নতুন রুপে রিসাদের থিতু হওয়ার লড়াই

যখনই লেগ স্পিনার নিয়ে আলোচনার শুরু হয়, তখনই বাংলাদেশের ক্রিকেটে শুরু হয় এক আক্ষেপের গান। দেশে যে বিশ্বমানের কোন লেগ স্পিনার নেই। বহু সন্ধান করেও যেন মানসম্মত লেগ স্পিনার খুঁজে পাওয়া দায়। রিসাদ হোসেন যেন এক চিলতে দুঃখ ভোলানোর গান।

দলের সাথে ঘুরে বেড়ানোই যেন তার মূল কাজ। দলে ডাক আসে, সাইডবেঞ্চে বসে কেটে যায় পুরোটা সময়। রিসাদও যেন খানিকটা আন্দাজ করেছেন, স্রেফ লেগ স্পিনার হয়ে টিকে থাকা যাবে না। তাতে অবশ্য দোষ খানিকটা রিসাদেরও।

তিনি নিজেকে সেভাবে প্রমাণ করতে পারেননি। তিনি হয়ে উঠতেন পারেননি রবি বিষ্ণয়দের মত সম্ভাবনাময়। সেক্ষেত্রে আবার দায় বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটেরও। রিসাদদের যে সেখানেও দিন পার করতে হয় ডাগআউটে বসে। তাদেরকে একাদশে সুযোগ দেওয়া হয় না। অবশ্য সেই সুযোগ দেওয়ার মত ভরসাও তো জোগাতে পারেননি রিসাদরা।

তাইতো এবার রিসাদ যেন নিজেকে একটু অন্যভাবে মেলে ধরতে চাইছেন। লেগ স্পিনার রিসাদ থেকে, ব্যাটিং অলরাউন্ডার রিসাদ হিসেবে আবির্ভূত হতে চাইছেন। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে সেই ইচ্ছের প্রতিফলন ঘটালেন রিসাদ। ব্যাট হাতে দেখালেন সামর্থ্যের ঝলক।

৫৪ বলে ৮৭ রানের এক ঝকঝকে ইনিংস খেলেছেন তিনি নিউজিল্যান্ড একাদশের বিপক্ষে। প্রায় ১৬১ স্ট্রাইকরেটের এক মারকাটারি ইনিংস। ঠিক যেমনটি প্রত্যাশিত একজন লোয়ার মিডেল অর্ডারের ব্যাটারের কাছ থেকে।

এই যাত্রায় তিনি ১১টি বাউন্ডারি মেরেছেন। হাওয়ায় ভাসিয়ে বল মাঠ ছাড়া করেছেন ৪ বার। তাতে করেই শেষ অবধি ৩৩৪ রানের সংগ্রহ পেয়েছে বাংলাদেশ দল। প্রস্তুতি ম্যাচকে খুব বেশি আমলে নেওয়ার সুযোগ অবশ্য নেই। তবুও অচেনা কন্ডিশনে এমন ইনিংস খানিকটা প্রশংসার দাবি নিশ্চিতরুপেই রাখে।

তাছাড়া টিম ম্যানেজমেন্টকেও ভাবতে বাধ্য করবার জন্যে যথেষ্ট। নিউজিল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেটের সেরা খেলোয়াড়দেরই নিয়ে গড়া একাদশের বিপক্ষে ২৭ রানের জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। তাতে অবশ্য বল হাতেও অবদান রাখার চেষ্টা করেছেন রিসাদ। নিয়েছেন তিন উইকেট। তবে রান খরচায় কৃপণতা দেখাতে অবশ্য পারেননি।

৭.৩ ওভার বল করে ৫২ রান খরচা করেছেন তিনি। ৭.১ ইকোনমি রেটে তিনি রান দিয়েছেন। অবশ্য লেগ স্পিনাররা একটু রান প্রসবাই হয়ে থাকেন। তাদের মূল কাজই হচ্ছে উইকেট শিকার করা। তবে রিসাদের নেওয়া দু’টি উইকেটই ছিল টেল এন্ডারদের। যখন আসলে ম্যাচে ফেরার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীন নিউজিল্যান্ড একাদশের।

ঠিক সেকারণেই বোধহয় রিসাদ নতুন রুপে নিজেকে প্রমাণ করতে চাইছেন। সেটা করলেও নেহায়েত মন্দ হয় না। টুকটাক বোলিং তিনি করলেন। বাংলাদেশের বোলিং অস্ত্রাগারে বৈচিত্র এলো। সেই সাথে দ্রুত রান তোলার কাজটাও নিয়ম করে করতে পারবেন রিসাদ। অন্তত তাতে করে একাদশে নিয়মিত হতে পারবেন ডান-হাতি এই ক্রিকেটার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link