বরুণের রহস্যময় চক্র

আইপিএল দিয়েই তাঁর উত্থান। মাঝে হারিয়ে গিয়েছিলেন, সবাই ভেবেছিল ফুরিয়ে গিয়েছে বরুণ চক্রবর্তীর সমস্ত রহস্য। কিন্তু দুয়ারে যখন কড়া নাড়ছে বিশ্বকাপ, ফিরে আসার মঞ্চ হিসেবে তাই আরো একবার আইপিএলকেই বেছে নিলেন এই রহস্য স্পিনার। 

তাঁর ক্রিকেটে আসাটাই মস্ত এক ধাঁধা। তরুণ ক্রিকেটাররা যখন পেশাদার ক্রিকেটে পা রাখার লড়াইয়ে মরিয়া, তিনি তখন স্থাপত্যবিদ্যার দীক্ষা নিতে ব্যস্ত। পেসার কিংবা ব্যাটসম্যান থেকে রহস্য স্পিনার বনে যাবার নজির ক্রিকেটে অহরহ, কিন্তু আর্কিটেক্ট থেকে ক্রিকেটার হবার গল্পটা তাঁর বোলিংয়ের মতোই রহস্যময়। 

কিন্তু যার নিয়তি বাঁধা বাইশ গজে, তিনি কি করে দূরে থাকেন ক্রিকেট থেকে। টেপ টেনিস ক্রিকেট খেলতে খেলতেই একদিন নাম লেখান তামিলনাড়ু প্রিমিয়ার লিগে। সেখানে আলো ছড়ানোর পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি, রহস্য স্পিনার নামে খ্যাতির শুরুও তখনই।

২০১৮ মৌসুমে পাঞ্জাব কিংস ৮.৪ কোটি রুপির বড় অংকের বিনিময়ে দলে ভেড়ায় তাঁকে। কিন্তু সেবারের আসরে নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি তিনি, অভিষেক ম্যাচে একমাত্র ওভারে হজম করতে হয়েছিল ২৫ রান। দুই মৌসুম পাঞ্জাবের ডেরায় থাকলেও আলো ছড়াতে পারেননি, বেশিরভাগ সময় কাটাতে হয়েছে বেঞ্চেই। 

২০২০ আইপিএলে সুনীল নারাইনের ব্যাকাপ হিসেবেই তাঁকে দলে ভেড়ায় কলকাতা নাইট রাইডার্স। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তিনিই হয়ে উঠেন বোলিং লাইন আপের মূল অস্ত্র। সেবারে দুর্বল ব্যাটিং অর্ডার নিয়েও কলকাতা ফাইনালে উঠেছিল স্রেফ বরুণের স্পিনে ভর করে। সুনীল নারাইনের সাথে মিলে গড়ে তুলেছিলেন অপ্রতিরোধ্য এক জুটি। 

অথচ শুরুতে কুলদ্বীপ যাদবের বদলে তাঁকে সুযোগ দেয়ায় ভ্রু কুঁচকে উঠেছিল ক্রিকেট সমালোচকদের। কিন্তু তিনি আলো ছড়াতে মোটেই  সময় নেননি! বলের উপর দারুণ নিয়ন্ত্রণ আর গুগলি-ক্যারম বলে ব্যাটসম্যানদের বোকা বানিয়েছেন বারবার। 

আইপিএলে ভালো করার সুবাদে জাতীয় দলে সুযোগ পেয়ে যান দ্রুতই। কিন্তু ইনজুরি, ফর্মহীনতা মিলিয়ে টিকে থাকতে পারেননি। মাত্র ছয় টি-টোয়েন্টি খেলেই বাদ পড়েন দল থেকেই। এরপর শুরু হয় বরুণের ফেরার লড়াই।

ক্যারিয়ারে বারবার দুঃসময় পেছনে ফেলে আসা বরুণ জানতেন পরিশ্রমের বিকল্প হয় না। তিনি আঁকড়ে ধরলেন সেই পথটাই, কলকাতা নাইট রাইডার্সের একাডেমিতে শুরু করলেন একাকী ফেরার লড়াই। ২০২৩ আইপিএল তাই ছিল বরুণের নিজেকে পুনরায় জানান দেবার লড়াই আর সেই লড়াইয়ে এখনো পর্যন্ত সফল এই তারকা। এখনো পর্যন্ত আট ম্যাচে ১৩ উইকেট শিকার করে টিকে আছেন সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হবার দৌড়ে। 

সর্বশেষ ম্যাচেই বরুণের স্পিন বিষে নীল হয়েছে রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু। ঘরের মাঠে ব্যাটিং সহায়ক পিচেও তাঁর বোলিংয়ের সামনে বড্ড অসহায় লেগেছে ব্যাঙ্গালুরুর ব্যাটারদের। বিরাট কোহলিদের মিডল অর্ডার একাই গুঁড়িয়ে দিয়েছেন এই তারকা।

গ্লেন ম্যাক্সওয়েল কিংবা দীনেশ কার্তিক সবাইকে বোকা বানিয়ে সাজঘরে ফেরত পাঠিয়েছেন স্পিন ঘূর্ণিতে। শেষ পর্যন্ত চার ওভারে ২৭ রানে তিন উইকেট শিকার করে কলকাতাকে জয়ের ধারায় ফেরানোর নায়ক বরুণই। 

বিশ্বকাপের বছরে এখনো নিজেদের স্পিনারদের নিয়ে সন্দিহান ভারত। বরুণ যদি নিজের ফর্মটা ধরে রাখতে পারেন তবেই চিন্তার অবসান ঘটবে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link