রোনালদো না থাকলে কিসের বিশ্বকাপ!

২০২১ সালে যখন বিশ্বকাপ বাছাইয়ের গ্রুপ পর্বে প্রথম হতে ব্যর্থ হয় পর্তুগাল তখন থেকেই শঙ্কা জেগেছিল তাদের বিশ্বকাপ যাত্রা নিয়ে। প্লে-অফে তুরস্ক আর পরের ম্যাচের সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ যখন দাঁড়িয়েছিল ইতালিকে তখন অনেকেই হয়তো মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে পর্তুগাল দলকে দেখার আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন।

কিন্তু শঙ্কার মেঘমালা সরিয়ে অবশেষে পর্তুগালের আকাশে বিশ্বকাপের সূর্য উঁকি দিয়েছে। সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে উত্তর মেসিডোনিয়া-কে হারিয়ে কাতারের টিকিট জিতে নিয়েছে রোনালদো’র দল। প্রথমে তুরস্ক আর প্লে-অফের ফাইনালে ইতালিকে হারিয়ে অঘটনের জন্ম দেয়া উত্তর মেসিডোনিয়াকে উড়িয়ে দিয়ে টানা পঞ্চমবারের মত বিশ্বকাপ নিশ্চিত করলো টিম পর্তুগাল।

রেফারির ভুল কিংবা ভাগ্যের প্রহসন, যেটিই হোক কারণ; পর্তুগাল সরাসরি কোয়ালিফাই করতে পারেনি বিশ্বকাপে। বাধ্য হয়েই তাই তাদেরকে হাঁটতে হয়েছিল প্লে-অফের কঠিন পথে। অবশ্যই কঠিন পথ সহজভাবেই পাড়ি দিয়েছে ফার্নান্দো সান্তোসের শিষ্যরা।

প্লে-অফের প্রথম ম্যাচে তুরস্ককে ৩-১ গোলে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছিল তারা। গ্রুপের অন্য ম্যাচে দুর্বল মেসিডোনিয়া ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল ইতালিকে রুখে দিয়ে। ১-০ গোলে ইউরো চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল মাত্র বিশ লক্ষ জনসংখ্যার দেশ মেসিডোনিয়া।

তবে বেশিদূর গড়ায় নি মেসিডোনিয়া’র স্বপ্ন। মাঠে নামার আগে টুইটারে দেখে নেয়ার কথা বললেও মাঠে খুব একটা প্রতিরোধ গড়তে পারেনি তারা। ব্রুনো ফার্নান্দেজের তান্ডবে প্লে-অফ ফাইনালে অসহায় আত্মসমর্পণই করতে হয়েছে তাদেরকে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের এই এটাকিং মিডফিল্ডারের জোড়া গোলেই মূলত ম্যাচ জিতে নেয় পর্তুগাল। পর্তুগিজ অধিনায়ক ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো এবং লিভারপুল স্ট্রাইকার দিয়েগো জোতা একটি করে অ্যাসিস্ট করেন।

না, পর্তুগাল কোন ফুটবল পরাশক্তি নয়। ব্রাজিল, জার্মানি, ফ্রান্সের মত ফুটবলের ঐতিহ্যবাহী কোন শক্তিও এখনো হতে পারেনি তারা। বিশ্বজুড়ে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিলের মত বিশাল সমর্থক গোষ্ঠীও নেই দেশটির। পেলে-ম্যারাডোনা কিংবা জিদানের মত বিশ্বজয়ী কিংবদন্তির জন্মও হয়নি ইউরোপের দেশটি-তে।

১৯৩৪ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত মাত্র তিনবার বিশ্বকাপ খেলতে সক্ষম হয়েছিল পর্তুগাল। যেখানে এরই মধ্যে পাঁচবার বিশ্বকাপই জিতে নিয়েছিল ব্রাজিল, চারবার জিতেছিল ইতালি। কিন্তু এরপরই বদলে গিয়েছিল পর্তুগাল। ২০০৩ সালে পর থেকে তারা খেলেছিল টানা চার বিশ্বকাপ। অর্থাৎ ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো দলে থাকা অবস্থায় কখনোই বিশ্ব আসর মিস করেনি পর্তুগাল দল।

২০১৪ সালের মত অবশ্য এবারও শঙ্কা দেখা দিয়েছিল। তবে থামতে হয়নি পর্তুগাল-কে। সেবার তরুন রোনালদো আর এবার জোতা-ব্রুনো দের কাঁধে ছড়ে বিশ্বকাপের বিমান ধরতে সক্ষম হলো ফিফা র‌্যাংকিংয়ে আট নম্বরে থাকা দলটি।

প্লে অফের ম্যাচগুলোর অনেক আগে কাতারে এক সাক্ষাৎকারে রোনালদো প্রতিজ্ঞা করেছিলেন পর্তুগাল বিশ্বকাপ খেলবেই; উত্তর মেসিডোনিয়ার বিপক্ষে মাঠে নামার আগেও সংবাদ সম্মেলনে ঘোষনা দিয়েছিলেন পর্তুগাল ছাড়া বিশ্বকাপ সম্ভব নয়। কাপ্তানের এমন অতুলনীয় আত্মবিশ্বাসই পর্তুগালের পুরো দলকে মানসিক ভাবে শক্তিশালী করেছে; সাহায্য করেছে অর্জনে। নিকট ভবিষ্যতেও হয়তো এমন আত্মবিশ্বাসী রোনালদো অ্যান্ড কোং কিছু করে দেখাতে চাইবে বিশ্ব মঞ্চে।

বিশ্বকাপে অবশ্য পর্তুগালের পক্ষে বাজি ধরার মত লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল হবে। র‌্যাংকিংয়ে এগিয়ে থাকলেও হট ফেভারিটদের তালিকায় কেউ রাখতে চাইবে না পর্তুগালকে। তবে এবারই হয়তো ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো’র শেষ বিশ্বকাপ; শেষ বিশ্বকাপ পেপে’র মত পর্তুগিজ কিংবদন্তীর জন্য। তারা নিশ্চিত জানপ্রাণ দিয়ে চাইবে স্মরণীয় করে রাখতে তাদের সর্বশেষ বিশ্বকাপ মিশন।

কোন ঘোড়ার উপর বাজি ধরবে তা একান্তই বাজিকরের ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে নিভে যাওয়ার আগ-মুহূর্তে যেমন দপ করে জ্বলে উঠে অগ্নিশিখা সেভাবে হয়তো রোনালদোও জ্বলে উঠবে বিশ্বকাপে। হয়তো সে অগ্নিশিখায় পুড়ে নতুন ইতিহাস হবে, কাতারে রোনালদো দেখাবে বুড়ো হাঁড়ের ভেলকি।

এসব অবশ্য সম্ভাবনা, বাস্তবে আসলে কি ঘটবে তা তো সময়ই বলবে। তবে আরো একবার, খুব সম্ভবত শেষবারের মত রোনালদো আর তার নেতৃত্বাধীন পর্তুগালের উপর ভরসা করবে শুভাকাঙ্ক্ষীরা। ভরসার প্রতিদান দেওয়ার দায়িত্ব একজন ‘সিআরসেভেন’ এর কাঁধে, ব্রুনো-সিলভা কিংবা অভিজ্ঞ পেপে, মৌতিনহোদের কাঁধে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link