বলাই বাহুল্য, সাদমান ইসলামের আজকের আউটটির কারণে এই প্রশ্নটা উঠলো।
জোমেল ওয়ারিক্যানের নীরিহ দর্শন বলে এলবিডব্লু হয়ে ফিরে এলেন সাদমান। তখন তিনি মুশফিকুর রহিমের সাথে আলাপও করেছিলেন। কিন্তু রিভিউ নেননি। পরে রিপ্লেতে দেখা গেলো, ওয়ারিক্যানের বলটা সাদা চোখে স্ট্যাম্পে আঘাত হানবে বলে মনে হলেও আসলে সেটা অনেক বাইরে বের হয়ে যাচ্ছিলো বাঁক নিয়ে। ফলে রিভিউ নিলেও বেঁচে যেতেন সাদমান।
সাদমান নিজেই ম্যাচশেষে বলেছেন, ‘রিভিউ অবশ্যই নেওয়া উচিত ছিল। তবে আমার কাছে মনে হচ্ছিল, ইন-লাইন ছিল। উইকেটে হিট করবে। এজন্য রিভিউ নেইনি। হতাশ তো বটেই। তবে এটা ম্যাচেরই অংশ, মেনে নিতে হবে।’
এরপর প্রশ্নটা উঠলো, আমাদের খেলোয়াড়রা কী তাহলে রিভিউ ব্যবহার করতে পারেন?
আমরা এ ব্যাপারে কথা বলেছিলাম প্রখ্যাত ক্রিকেট সাংবাদিক, বিডি নিউজ টোয়েন্টি ফোরের প্রধাণ ক্রীড়া সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রনির সাথে। তিনি অত্যন্ত গুরুতর দুটো পয়েন্ট উপস্থাপন করলেন। তিনি বললেন, সাদা চোখে যাই মনে হোক, ওই সময় রিভিউ নেওয়াটা জরুরী ছিলো, ‘সাদা চোখে মনে হচ্ছিলো, বল স্ট্যাম্পে আঘাত করবে। সে জন্য হয়তো সাদমান ও মুশফিক রিভিউ নেওয়ার পক্ষে ছিলেন না। কিন্তু তাদের মনে রাখা দরকার ছিলো যে, কোভিড পরিস্থিতিতে এখন টেস্টে তিনটি করে রিভিউ আছে। ফলে একটা নষ্ট হলেও খুব সমস্যা হতো না। আরেকটা ব্যাপার হলো, বাহাতি স্পিনার ছিলেন ওয়ারিক্যান। ফলে বল সামান্য বাঁক নিলেও রিভিউতে আম্পায়ারস কলের কারণে হয়তো সাদমানের আউট হওয়ার শঙ্কা ছিলো। তাতে কিন্তু রিভিউ নষ্ট হতো না।’
এটা খুব গুরুত্বপূর্ন ব্যাপার। তার মানে পরিস্থিতি ও বলের মেরিট বিবেচনা করলে সাদমান ও মুশফিকের বোঝা উচিত ছিলো যে, রিভিউ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। সে ক্ষেত্রে একবার হাত দিয়ে ইশারা করলে কোনো ক্ষতি অন্তত হতো না।
আরেকটা ব্যাপার আমাদের নজরে আনলেন রনি। তিনি বলছিলেন, সময়টা বিবেচনায় নিলে রিভিউ নেওয়া তখন অবশ্যকর্তব্য ছিলো, ‘তখন চা-বিরতির আর কয়েক মিনিট বাকী। ওই সময় রিভিউ নিলে কয়েকটা মিনিট চলে যেতো। সাদমান আউট হলেও সে সময় চা বিরতির আগে কোনো ব্যাটসম্যানকে কিন্তু উইকেটে আসতে হতো না।’
মানে, কৌশলগতভাবে সময়ের ব্যাপারেও সচেতনতা দেখা গেলো না। কোন সময় রিভিউ নিলে কিছুটা সময় ক্ষেপন করা যায়, সেটাও তাদের মাথায় ছিলো না।
কেনো ছিলো না? বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা কী তাহলে রিভিউয়ের জন্য প্রস্তুত থাকেন না?
এই গুরুতর প্রশ্নের উত্তর সন্ধান করার আগে একটু পরিসংখ্যান ঘেটে দেখা যাক। ২০২০ সালে, মানে গত বছর ক্রিকইনফো রিভিউয়ে বিভিন্ন দলের ব্যর্থতা ও সাফল্য নিয়ে একটা আয়োজন করেছিলো। শিবা জয়াবর্মনের করা সেই অ্যানালাইসিসে আমরা দেখতে পাই, সে সময় পর্যন্ত সফল রিভিউ নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বেশ ভালো অবস্থায় আছে।
বাংলাদেশ ২০১৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২০ সালের ২৮ মার্চ পর্যন্ত যত রিভিউ নিয়েছে, তার ৩০ শতাংশে সফল ছিলো। হারটা একেবারে খারাপ নয়। কারণ এই সফলতার টেবিলে বাংলাদেশের ওপরে ছিলো কেবল পাকিস্তান, ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। নিচে আরও ৫টি দল।
তাহলে বোঝা গেলো রিভিউ কল করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ খুব খারাপ দল নয়। কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়। ক্রিকইনফো ওই বিশ্লেষনেই দেখিয়েছে, সম্ভাব্য ক্ষেত্রে রিভিউ না নেওয়া দলগুলোর মধ্যে খুব এগিয়ে বাংলাদেশ। রিভিউ নেওয়া দরকার ছিলো এবং নিলে সফলতা আসতো, এমন মাত্র ৫২.৫ শতাংশ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দল রিভিউ নিতে পেরেছে। মানে প্রায়শ সঠিক সময় বাংলাদেশ রিভিউ নিতে পারে না। উল্লেখ করা যেতে পারে, এই তালিকায় শেষ থেকে দুই নম্বরে ছিলো বাংলাদেশ।
তাহলে সমস্যাটা কোথায়?
আমরা আবার আরিফুল ইসলাম রনিকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি বলেছেন, ‘আমি জানি না, বাংলাদেশ দল এ ক্ষেত্রে কেমন প্রস্তুতি নেয়। তবে অনেক দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে রিভিউ ব্যবস্থা আছে। এ ছাড়া তাদের টিম হিসেবেও রিভিউ নিয়ে অনেক পরিকল্পনা করার কথা জানা যায়।’
বাংলাদেশ কী এমন কিছু করে? বাংলাদেশের বিপিএল ছাড়া কোনো ঘরোয়া ক্রিকেটে রিভিউ থাকে না। ফলে অনুশীলনের সুযোগ নেই বললেই চলে। তাহলে টিম মিটিংয়ে এ নিয়ে কী আলাপ হয়? বা কোচরা কী এ নিয়ে খেলোয়াড়দের ব্রিফ করেন?
বাংলাদেশ দলের সাথে বহুদিন ধরে সংশ্লিষ্ট একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তি আমাদের বললেন, খেলোয়াড়দের সাথে এরকম আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয় না, ‘কখনো কখনো ইনফরমালি কথা হয়। বলা হয় যে, নন স্ট্রাইকারের সাথে আলোচনা করো। কিন্তু এ নিয়ে খেলোয়াড়দের ব্রিফ করা বা এটাকে কৌশল হিসেবে কখন নিতে হবে, তা নিয়ে টিম মিটিং বা কোনো সেশনে আলাদা করে কখনো কথা হয়েছে বলে আমি শুনিনি।’
এখন তাহলে আপনাদের বিবেচনা। সাদমান কেনো রিভিউ নিলেন না, সেটা এতক্ষনে বুঝে যাওয়ার কথা।