রূপকথা নয়, মহাকাব্য

তার জীবনটাই গল্পে ভরা।

উঠে আসাটা একটা গল্প, প্রথম জীবনের ব্যর্থতা একটা গল্প, আবার ফিরে এসে রান মেশিন হয়ে যাওয়াটা একটা গল্প। তবে সব গল্পকে অতিক্রম করে ফেলেছিলেন প্রায়। চলে গিয়েছিলেন আইসিইউতে। সেখান থেকে ফিরে পরদিনই বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল খেলতে নেমে দলের গতি ঠিক করে দেওয়া সেরা ইনিংসটা খেললেন।

কী, রূপকথা মনে হচ্ছে?

না, রূপকথাটা জমেনি। কারণ শেষ পর্যন্ত জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারেননি। তার আগেই অবশ্য এক মহাকাব্যের অংশ হয়ে গেছেন। এই মহাকাব্য রচয়িতা মোহাম্মদ রিজওয়ান।

দ্বিতীয় সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৫ উইকেটের হারে সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছে পাকিস্তান।

ম্যাচের আগেও শোনা যাচ্ছিলো অসুস্থতার কারণে একাদশে অনিশ্চিত শোয়েব মালিক ও মোহাম্মদ রিজওয়ান। ফর্মে থাকা দুই তারকা দলে না থাকা মানে সেমিফাইনালের মঞ্চে পাকিস্তানের জন্য অনেক বড় ক্ষতি। জ্বর-সর্দির কারণেই এই দু’জন সেমিফাইনালে যে অনিশ্চিত এমনটাই শোনা যাচ্ছিলো।

তবে ম্যাচের আগ মূহুর্তে জানা গেলো দু’জনই খেলবেন। দু’জনেই ম্যাচ খেলার জন্য ফিট আছেন।এরপর টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৪ উইকেটে ১৭৬ রান সংগ্রহ করে পাকিস্তান। দলের হয়ে সর্বোচ্চ রান করেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। ৫২ বলে ৬৭ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলেন তিনি। তবে ম্যাচ শেষে জানা গেলো ভিন্ন এক খবর।

ম্যাচ পরবর্তী প্রেস কনফারেন্সে অধিনায়ক বাবর আজমের সাথে ছিলেন পাকিস্তান দলের ফিজিও নাজিবউল্লাহ সুমরো। তিনি জানান, ম্যাচের আগে ২ দিন আইসিউতে ছিলেন রিজওয়ান! ঠান্ডা জ্বর থেকে বুকে ব্যাথার কারণেই কিনা তাকে জরুরি আইসিউতে ভর্তি করা হয়।

নাজিব জানান, ‘৯ তারিখ রিজওয়ানের বুকে ইনফেকশন হয়। এরপর তাঁকে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। এবং সে ২ রাত আইসিইউতে কাটিয়েছে। তবে সে দ্রুতই সেরে ওঠে এবং ম্যাচের আগে ফিট হয়ে গিয়েছিলো। দেশের হয়ে খেলতে সে উদগ্রীব ছিল। আজ সে কেমন পারফরম করেছে সেটা আমরা সবাই দেখেছি।’

অবশ্য ম্যাচের আগে এমন খবর জানতেন না কেউই। গণমাধ্যমেও জানানো হয়নি এমন কিছুই। এ ব্যাপারে নাজিবউল্লাহ জানান পুরো দলের পক্ষ থেকেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিলো।

আইসিউ থেকে ২২ গজে ফিরেই গড়েছেন অনন্য এক রেকর্ড। প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বছরে এক হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করার রেকর্ড গড়েন তিনি। এছাড়াও বর্তমানে তিনি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এক আসরে উইকেটরক্ষক ব্যাটার হিসেবে সর্বোচ্চ রানের মালিক।

জশ হ্যাজেলউড, প্যাট কামিন্সের বিপক্ষে যেভাবে ব্যাট করেছেন মনেই হয়নি তিনি দু’দিন আইসিউতে ছিলেন! ব্যাট হাতে রিজওয়ানের শারীরিক ভাষায় দেখা যায়নি অসুস্থতার কোনো ছাপ। বরং দেখা গেছে রানের ক্ষুদা। হাসপাতাল থেকে ২২ গজে ফিরেই নাম লিখিয়েছেন রেকর্ডে।

আইসিউ থেকে ফিরে সেমিফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ লড়াইয়ে নিজের সেরাটা দিয়ে জয়ে অবদান রাখতে চেয়েছিলেন রিজওয়ান। তবে সেই স্বপ্নটা পূরণ হয়নি। জয়ের কাছাকাছি গেলেও ম্যাথু ওয়েড ও মার্কাস স্টোয়েনিসের এক জুটিই ফাইনালে যাওয়ার স্বপ্ন থেকে ছিটকে দেয় পাকিস্তানকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link