শ্রীলঙ্কান ঘূর্নির নয়া কাণ্ডারি!

চেয়ারটা কতোটা উত্তপ্ত, সেটা ভেবে দেখুন।

এই চেয়ারে বসেছিলেন সর্বকালের অন্যতম সেরা স্পিনার মুত্তিয়া মুরালিধরণ। টেস্টে ৮০০ ও ওয়ানডেতে ৫৩৪ উইকেট নিয়ে অবসর নিয়েছেন তিনি। এরপর ওই চেয়ারের শোভা বাড়িয়েছেন রঙ্গনা হেরাথ। মুরালিধরণের জন্য প্রথম যৌবন বেঞ্চে বসে থাকা হেরাথও নয় নয় করে ১৯ বছর আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট খেলে গেছেন। মুরালি চলে যাওয়ার পরই মূলত ৪৩৩ উইকেট নিয়ে অবসরে গেছেন।

এরপর? এরপর কে?

গত বছর দুই ধরে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে এরকম উত্তরসুরী খোজার পালা চলছে। কে হবেন নতুন জয়াবর্ধনে, কে হবেন নতুন সাঙ্গাকারা। তো জয়া-সাঙ্গার চেয়ারে কাউকে এখনও বসানো যায়নি। অনেকে বসছেন, আবার পতন হচ্ছে। কিন্তু সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিলো, স্পিনকে ভরসা বানানো এই দলটার প্রধাণ স্পিনার কে হবেন?

বেশ কয়েক জনকে নিয়ে চেষ্টা করেছে শ্রীলঙ্কা। কাজ হচ্ছিলো না। অবশেষে তিনি এলেন।

তিনি নিতান্তই সাদাসিধে একজন মানুষ। তার ক্যারিয়ারে খুব বেশী গল্প নেই। অল্প বয়সেই শূন্যস্থান পূরণের জন্য ডাক পড়েছিলো তার। আর মুহুর্তেই বুঝিয়ে দিলেন, শ্রীলঙ্কান ঘূর্নি সিংহাসন শূন্য থাকবে না। তিনি সেই জায়গাটা নিতে এসেছেন বলেই মনে হলো।

হ্যা, লাসিথ এম্বুলদেনিয়া। শ্রীলঙ্কান স্পিন বোলিংয়ের নতুন পতাকাবাহক হয়ে উঠেছেন তরুন এই বাহাতি স্পিনার। ক্যারিয়ারের শুরু থেকে উইকেটের বন্যা বইয়ে দিতে থাকা এম্বুলদেনিয়া সর্বশেষ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দেখিয়েছেন নিজের সেরা রূপ। যেনো নিজের স্থায়ীত্বের ঘোষনা করেছেন।

এম্বুলদেনিয়ার উত্থানের শুরু আর বেশীরভাগ শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটারের মতোই স্কুল ক্রিকেট থেকে। সেই পর্যায়েই ‘নতুন হেরাথ’ বলে তাকে চিনতো লোকেরা। কিন্তু বিষ্ময়করভাবে যুব দলে কখনো ডাক পাননি তিনি। মূলত ‘গ্রাউন্ড ব্রেক’ করেছেন কলম্বোর ননডেসক্রিপ্ট ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে প্রথম শ্রেনীর টুর্নামেন্ট খেলতে গিয়ে। সেখানে খুব দ্রুত নিজেকে চিনিয়ে ফেলেন ২০১৬-১৭ মৌসুমেই।

২০১৮ সালে এম্বুলদেনিয়া এমার্জিং এশিয়া কাপের দলে জায়গা করে নেন। পরের বছরই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট দলে ডাক পান। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অভিষেকও হয়ে যায় তার। অভিষেক ইনিংসে একটা মাত্র উইকেট নেন। কিন্তু পরের ইনিংসেই ৫ উইকেট শিকার করে রেকর্ডে নাম তুলে ফেলেন। শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে প্রথম বাহাতি স্পিনার হিসেবে অভিষেকে ৫ উইকেট শিকার করেন এম্বুলদেনিয়া। কিন্তু ওখানে দূর্ভাগ্যও তাড়া করে তাকে। পরের টেস্টেই আঙুল ভেঙে ফেলে ছিটকে যান ছয় সপ্তাহের জন্য।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দলে ফিরেই আবার ইনিংসে ৪ উইকেট। পরের পাকিস্তানের বিপক্ষে আরও একটা ইনিংসে ৪ উইকেট এবং হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আরেকটি ইনিংসে ৫ উইকেট। মানে এম্বুলদেনিয়ার জয়যাত্রা চলতেই থাকে।

এর চূড়ান্ত রূপটা দেখা গেলো গলে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে। শ্রীলঙ্কা ম্যাচ হেরে গেলো। কিন্তু এম্বুলদেনিয়া তার গল্পটা লিখে রাখলেন।

প্রথম ইনিংসে ৭টি উইকেট তুলে নিলেন। পরের ইনিংসে নিলেন আরও ৩ উইকেট। মানে ১০ উইকেট ম্যাচে। এখন পর্যন্ত ৯ টেস্টে এম্বুলদেনিয়ার উইকেট সংখ্যা ৪৫। এর মধ্যে ৩ বার ইনিংসে ৫ বা ততোধিক উইকেট নিয়েছেন। মানে, শুরু দিয়ে অন্তত হেরাথের অভাবটা পূরণ করে দিচ্ছেন বলেই মনে হচ্ছে।

এম্বুলদেনিয়ার আইডলও রঙ্গনা হেরাথ। ইএসপিএন ক্রিকইনফোকে বলেছেন, ‘তিনি (হেরাথ) অসাধারণ একজন বাহাতি স্পিনার তো ছিলেনই। এ ছাড়া মানুষ হিসেবেও অসাধারণ। ওনার জীবনের গল্পটাও অসাধারণ। ওনাকে দীর্ঘকাল বসে থাকতে হয়েছে, অনেক উপেক্ষা সহ্য করেছেন। তারপরও হাল ছাড়েননি।’

আর তার আইডল হেরাথ নিজে বলেছেন, ‘লাসিথের একজন গ্রেট বাহাতি স্পিনার হয়ে ওঠার সব বৈশিষ্ট্য আছে। এমনকি আমার যেটা ছিলো না, সেই উচ্চতাটাও আছে ওর। ওর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো, ও খুব দ্রুত শিখতে পারে।’

হেরাথের বিদায়ের পর শ্রীলঙ্কা মালিন্দা পুষ্পাকুমারা, লক্ষন সান্দাকান, দিলরুয়ান পেরেরাকে দিয়ে চেষ্টা করেছে। সমাধাণ আসেনি। অবশেষে সেই জায়গায় তারা কাউকে খুজে পেয়েছে।

এম্বুলদেনিয়ার স্বপ্ন সব টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে কমপক্ষে একবার করে ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়া। সেই স্বপ্ন খুব দূরের ব্যাপার বলে তো মনে হচ্ছে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link