ইনজুরির কারণে এবারের বিপিএলের শুরু থেকে ছিলেন না পেসার শরিফুল ইসলাম। তাঁর দল ঢাকা ডমিনেটর্সও ভুগেছে মাঠে, ১১ ম্যাচে জয় মিলেছে মোটে তিনটিতে। তবে টুর্নামেন্টের শেষভাগে শরিফুল ফিরলেন, ফিরেই আগুন ঝড়ালেন মিরপুরের পিচে।
চার ওভারে মাত্র ১৮ রান দিয়ে তুলে নিয়েছেন রংপুরের টপ অর্ডারের তিন উইকেট। কিন্তু তা সত্ত্বেও হারের বৃত্ত থেকে বেরোতে পারেনি ঢাকা, বাকি বোলারদের ব্যর্থতায় তাঁর এমন আগুনে বোলিং বৃথা গেছে।
অনুর্ধব-১৯ দলের হয়ে বিশ্বকাপ জেতা শরিফুল সাদা বলের ক্রিকেটে দেশের সেরা পেসারদের একজন। ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুণ পারফর্ম করার সুবাদে ছোটদের বিশ্বকাপ জেতার মাস কয়েক পরেই ডাক পেয়ে যান জাতীয় দলে। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি, দারুণ পারফর্ম করে জানান দিয়েছেন নিজের প্রতিভার।
তবে অঘটনটা ঘটে গত ডিসেম্বরে ভারতের সাথে চট্টগ্রাম টেস্টের মিনিট দশেক আগে। মাঠে নামার ঠিক আগমূহুর্তে ক্যাচ অনুশীলন করতে গিয়ে পায়ে চোট পান। সিরিজ তো বটেই শঙ্কা ছিল বিপিএল মিস করার। কিন্তু পরবর্তীতে বিপিএল খেলার ছাড়পত্র পান তিনি।
কিন্তু টুর্নামেন্টের শুরু থেকে খেলতে পারেননি তিনি। তাঁকে ছাড়া ঢাকাও মাঠে সুবিধা করতে পারেনি তেমন। এতদিন ঢাকার একাকী সৈনিক ছিলেন অধিনায়ক নাসির, বাকিরা তাঁকে সঙ্গ দিতে পারেননি তেমন।
তবে, এদিন যেন শরিফুল বুঝলেন অধিনায়কের কষ্টটা। ইনজুরি থেকে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ফিরলেন প্রবলভাবেই। তাঁর আগুনে বোলিংয়ে ছন্নছাড়া রংপুরের ব্যাটিং। তবুও বাকিদের ব্যর্থতায় পরাজিতের দলেই থাকতে হল ঢাকাকে।
শুরুতে ব্যাট করতে নেমে রংপুরের বোলারদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ১৩০ রানের বেশি করতে পারেনি ঢাকা। তবে রান তাড়া করতে নেমে এই স্বল্প সংগ্রহকেই যেন পাহাড়সম বানিয়ে তুলেছিলেন শরিফুল।
প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই মোহাম্মদ মিঠুনের ক্যাচ বানান নাইম শেখকে। তাঁর আউট সুইংটা বুঝতেই পারেননি রংপুরের এই ওপেনার। এক ওভার বাদেই আবারো শরিফুলের আঘাত, এবারে তাঁর শিকার মেহেদী হাসান।
এরপর রংপুর রাইডার্সের কাপ্তান নুরুল হাসান সোহান যখন ৩৩ বলে ৬১ রানের ইনিংস খেলে ঢাকাকে ছিটকে দিচ্ছেন, তখনি বোলিংয়ে ফিরে আবারো শরিফুল ঝড়। শুধু তাই নয়, ম্যাচের ১৪তম সেই ওভারে কোনো রানই দেননি এই পেসার।
তাঁর দুর্দান্ত বোলিংয়ের কোনো জবাবই ছিল না মোহাম্মদ নওয়াজ, সোহানদের কাছে। এরপর নিজের শেষ ওভারেও ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন, ১৮ তম ওভারে এসে দিয়েছেন মোটে ছয় রান। ম্যাচের শেষে তাঁর বোলিং ফিগার ছিল ৪-১-১৮-৩!
মিরপুরের স্লো পিচে সাধারণত পেসারদের জন্য তেমন কিছু থাকে না। স্পিনাররাই মূলত নিয়ন্ত্রণ করেন ম্যাচ। সে কারণেই ম্যাচ হারলেও তাই শরিফুলের আপ্রাণ চেষ্টা নজর কেড়েছে সবার। আগ্রাসী মনোভাব, নিয়মিত ১৪০ কিমি ছাড়ানো বলে শরিফুল যেন বুঝাতে চাইলেন তিনি ফিরছেন পুরনো ছন্দে।
তবে এই ম্যাচ হেরেই টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেল ঢাকার। এখন দেখার বিষয় আপাতদৃষ্টিতে গুরুত্ব হারানো সামনের ম্যাচগুলোতে শরিফুল নিজের ছন্দটা ধরে রাখতে পারেন কিনা।