বলের নিয়ন্ত্রণে রিশাদের বিকাশ

বল হাতে অবশ্য তিনি অবদান রাখছেন নিয়ম করেই। জাতীয় দলে থিতু হওয়ার এটাই সম্ভবত সূবর্ণ সুযোগ তার।

টানা চার ম্যাচে সুযোগ পেলেন রিশাদ হোসেন। বেশ বিরল এক ঘটনাই বরং। দীর্ঘকাল ধরে দলের সাথে ঘুরে বেড়িয়েছেন দেশ-বিদেশ। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে দুই টি-টোয়েন্টিতেই একাদশে ঠাই হয়েছে তার। টানা পেয়ে যাওয়া সুযোগের সদ্ব্যবহারই করেছেন রিশাদ হোসেন।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের শেষ দুই ম্যাচে দলের সঙ্গী হয়েছিলেন তিনি। সেই দুই ম্যাচে অবশ্য উইকেট পাওয়া হয়নি তার। তবুও নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ঐতিহাসিক ওয়ানডে জয়ের ম্যাচে তিনি বল হাতে অবদান রাখার চেষ্টাটা করেছেন।

বল হাতে অবশ্য তিনি অবদান রাখছেন নিয়ম করেই। জাতীয় দলে থিতু হওয়ার এটাই সম্ভবত সূবর্ণ সুযোগ তার। সেই ম্যাচে তিন ওভার হাত ঘুরিয়ে রান দিয়েছিলেন ৪ রান। এরপর প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচেও সেই একই ধারায় বল করেছেন রিশাদ। সেখানেও রান খরচে কৃপণতা দেখিয়েছেন। বাগিয়েছেন একটি উইকেটও।

সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে রিশাদ যেন আবার দাবি জানালেন তার উপর ভরসা রাখার। তিনি প্রমাণ করলেন একটানা সুযোগ ঠিক কেন দরকার তার। মূলত নিজের বোলিংয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ আরও খানিকটা তুখোড় হয়েছে রিশাদের। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে দেওয়া জুসি ফুলটস বলের সংখ্যা একেবারে শূন্যের কাছাকাছিতে নামিয়ে নিয়ে আসতে পেরেছেন তিনি।

সবচেয়ে নজর কাড়া বিষয় তার বোলিং লেন্থ। তিনি ব্যাটারকে কোন রকম রুম তৈরি করবার সুযোগ দেন না। ফুলার লেন্থ আর শর্টার লেন্থের মাঝামাঝি জায়গায় ক্রমাগত বল ফেলেছেন রিশাদ। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে বৃষ্টির বাগড়া আসার আগে তিন ওভার বল করেছেন রিশাদ। একটা মুহূর্তের জন্যে তিনি কিউই ব্যাটারদের স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে দেননি।

রিশাদ প্রথম যখন বল হাতে এলেন তখন টিম সাইফার্ট বেশ আগ্রাসী ভঙ্গিমায় রান তুলে যাচ্ছেন। প্রথম পাওয়ার প্লে-তে নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৫৪ রানে। এরপর সপ্তম ওভারে বল হাতে এসে ভীষণ চাপের সৃষ্টি করলেন রিশাদ। আঁটসাঁট লাইন-লেন্থের সাথে, খানিকটা অতিরিক্ত বাউন্স আদায় করে নিয়েছেন তিনি। সাইফার্ট, ড্যারিল মিশেলদের রানের গতি টেনে ধরলেন, খরচ মোটে তিন রান।

সেখান থেকেই মূলত নিউজিল্যান্ডের রানের চাকা স্থবির হতে শুরু করে। সপ্তম থেকে এগারোতম ওভার পর্যন্ত, পরবর্তী এই পাঁচ ওভারে ব্ল্যাকক্যাপসরা নিতে সক্ষম হন কেবল ১৮ রান। এই সময়ে তিন ওভারই করেছেন রিশাদ। সপ্তম ওভারে রিশাদের করা চাপের সুযোগটা লুফে নেন তানজিম হাসান সাকিব। তিনি টিম সাইফার্টকে ফেরান প্যাভিলিয়নে।

রিশাদের ক্রমাগত তৈরি করা চাপের ব্যূহতে ঘুরপাক খেতে থাকে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটাররা। সেখান থেকেই বরং ম্যাচ ফিরতে শুরু করে বাংলাদেশ। উইকেটশূন্য থেকেছেন রিশাদ। ম্যাচ শেষ অবধি পরিত্যাক্ত হয়েছে বৃষ্টির বাঁধায়। তবুও রিশাদ নিজের কাজটি করে গেছেন যতটুকু সময় পেয়েছেন।

রিশাদ খুব একটা বল টার্ন করাতে পারেন বিষয়টি তেমন নয়। তাছাড়া গতানুগতিক লেগ স্পিনারদের মত খুব যে বেশি বৈচিত্র্য রয়েছে তার তাও নয়। তবে তিনি স্রেফ নিজের উচ্চতা কাজে লাগিয়ে খানিকটা অতিরিক্ত বাউন্স আদায় করছেন। উপমহাদেশের বাইরে তা ভীষণ কার্য্যকর। তাছাড়া বলের উপর নিয়ন্ত্রণও বাড়িয়েছেন রিশাদ। এখন স্রেফ তার প্রয়োজন নিজের অস্ত্রের ঝুলিটা সমৃদ্ধ করা। আর টানা সুযোগের দাবিও তিনি জানাতেই পারেন।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...