কোভিড ১৯ পরবর্তী সময়ে ক্রীড়াঙ্গণে নতুন একটি ‘টার্ম’ বেশ সুপরিচিত হয়েছে। জৈব সুরক্ষা বলয় বা বায়োবাবল। খেলা চলাকালীন সময়ের খেলোয়াড়দের থাকতে হয় নির্দিষ্ট গণ্ডির ভেতর। চাইলেই ঘুরে আসা সম্ভব নয় বাইরে কোথা থেকে। হোটেলের লবিতে আড্ডায় থাকে বিধিনিষেধ। দেখা করা যায় না পরিবারের কারো সাথে। এমন এক বন্দি দশায় বহুকাল থাকতে হয়ে স্বভাবতই একধরণের মানসিক অবসাদ, ক্লান্তির সৃষ্টি হয়। যাতে খেলোয়াড়দের স্বাভাবিক পারফর্মেন্সের ঘাটতি স্পষ্ট পরিলক্ষিত হয়। যে কোন খেলায় মানসিক স্বত:স্ফূর্ততা খুব বেশি জরুরি।
এমন মানসিক অবসাদের ফলাফল হাতেনাতে পেয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট দল। চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম দুই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে হারতে হয়েছে। যার ফলস্বরুপ প্রথম পর্ব থেকেই বাদ হয়ে যেতে হয়েছে ভারতের মত এক ক্রিকেটীয় পরাশক্তি দলকে। যা চরম হতাশার। আইপিএল কে ঘিরে ভারতীয় খেলোয়াড়দের থাকতে হয়েছে জৈব সুরক্ষা বলয়ে একটা লম্বা সময় জুড়ে। এতেই যেন হানা দিয়েছে মানসিক অবসাদ।
আসন্ন নিউজিল্যান্ড সিরিজে তাই ভারতীয় টেস্ট দলে আসতে পারে বেশকিছু পরিবর্তন। খেলোয়াড়দের মানসিক স্বাস্থ্য বিবেচনায় তাঁদেরকে বিশ্রাম দেওয়ার অতীব গুরুত্বপূর্ণ। একটু দেরীতে হলেও এ বিষয়টা বুঝতে পেরেছে ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই)। দুই একদিনের মধ্যে আসতে পারে নিউজিল্যান্ড সিরিজের জন্যে ভারতীয় টেস্ট দলের ঘোষণা। সেখানে পরিবর্তন প্রত্যাশিত।
মূল পরিবর্তন দেখা যেতে পারে বোলিং আক্রমণে। বিশেষত জাসপ্রিত বুমরা, মোহাম্মদ সামি এবং শারদুল ঠাকুরের মতো পেস বোলারদের বিশ্রাম মোটামুটি সুনিশ্চিত। পরবর্তীতে এদের সার্ভিস খুব বেশি প্রয়োজন হবে ভারত দলের। তাই বিসিসিআই আর কোন আত্মঘাতী সিধান্তে উপনীত হবেন না তা বলাই যায়।
অন্যদিকে একটানা বহুদিন যাবৎ দলের সাথে জৈব-সুরক্ষা বলয়ে রয়েছেন উইকেট রক্ষক ব্যাটার ঋষভ পান্ত। তাই তাঁকেও হয়ত দেখা যাবে না টেস্ট দলে। টেস্ট দলের নিয়মিত অধিনায়ক বিরাট কোহলিও থাকবেন প্রথম টেস্টে বিশ্রাম। এ বিষয়ে আগে থেকেই নিশ্চিত। তিনি দ্বিতীয় টেস্টে আবার দায়িত্ব নেবেন দলের।
তাই এখন নির্বাচকদের ভাবতে হচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন টেস্ট অধিনায়ক নিয়ে। ইতোমধ্যেই টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক পদে বিরাটের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন রোহিত শর্মা। এখন টেস্ট অধিনায়ক নির্বাচনে নির্বাচকদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে দুই জন রোহিত শর্মা ও আজিঙ্কা রাহানে। তাই নতুন কোচ রাহুল দ্রাবিড়কে দল গঠনের পাশাপাশি দলনেতা নির্বাচন নিয়ে বেশ সময় অতিবাহিত করতে হবে।
যেহেতু বিরাট পরবর্তী ম্যাচেই আবার ফিরবেন অধিনায়কত্বের দায়িত্বে সেহেতু নির্বাচকরা রাহানের উপরই প্রথম টেস্টের অধিনায়কের দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চাইবেন। কেননা রাহানের রয়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই ফরম্যাটে অধিনায়কত্বের অভিজ্ঞতা।
অন্যদিকে দলের প্রধান উইকেট রক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে ঋদ্ধিমান সাহাকে দেখা গেলেও দ্বিতীয় উইকেট রক্ষকের জায়গায় আসতে পারেন নতুন কেউ। সেক্ষেত্রে কনা শ্রিকার ভরত হতে পারেন নির্বাচকদের প্রথম বিকল্প। তবে পুরো দল মাত্র কেবল দুই দিনের ছুটি পেয়েছে জৈব-সুরক্ষা বলয় থেকে।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে ফেরা এবং ভারতীয় ঘরোয়া সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফিতে অংশ নেওয়া খেলোয়াড়দেরকে ছুটি দিয়েছেন। এটা পুরোপুরি নির্ভর করে একজন খেলোয়াড় ঠিক কখন বর্তমানে অবস্থানরত বায়োবাবল থেকে বের হচ্ছেন। হতে পারে সেই বিরতি দুই কিংবা তিন দিনের।
তারপর পুরো দলকে যোগ দিতে হবে দলের ক্যাম্পে। সেখানে তিন দিনের রুম কোয়ারেন্টাইন শেষ খেলোয়াড়দেরকে আবার যুক্ত হতে হবে নতুন সুরক্ষা বলয়ে। সেখান থেকে আবার দল চলে যেতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকার উদ্দেশ্যে পূর্ণ সিরিজ খেলতে। তাহলে শেষমেশ আবার মাস তিনেকের একটি বড় জৈব সুরক্ষা বলয়ে আটকে যাচ্ছেন ভারতীয় খেলোয়াড়েরা।
এই নতুন নিয়মের মাঝে খেলোয়াড়েরা ঠিক কতটা নিজেদেরকে মেলে ধরতে পারবে সে বিষয়ে রয়েছে ব্যাপক সন্দেহ। দ্রুত এই জৈব-সুরক্ষা বলয়ের বিষয়ে খানিক স্থিতিশীলতা আসা আবশ্যক। নতুবা শেষ হয়ে যেতে পারে অনেক খেলোয়াড়দের সম্ভাবনাময়ী ক্যারিয়ার।