‘ওরিউন্ডো’। ওরিউন্ডো শব্দটি আসলে স্প্যানিশ যার অর্থ ‘অরিজিনেটেড ফ্রম’ বা ‘উদ্ভূত’। অর্থাৎ নাগরিকত্ব আইনের সুযোগে ইতালীয় বংশোদ্ভূত আর্জেন্টিনীয়রা সহজেই পুনরায় ইতালিতে ফিরে যেতে সক্ষম হন।
১৯২৪ এবং ১৯২৮-এ প্রথমে উরুগুয়ে এবং তারপর আর্জেন্টিনা দলের ইতালীয় বংশোদ্ভূত খেলোয়াড়দের ইতালির ক্লাবরা অর্থলোভ দেখিয়ে ফুসলিয়ে নিয়ে যায়।
১৯২৮ এর অলিম্পিকের পর, রেমুন্ডো ওরসি ইতালিতে জুভেন্টাসে ডাক পেলেন, আর ১৯৩০ সালের বিশ্বকাপের পর লুই মন্টি ইতালিতে ফিরে গেলেন আর্জেন্টিনা থেকে। আর এনরিকো গুয়েতা ১৯৩৩ সালে একবছর আগে এলেন রোমার হয়ে খেলতে। এঁরা তিনজনেই ইতালির ১৯৩৪ সালের বিশ্বকাপ জয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন। আর্জেন্টিনা আর উরুগুয়ে তো এই ভয়ে ইউরোপে দল পাঠানোই বন্ধ করে দিয়েছিল।
আসলে লাতিন ফুটবলের টাচ, সৌন্দর্য বা চমক কখনই অঙ্ক কষা ইউরোপীয়রা রপ্ত করতে পারেনি, কিছু ক্ষেত্রে নেদারল্যান্ডস বা যুগোস্লাভিয়া ছাড়া। লাতিনোদের কাছে যা সহজাত, শিরায় শিরায় বইছে, ইউরোপীয়রা তাদের স্বভাবসিদ্ধ অধ্যাবসায়ে রপ্ত করতে পারেনি হয়তো। একটা ইয়োহান ক্রুইফ, একটা জিনেদিন জিদান, একটা পাওলো মালদিনি, একটা রবার্তো বাজ্জিও বা একটা বাস্তিয়ান শোয়েইনস্টাইগার ফুল ফোটান বা সামগ্রিকভাবে স্পেনের ২০০৮ থেকে ২০১২ সালের ছবির মতো খেলা। কিন্তু সেটা একটা পেলে, একটা ঘিঘিয়া, একটা জিকো-সক্রেটিস, একটা ডিয়েগো ম্যারাডোনা, রোমারিও, রিভালদো, রোনালদো বা রোনালদিনহো, মেসি, নেইমারের মতো শিহরণ জাগান না।
এই জিনিসটা ইউরোপীয়দের হজম করতে অসুবিধা হয়। যদিও এখন সংখ্যায় কিছুটা এগিয়ে গিয়েছে, কিন্তু ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের রমরমার জন্য ভাড়া করা লাতিন সৈনিকদের অবদান তো ভুলে যাবার নয়।
ফুটবল মনোরঞ্জন, বিনোদনের উপাদান। তাতে লড়াই আছে, আবেগ আছে, চমক আছে, অতিমানবিক স্কিল আছে, আছে জীবনের উপাদান। সবকিছুকে কি আর অ্যাবাকাসের গুলিতে মাপা যায়? কিন্তু ইউরোপের তো অত ধৈর্য্য নেই। তাদের দুই আর দুই সূর্য উঠলেও চার আর না উঠলেও চার। তাই রেইনবো কিক করলে সদ্য ব্রাজিল থেকে আসা নেইমারকে মারতে উদ্যত হয় বিপক্ষের খেলোয়াড়রা।
রিচার্লিসন একটা বগা ব্যক্তিত্ব, শোবোটিংটাও করতে পারেন না ঠিক মতো। কিন্তু, সেদিন মাঠের মধ্যে শোবোটিং করার জন্য তাকে নিয়ে ইউরোপীয় বিশেষজ্ঞরা যেমন রে রে করে তেড়ে এসে রিচার্লিসনকে ধাঁক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়াটা সমর্থন করছেন তাতে ওই আঙুর ফল টকের কথাটাই মনে হয়।
ফুটবলই শুধু না, হকিটাকেও নিয়মের বেড়াজাল দিয়ে ঘিরে ফেলে, গতি বাড়াবার নামে স্কিলকে মেরে ফেলা হচ্ছে। আসলে সকলেই ওই গর্তে ফেলে দিতে চায় বাকিদের। এখন দর্শকরাই ঠিক করুক, শিল্প আসল না নিয়ম। রবি ঠাকুরকে সবসময় সব জায়গায় তো ডাকাও যায় না যে অচলায়তন ভেঙে ফেলতে পারবেন।