রোহিত উজ্জ্বল, সমসাময়িকরা ম্রিয়মাণ

পরিসখ্যান বলে একদম সোনায় মোড়ানো ক্যারিয়ার রোহিত শর্মার। বর্তমান ভারত দলটার নেতৃত্বের ব্যাটনটাও তাঁর হাতে। তবে ভারতের হয়ে তাঁর ক্রিকেট ক্যারিয়ারের পথচলাটা কি সবসময়ই মসৃণ ছিল? ২০০৭ সালেই ভারতের নীল জার্সিতে অভিষেক হয়েছিল তাঁর। কিন্তু সেই জার্সিতে অটোমেটিক চয়েস হয়ে উঠলেন তারও ছয় বছর পর ২০১৩ সালে।

মাঝখানে ২০১১ সালে বিশ্বকাপ দলে জায়গায় পেলেন না। নিজের আগের ব্যাটিং অর্ডারে এক সময় ক্রমাগতই ব্যর্থ হচ্ছিলেন। কিন্তু হঠাতই ওপেনিংয়ে এসে ক্যারিয়ারের মোড়টাই পাল্টে গেল রোহিত শর্মার। ক্রমেই হয়ে উঠলেন ভারতের অন্যতম সেরা ব্যাটার। 

তবে, দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ব্যর্থতার ডুব সাগরে একসময় ভেসে গিয়েছিলেন রোহিত। কিন্তু পরক্ষণেই আবারো মাথা তুলে দাঁড়িয়েছেন। সেখান থেকেই গ্রেটনেসের শুরু তাঁর। কিন্তু এমন অনেক ক্রিকেটারই রয়েছেন যারা ঐ ব্যর্থতাকেই স্বাভাবিক নিয়তি ভেবে থেমে গিয়েছেন। বাইশ গজের পথচলাতে ইতি টেনেছেন বেশ আগেই। রোহিত শর্মার চেয়ে বয়সে ছোট অথচ ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন এমন কিছু ক্রিকেটারকে নিয়ে খেলা ৭১ এর আজকের আয়োজন। 

  • অভিমন্যু মিথুন (ভারত)

ভারতের হয়ে খেলেছিলেন চার টেস্ট ও পাঁচ ওয়ানডে। ব্যাঙ্গালুরু, মুম্বাই, হায়দ্রাবাদ- তিন দলের হয়ে ভিন্ন ভিন্ন মৌসুমে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ খেলেছেন৷ তবে তেমন সফল হতে পারেননি তিনি।

তবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তিন শতাধিক উইকেট নেওয়ার কীর্তি আছে তাঁর। তারপরও ক্রিকেটটাকে বেশিদিন চালিয়ে যাননি অভিমন্যু মিথুন। মাত্র ৩২ বছর বয়সেই ক্রিকেট থেকে অবসর নেন তিনি। অবসরের পর সম্প্রতি ইন্ডিয়া লিজেন্ডসের হয়ে রোড সেফটি ওয়ার্ল্ড সিরিজ খেলেছেন মিথুন।

  • সুদীপ তিয়াগি (ভারত)

 

চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে ২০০৯ আইপিএলে সুযোগ পাওয়া সুদীপ তিয়াগি শুরুটা ভালই করেছিলেন। ভারতের হয়ে চারটি ওয়ানডে ম্যাচ খেলার সুযোগও পেয়েছিলেন। কিন্তু সেই শুরুটা আর ধরে রাখতে পারেননি তিনি।

২০১৪ সালেই খেলে ফেলেন ক্যারিয়ারের শেষ লিস্ট এ ম্যাচ। এরপর থেকেই ক্রিকেটে অনিয়মিত হয়ে পড়েন সুদীপ। দিনের পর দিন ক্রিকেট ক্যারিয়ারে তেমন সুবিধা না করতে পারায় ২০২০ সালে ক্রিকেট থেকে অবসর নেন সুদীপ। 

  • আবুল হাসান রাজু (বাংলাদেশ)

বয়সটা কেবল ৩০। কিন্তু এরই মাঝেই ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শেষ দেখে ফেলেছেন আবুল হাসান রাজু। অথচ কী দুর্দান্তভাবেই না টেস্ট ক্যারিয়ারের শুরু হয়েছিল তাঁর। টেস্ট অভিষেকেই করলেন সেঞ্চুরি। ১০ নম্বর ব্যাটার হিসেবে ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের ইনিংসের রেকর্ড গড়েছিলেন তিনি। 

আবুল হাসানের মূল শক্তির জায়গাটা ছিল বোলিংয়ে। কিন্তু, বাংলাদেশে ক্রিকেটে সেটি দেখা গিয়েছে কমই। যেটুকু লাইম লাইট তিনি পেয়েছিলেন তা ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঐ অবিশ্বাস্য ইনিংসের কারণেই। এরপর তিনি হারিয়ে গেছেন। কখনো ইনজুরির কারণে ব্রাত্য হয়েছেন, কখনো নিজের অফ ফর্মের কারণেই ক্রিকেট ক্যারিয়ারটা হেলায় হারিয়েছেন।

  • ইসুরু উদানা (শ্রীলঙ্কা)

শ্রীলঙ্কার হয়ে এক যুগের ক্যারিয়ার তাঁর। কিন্তু এ সময়ের মাঝে তিনি খেলতে পেরেছেন মাত্র ২১ টি ওয়ানডে আর ৩৫ টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। অবশ্য ক্যারিয়ার জুড়ে চোখে পড়ার মতো তেমন কিছু না করতে পারাই এক সময় তাঁকেও থেমে যেতে হয়।  গত বছর ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা জানান ৩৪ বছর বয়সী এ লঙ্কান পেসার। 

  • থিসারা পেরেরা (শ্রীলঙ্কা)

ক্যারিয়ার জুড়ে ধারাবাহিকই ছিলেন তিনি। বিশেষত ফিনিশার হিসেবে লঙ্কানদের অন্যতম ভরসার নাম ছিল পেরেরা। তবে ২০২১ সালে হঠাতই জাতীয় দল থেকে অবসরের ঘোষণা দেন তিনি। আচমকা এ অবসরে সে সময় হতবাক হয়েছিল পুরো ক্রিকেট বিশ্ব। 

মূলত শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে সে সময় পেরেরার আর্থিক চুক্তি নিয়ে সমস্যা চলছিল। তাছাড়া টিম ম্যানেজমেন্ট চেয়েছিল, সীমিত ওভারের ক্রিকেটে দলের একাধিক সিনিয়র ক্রিকেটারকে ছেঁটে ফেলে নতুনদের সুযোগ দিতে। সব কিছু মিলিয়ে মাত্র ৩২ বছর বয়সেই জাতীয় দল থেকে বিদায়ের সিদ্ধান্ত নেন থিসারা পেরেরা।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link