পৃথিবীতে বিভিন্ন ক্ষেত্রেই কিছু কিছু ব্যাক্তিত্ব থাকে যারা ক্রমাগত নিজেদের কাজটা নীরবে করে যান, কিন্তু প্রচার পান না, অনেকেই আবার আছে প্রচার পেতে চান না। লক্ষ্য করে দেখবেন আপনার মনে সেই মানুষগুলোর প্রতি একটা সম্মান ভালোবাসা সবসময় লুকিয়ে আছে, যেটা আপনিও হয়তো বের করতে চান না, আর এমন উদাহরণ কম নয় বলেই মনে করি।
ক্রিকেটেও এমন মানুষের উদাহরণ অনেকেই আছে। তাঁদের আমরা বলি আন্ডাররেটেড, তাঁরা থাকেন পাদপ্রদীপের আড়ালে। তেমনই একজন হলেন নিউজিল্যান্ডের রস টেলর। আরো অনেককে খুঁজলেই পাওয়া যাবে হয়তো, তবে এখানে রস টেলর আলাদা। কারণ, তিনি লম্বা সময় ব্যাট হাতে সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছেন নিউজিল্যান্ডকে। তবে, আলোটা সামান্যই আসে তাঁর ওপর।
একটা সময় আলোটা কাড়তেন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। এখন যেমন কাড়েন কেন উইলিয়ামসন। তবে, সব জায়গাতেই রস ছিলেন, আর যত দিন যাচ্ছে তিনি যেন আরো মোক্ষম আরো বেশি প্রকোপ হয়ে উঠেছিলেন। আর সেটা একদম ক্যারিয়ারের শেষ অবধি।
নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটাররা এমনিতেই সবার ভালোবাসার পাত্র হন। কারণ মাঠে ও মাঠের বাইরে তাঁদের একটা আলাদা স্নিগ্ধ মনোভাব থাকে যেটা আপনাকে তাঁদের প্রতি একটা টান অনুভব করায়। রস টেলরও তেমনি ছিলেন।
ক্যারিয়ারের শুরু থেকে পর্দার আড়ালে থাকতে পছন্দ করেন নিজের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে, অতিরিক্ত উচ্ছ্বাস কিংবা মাঠের মধ্যে উগ্র আগ্রাসন কোনোদিন নিজের মধ্যে মাথাচাড়া হয়ে উঠতে দেননি, সবসময় একটা হালকা হাসি মুখে বর্তমান থাকে, আর এগুলোই তাঁদের প্রতি আমাদের গুনমুগ্ধতা আরও বাড়িয়ে তোলে।
প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ক্রিকেটের তিন ফর্মাটে ১০০টি করে ম্যাচ খেলবার কৃতিত্ব, টানা দুই বার ৫০ ওভারের বিশ্বকাপের ফাইনালে হারবার আক্ষেপ – ক্যারিয়ারে অর্জনের রাস্তা খুব কম নয়, আবার আক্ষেপেরও ইতি নেই। সেই অর্জন আর আক্ষেপের মিলনেই ক্যারিয়ারের ইতিটা টেনে ফেললেন তিনি।
৪০ টি শতরান-সহ ১৮০০০ এর কাছাকাছি আন্তর্জাতিক রান করেছেন, হয়ে উঠেছেন দেশের তথা বিশ্বক্রিকেটের অন্যতম সেরা পারফর্মার। ব্ল্যাক ক্যাপদের মিডল অর্ডারে বারবার দলের কাণ্ডারি হয়েছেন, আর চার নম্বর পজিশনে ব্যাট করে তো এখনো পর্যন্ত বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান স্কোরার ওয়ানডে ক্রিকেটে, টেস্টেও অসাধারণ। আর ব্যাট করবার সময় ট্রেডমার্ক লেট কাট কিংবা অফসাইডে সরে এসে স্লগ করে মিড উইকেটে উড়িয়ে দেওয়া যে কোনো মানুষের কাছে চোখের আরাম।
ক্যারিয়ারের অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে রস এখন অতিত হওয়ার পথে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটে। আর লম্বা সময় তিনি মুগ্ধতা ছড়াবেন না, বলে দিয়েছেন এই মৌসুমটাই তাঁর শেষ।
১৭ বছরের লম্বা যাত্রা। সাদা পোশাকে সেই যাত্রার ইতি ঘটবে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ দিয়ে। অথচ, সর্বশেষ যে ফাইনাল দিয়ে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতল নিউজিল্যান্ড সেখানেও বড় অবদান ছিল এই রস টেলরের। এরপর অস্ট্রেলিয়া ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ছয়টা ওয়ানডে খেলবেন। ব্যাস, রস টেলরের ‘রস’ময় বিদায় হবে।
তবে, ক্রিকেটপ্রেমিদের চাওয়া একটা এখনো যতদিন ক্রিকেট আরও খেলবেন ততদিন আমাদের মুগ্ধতায় আবদ্ধ রাখবেন ওই চিরপরিচিত জিভ কাটবার ভঙ্গিমাটি দিয়ে। বাইশ গজ তাতে হয়ে উঠবে আরো ‘রস’ময়।