ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) ঠিক কত লোক দেখে, তা আমার জানা নেই। তবে দুটো ছোট্ট তথ্য দিতে পারি, ‘র্যাবিটহোলবিডি স্পোর্টস’ নামক ইউটিউব চ্যানেলটায় হায়দ্রাবাদ-রাজস্থান ম্যাচ শেষেও ৫৪,০৮৯ জন দর্শক ছিলেন, এবং চ্যানেলটায় ভারতের ১৫০ কোটি জনগণের বৈধ প্রবেশাধিকার নেই।
আধার কার্ড, যাকে আমরা ‘এনআইডি’ বলে চিনি, খুব সম্ভবত ভারত সরকার তা এখনো দেয়নি রিয়ান পরাগকে, ১৮-বছর পার করলেন যে মাসকতক আগেই। গা থেকে দস্যিপনার খোলসটুকুও খুলে পড়েনি যে বয়সটায়, সে বয়সেই তাঁর ওপর চেপেছে রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে আইপিএল খেলবার বোঝা। বোঝা বলবার কারণটা নিশ্চয়ই বুঝে নিয়েছেন, খেলাটার সঙ্গে যখন ভারতের যোগ আছে, তখন লড়াইটা যে ব্যাট-বলের সঙ্গে ওই অগুনতি দর্শকেরও।
রিয়ান পরাগের গল্পের শুরুটা হচ্ছে ঠিক এখান থেকে।
রাজস্থান পরাগকে সুযোগ দিয়েছিল নাম কামাবার, কিন্তু সুযোগটা তিনি নিতে পারেননি প্রথমে। আস্থা হারিয়ে দল তাকে বসিয়ে দিয়েছিল বেঞ্চে, তবে বিকল্প না পেয়ে ম্যানেজমেন্ট আবার ফিরিয়েছিল তাকে। দল প্রথমে ফিল্ডিং করেছিল বলে দুবাইর মাঠে হায়দ্রাবাদের বিপক্ষে তো আগেই নেমেছিলেন; তবে ব্যাট করতে যতক্ষণে নেমেছিলেন ততক্ষণে দলের প্রথম চার ব্যাটসম্যানই সাজঘরে ফেরত এসেছেন, এবং ১৫৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৫৫ বল খেলে তারা মাত্র ৬৩ রান তুলেছিলেন। ওহ, আউট হওয়া চার ব্যাটসম্যানের তিনজন; স্টোকস, স্মিথ, বাটলারই এই রাজস্থানের মূল ভরসা ছিলেন।
‘আমি শুরু থেকেই চালিয়ে খেলতে পারি না’ – এর আগে যে চার ম্যাচ খেলেছিলেন, তাতে তা বুঝিয়ে দিয়েছেন আইপিএলের দর্শকদের। আজকের ম্যাচেও শুরুটা করেছিলেন ধীরে-সুস্থে, প্রথম ১৪ বলে করেছিলেন মাত্র ১২ রান। রশিদ খানের ওভারগুলো কাটিয়ে দেবার দরকার ছিল, সঞ্জু স্যামসন আউট হবার পরে তেওয়াটিয়ার সঙ্গে জুটি গড়বার দরকার ছিল, সব মেনে নিয়েও তার ব্যাটে জয়ের সঙ্গে রাজস্থানের ব্যবধানটা কেবলই বাড়ছিল।
ম্যাচের শেষ পাঁচ ওভার বাকি থাকতে রাজস্থানের দরকার ছিল ৬৫ রান, রশিদ খানের ওভার বাকি ছিল আরও একটি, শুরুতে আগুনে বোলিং করেছিলেন খলিল আহমেদও এবং তেওয়াটিয়া কিংবা পরাগ কেউই এমন কোনো মার মারেননি, যা দেখে ভরসা পাওয়া যায়।
এমন করেই কেটেছিল গল্পের প্রথম অধ্যায়।
প্রিয়ম গার্গকে সবাই ভালো ফিল্ডার বলেই জানেন, আগের ম্যাচেও এক স্ট্যাম্প সই করে দুর্দান্ত এক রান-আউট করেছেন। কিন্তু ক্রিকেটকে যারা গ্রেট লেভেলার মানেন, তাদেরকে কিছুটা সান্ত্বনা দিয়ে এদিন খুব সহজ এক ক্যাচ মিস করলেন। এই ক্যাচ মিসেই যেন টনক নড়লো পরাগের, সে ওভারেরই শেষ বলে খলিলকে ডিপ-মিড উইকেটের ওপর দিয়ে ছয় মেরে জানান দিলেন, অনুশীলনে এই ব্যাটিংটা দেখিয়েই রাজস্থান ম্যানেজমেন্টের মন কেড়েছিলেন।
সেই ছয়ের পরেও রাজস্থানের ২৪ বলে ৫৪ রান দরকার ছিল। সন্দীপ শর্মার পরের ওভারের প্রথম বলেই ছয় মেরে তেওয়াটিয়া ছয় মেরে ব্যবধান কমিয়েছিলেন, তবে নজরটা সেই পরাগই টেনে নিয়েছিলেন । চতুর্থ বলটা সন্দীপ শর্ট অ্যান্ড ওয়াইড করেছিলেন, শুধু পরাগই নন, বরং পৃথিবীর যেকোনো ব্যাটসম্যানই সেই বলে চার-ছয় হাঁকাবেন।
নজর কাড়বার কথাটা আসছে পরের বলের জন্যে, নিজের ভুল শুধরে সন্দীপ সেবারে ইয়র্কার লেংথেই বলটা করেছিলেন। কিন্তু বয়সে প্রায় দেড়গুণ বড় মানুষটাকে বুদ্ধির খেলায় টেক্কা দিয়ে পরাগ স্কুপ খেলেছিলেন। প্রায় মিডল স্ট্যাম্পের ওপর থেকে মারা সেই স্কুপ যারা দেখেছেন, ওই শট বর্ণনের অক্ষমতার কারণ তারা মাত্রই বুঝবেন।
রশিদ খানকে মেরে-টেরে একাকার করে রাহুল তেওয়াতিয়া পরাগের জন্যে মঞ্চটা তৈরিই করে দিয়েছিলেন। রাজস্থানের জয়ের জন্যে তখন সমীকরণ দাঁড়িয়েছিল, ২ বলে ২ রান। এক্সট্রা কাভারের ওপর দিয়ে মারা বিশাল ছক্কায় এমন সমীকরণকে তুড়িতে উড়িয়ে জয়ের বন্দরে রাজস্থানকে পরাগই ভিড়িয়েছিলেন।
তবে পরাগের জন্যে সমীকরণের ব্যাপকতা তো আরও ছিল, এবং ৫০০ শব্দের এই লেখা সে কারণেই লিখতে হলো।