এ এক অন্য ইতালির গল্প

বহুবার হারা ম্যাচ ভোজবাজির মতো পাল্টে দেয়া ইতালি জানে কিভাবে ফিরে আসতে হয়। হয়েছেও তাই। রবার্তো মানচিনি দায়িত্ব নেবার পর পাল্টে দিয়েছেন সব। চিরায়ত কাতেনাচ্চিও ধারা ছেড়ে বেরিয়ে এসে বেছে নিয়েছেন তিনি আধুনিক প্রেসিং নির্ভর আক্রমণাত্নক ফুটবলকে। তাতেই হারতেই যেন ভুলে গেছে আজ্জুরিরা, সর্বশেষ ৩০ ম্যাচ ধরে অপরাজিত রয়েছে।

গত দশক থেকেই বিশ্ব ফুটবলে ইতালি এক হতাশার নাম।

চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা যেন হুট করে ফুটবল মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছিল। ২০০৬ সালের চ্যাম্পিয়নরা পরের দুই বিশ্বকাপেই বাদ পড়ে গ্রুপপর্ব থেকেই। ২০১৮ বিশ্বকাপে তো মূলপর্বেই জায়গা করে নিতে পারেনি ইতালি। এতে করেই অনেকেই ইতালি ফুটবলের শেষ দেখে নিয়েছিলেন অনেকে।

কিন্তু আগে বহুবার হারা ম্যাচ ভোজবাজির মতো পাল্টে দেয়া ইতালি জানে কিভাবে ফিরে আসতে হয়। হয়েছেও তাই। রবার্তো মানচিনি দায়িত্ব নেবার পর পাল্টে দিয়েছেন সব। চিরায়ত কাতেনাচ্চিও ধারা ছেড়ে বেরিয়ে এসে বেছে নিয়েছেন তিনি আধুনিক প্রেসিং নির্ভর আক্রমণাত্নক ফুটবলকে।

তাতেই হারতেই যেন ভুলে গেছে আজ্জুরিরা, সর্বশেষ ৩০ ম্যাচ ধরে অপরাজিত রয়েছে। এবারের ইউরো খেলতে এসেছে শিরোপার অন্যতম দাবিদার হিসেবে।

রক্ষণাত্নক ফুটবলের জন্য বিখ্যাত ইতালি বিশ্বফুটবলকে উপহার দিয়েছে দুনিয়াকাঁপানো সব ডিফেন্ডারকে; পাওলো মালদিনি, ফ্রাঙ্কো বারেসি, নেস্তা, ফ্যাবিও ক্যানাভারো থেকে শুরু করে হালের কিয়েল্লিনি-বনুচ্চিরা সবাই ইতালির। ফলে ইতালি সবসময় রক্ষণাত্নক কাতেনাচ্চিও কৌশলের অনুসারী ছিল।

এ কৌশলে কোনোমতে এক গোল দিয়ে বাকি সময়ে দাঁতেদাঁত চেপে রক্ষণভাগ সামলে গিয়েছিল। কিন্তু মানচিনি এসেই বুঝেছিলেন, আধুনিক ফুটবলে কেবল রক্ষণভাগে মনোযোগ দিলে হবে না; নজর দিতে হবে আক্রমণভাগেও।

রক্ষণাত্নক ফুটবল থেকে বেরিয়ে তাই পজেশন ধরে রেখে আক্রমণাত্নক ফুটবল খেলা শুরু করে তার অধীনে। তাতেই ভোজবাজির মতো বদলে গেছে সব। ২০১৮ সালে উয়েফা ন্যাশন্স লিগে পর্তুগালের কাছে হারের পর এখনো কেউ তাদেরকে হারাতে পারেনি। সর্বশেষ ১২ ম্যাচে প্রতিপক্ষের জালে ৩০ গোল করার বিপরীতে নিজের হজম করেছে কেবল একটি!

১৯৬৮ সালের পর আর ইউরো জিততে পারেনি ইতালি। করোনার ভয়াল থাবা সর্বপ্রথম আঘাত হানে ইতালিতেই, এখনো সেই ভয়ানক দুঃস্বপ্ন থেকে বেরোতে পারেনি ইতালির মানুষ। কিন্তু ফুটবল আবার এক করেছে তাদের, ইতালির পুনরুত্থান দিয়ে ইউরোর শিরোপা জিতে নতুন দিনের শুরু করতে চায় তারা।

মানচিনির দলটা সেই আস্থার প্রতিদানও দিচ্ছে দারুণভাবে, ইউরোর গ্রুপপর্বে জিতেছে তিনটি ম্যাচেই।গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবেই উঠে গেছে পরের রাউন্ডে। প্রতিপক্ষের জালে সাত গোল করার বিপরীতে তিন ম্যাচেই নিজেদের জাল অক্ষত রাখতে সক্ষম হয়েছে।

নিজেদের প্রথম ম্যাচে তুরস্ককে ৩-০ গোলে হারানোর পর ম্যানুয়েল লোকাতেল্লিময় দ্বিতীয় ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের জালেও বল জড়িয়েছে তিনবার। এমনকি প্রায় দ্বিতীয় সারির দল নামিয়ে গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে জিতেছে ওয়েলশের বিপক্ষে। এবারের ইতালি এতটাই পরিচ্ছন্ন ফুটবল খেলছে যে গ্রুপপর্বের তিন ম্যাচে হলুদ খেয়েছে মাত্র একটি তাও আবার শেষ ম্যাচে এসে।

এবারের ইউরোতে ইতালিকে হারাতে পারার মতো ফুটবল এখনো খেলতে পারেনি কোনো দলই। ১৯৬৮ ইউরোর পুনরাবৃত্তি করতে তাই মরিয়া মানচিনির শিষ্যরা। এছাড়া কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত বড় কোনো দলের মুখোমুখি হবার সম্ভাবনা নেই ইতালির।

বড় ধরনের কোনো অঘটন না ঘটলে সেমিফাইনালে ইতালি উঠবে অনেকটা হেসেখেলেই। সেমিফাইনালে উঠলে তো ঘটতে পারে যেকোনোকিছুই। তাছাড়া ইতালি ইউরোর খেলছে স্বাগতিক হিসেবে, ঘরের মাঠের সুবিধাও পাবে তারা। ইতালির সমর্থকরা তাই আগাম শিরোপা স্বপ্ন দেখতেই পারেন।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...