেকটা ফুটবল আর ফুটসালের সংমিশ্রণ, ফুটবলের বেসিক নিয়মগুলো ঠিক রেখে ফুটসালের মতো ছোট টার্ফের মতো মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। ফলে ফুটবলারদের বল পায়ের কারুকার্য দেখানোর সুযোগটাও বেড়ে যায় বহুলাংশে।
তবে সাধারণ ফুটবলের চাইতে খানিকটা ভিন্নতাও আছে এই কিংস লিগে। যেমন – দলের ১২ জনের প্রত্যেকেই চাইলে যেকোনো সময় মাঠে নামানো এবং সাব করানো যায়। এটা অনেকটা প্রতি ম্যাচেই ওয়াইল্ড কার্ড খেলার মতো।
কিংস লিগের এই ধারণাটা সাবেক বার্সেলোনা এবং স্পেন ডিফেন্ডার জেরার্ড পিকে এবং বিখ্যাত ইউটিউব স্ট্রিমার ইবাই লানোসের মস্তিষ্কপ্রসূত। এই মৌসুমেই ফুটবল থেকে অবসর নিয়েছেন বার্সা ডিফেন্ডার পিকে।
অবসরের পর দেরি না করেই তিনি নেমে পড়েছেন নতুন ধারার এই টুর্নামেন্ট নিয়ে। ফুটবলকে বিশ্বব্যাপী আরো জনপ্রিয় এবং ছড়িয়ে দিতেই এই টুর্নামেন্টের শুরু। এই লিগের সবগুলো ম্যাচই সরাসরি স্ট্রিমের মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকেই।
টুর্নামেন্টকে সফল করে তুলতে শুরু থেকেই সাবেক তারকা ফুটবলারদের ভেড়ানোর দিকে মনোযোগ দিয়েছেন আয়োজকরা। রোনালদিনহোকে টুর্নামেন্টে খেলতে রাজি করানো তাঁদের সেই প্রচেষ্টারই ফসল। তাছাড়া ব্যবসায়িকভাবেও তাঁদের এই কিংস লিগ দারুণ সফল।
বেশ করেকটি নামিদামি স্পন্সরশীপ পাবার পাশাপাশি প্রতিটি ম্যাচেই গড় দর্শক সংখ্যা প্রায় সাত মিলিয়ন। রোনালদিনহোর আগে সাবেক মেক্সিকান ফরোয়ার্ড চিচারিতো এবং আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার সার্জিও আগুয়েরো এই লিগে খেলার জন্য চুক্তিবদ্ধ হন।
ব্রাজিলিয়ান তারকা রোনালদিনহো ফুটবলীয় ক্যারিয়ারে ছিলেন দারুণ সফল। বার্সেলোনা এবং ব্রাজিলের হয়ে সম্ভাব্য সকল ট্রফিই জিতেছেন। সাফল্য খরায় ভুগতে থাকা বার্সাকে তিনি বদলে দিয়েছিলেন পরশপাথরের ছোঁয়ায়। ২০১৮ সালে সবধরনের ফুটবল থেকে অবসরের ঘোষণা দেন এই তারকা। যদিও ফুটবলপ্রেমীদের ধারণা জীবন নিয়ে খামখেয়ালী করায় রোনালদিনহোর সেরাটা কখনোই পায়নি ফুটবল বিশ্ব।
দক্ষতা কিংবা প্রতিভায় পেলে কিংবা ম্যারাডোনার চাইতে পিছিয়ে না থাকলেও কেবলমাত্র অবহেলার দরুণ তাঁকে থাকতে হয়েছে পেছনের সারিতে। এই আক্ষেপটা কেবল রোনালদিনহোর নয়, বরং গোটা বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের।