সুঠাম দেহের বর্ণনায় কাব্যগ্রন্থে যা পড়ে এসেছি তেমন কোন চরিত্র তিনি নন। গড়ন অতি সাধারণ। লিকলিকেও বলা যায়। তবুও রুতুরাজ গায়কোয়াড় নতুন এক মহাকাব্য লিখবেন বলেই যেন নিয়েছেন ব্রত। এখনও ঠিক পরিপক্ক হয়ে ওঠেনি তার কাঁধ, তবুও সেই কাঁধে বয়ে বেড়াচ্ছেন চেন্নাই সুপার কিংসের দায়িত্ব। সেই ভারে তিনি নুইয়ে পড়েননি বরং বীরদর্পে চালিয়ে যাচ্ছেন নিজের হাতিয়ার- ব্যাট।
ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) অন্যতম সফল দল চেন্নাই সুপার কিংস। সে অবশ্য পুরনো তথ্য। পাঁচবার শিরোপা জেতা দলটার দায়িত্ব এবারই নিয়েছেন তরুণ রুতুরাজ, সেটা বরং বেশ সাম্প্রতিক। তবে তার চাইতেও নতুন তথ্য লখনৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে তার হাঁকানো শতক।
অধিনায়ক হিসেবে এখন অবধি কক্ষচ্যুত হতে দেখা যায়নি রুতুরাজকে। যেখানে চ্যাম্পিয়ন অধিনায়ক হয়ে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের জার্সিতে খাবি খাচ্ছেন হার্দিক পান্ডিয়া। রুতুরাজ তার দলকে রেখেছেন শীর্ষ চারের মধ্যেই। সে যাত্রায় ব্যাট হাতেও থেকেছেন তিনি সম্মুখভাগে।
চেন্নাই সুপার কিংসের অধিনায়ক এখন অবধি তাদের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। সত্যিকার অর্থেই নেতার মত করছেন তিনি বিচরণ। লখনৌ বোলারদের শাসন করে গেছেন একেবারে ইনিংসের শেষ অবধি। শতক তুলে নিয়েছেন। যশ ঠাকুরকে এক্সট্রা কাভার অঞ্চল দিয়ে বাউন্ডারি হাকিয়ে আইপিএল ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেন রুতুরাজ।
এর আগে অবশ্য লং অন দিয়ে হাকিয়েছিলেন ছক্কা। দারুণ সাজানো-গোছানো ছিমছাপ গোছের এক শতক হাকিয়েছেন তিনি। প্রায় প্রতি বলেই বাউন্ডারি আদায় করতে চেয়েছেন তিনি তেমনটি নয়। বলের মেরিট বুঝে নিজের শট খেলেছেন। সে কাজ করতে গিয়ে আবার স্ট্রাইকরেটকেও একেবারে দৃষ্টিকটু হতে দেননি।
চিপকের উইকেট দাঁড়িয়েও ব্যাটিং করে গেছেন সাবলীলভাবে। তার চেন্নাইকে শক্ত একটা সংগ্রহের ভীত গড়ে দেন তিনি নিজেই। সে ভীতের উপর দাঁড়িয়ে শিভাম দুবে যথারীতি চালিয়েছেন তাণ্ডব। তাতে করেই চেন্নাইয়ের সংগ্রহ ছাড়ায় ২০০ রানের গণ্ডি।
রুতুরাজের খেলা ১৮০ স্ট্রাইকরেটের ইনিংসটি-তে ছিল সবকিছুই। ধৈর্য্য আর আগ্রাসনের একেবারে নিখুঁত মিশ্রণের এক ইনিংসই উপহার দিয়েছেন রুতুরাজ গায়কোয়াড়। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকেছেন তিনি ৬০ বলে ১০৮ রান নিয়ে। ভারতের মাটিতে দাঁড়িয়ে এটিই ছিল তার আইপিএলের মঞ্চের প্রথম শতক। এই ইনিংসে তিনটি ছক্কার পাশাপাশি ১২টি চার মেরেছেন রুতুরাজ।
এই শতকের কল্যাণে আইপিএলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকায় দুই নম্বরে উঠে এসেছেন তিনি। এভাবেই তো অধিনায়ককে দিতে হয়ে নেতৃত্ব। নিজে করে দেখাতে হয়। দিতে হয় ‘স্টেটমেন্ট’। অন্যদের পারফরমেন্স করবার অনুপ্রেরণা হয়েই রুতুরাজ এগিয়ে যাচ্ছেন চেন্নাইকে সাথে নিয়ে।