ধূমকেতুর মতো বাংলাদেশ ক্রিকেটে আগমন সাব্বির রহমানের।
ওয়ানডে অভিষেকে দলের শেষের চাহিদা পূরণ করে ৪৪ রান করা সাব্বির টেস্ট অভিষেকেও ৬৪ রানের ইনিংস খেলে জানান দিয়েছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটে রাজত্ব করতেই এসেছেন তিনি। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে সেই আগমনী বার্তার বেলুন উড়িয়েছেন আকাশচুম্বী। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের সাত বছর পার করার পর সাব্বির কি কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছেন?
৬৬ ওয়ানডেতে ২৫.৬০ গড়ে সাব্বিরের ব্যাট থেকে এসেছে ১৩৩৩ রান এবং ১১ টেস্টে তার সংগ্রহ ২৪.১০ গড়ে ৪৮১ রান। যে ফরম্যাটে তার কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি প্রত্যাশা করা হয়েছে সেই টি-টোয়েন্টিতে ৪৪ ম্যাচে ২৪.৯০ গড়ে করেছেন ৯৪৬ রান। অনেক ম্যাচেই উইকেটে থিতু হয়েও আক্রমণাত্মক খেলতে গিয়ে ইনিংস বড় করতে পারেননি এই ব্যাটসম্যান।
২০-৩০ রানের ঐ ইনিংস গুলো আরো একটু বড় হলে সাব্বিরের ক্যারিয়ারটা আরো ভালো হতেই পারতো। পরিসংখ্যান যেটাই বলুক সাব্বির নিজেও মানেন ঐ ইনিংস গুলো বড় হলে এখনো জাতীয় দলে খেলতে পারতেন তিনি। খেলা ৭১-এর সাথে একান্ত আলাপে সাব্বির রহমান জানিয়েছেন আক্রমণাত্মকের সাথে তিনি পরিণত থাকলে ক্যারিয়ারটা আরো ভালো হত তাঁর।
তিনি বলেন, ‘আক্রমণাত্মকের সাথে যদি আরো একটু পরিণত হতাম তবে এখন জাতীয় দলে থাকতাম। আক্রমণাত্মক হয়ে আউট হয়ে গেছি। ২০-৩০ রান করে আউট হয়ে গেছি। এটা যদি ৪০-৭০ বা সেঞ্চুরি হত আমার ক্যারিয়ারটা আরো ভালো থাকতো। ইনশাআল্লাহ এখনো থাকতে পারতাম। পাস্ট ইজ পাস্ট। কিছু করার নাই। দলের জন্য খেলেছি, দলকেই প্রাধান্য দিয়েছি। সেক্ষেত্রে আউট হয়েছি, আউট হই নাই এরকম অনেক বিষয় আছে। যদি দলের জন্য না খেলতাম তাহলে সব ম্যাচই নট আউট থাকতে পারতাম। এটা আলাদা বিষয়, সবাই দলের জন্য খেলে কিন্তু কেউ পরিণত হয় কেউ অপরিণত হয়। তো দেখা যাক ইনশাআল্লাহ।’
শুধু ইনিংস বড় করতে না পারার কারণেই যে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি সেটাও নয়। সাব্বির মনে করেন নিজের খারাপ সময়ে আরো একটু গোছানো থাকলে বেশি খেলতে পারতেন তিনি। দল থেকে বাদ পড়ার পর করোনার কারণে ঘরোয়া লিগ বন্ধ থাকায় ফিরে আসার সুযোগও পাননি তিনি। সাব্বির জানিয়েছেন ফিরতে পারেননি বলেই প্রত্যাশা নিয়ে কথা উঠছে এখন।
তিনি বলেন, ‘প্রত্যাশা বলতে পাঁচ ছয় বছর খেলেছি আলহামদুলিল্লাহ। মানুষের খারাপ সময় যায়। খারাপ সময়ের ভিতর আমি আরেকটু গোছানো হতে পারতাম। যদি আরো একটু সব ঠিক থাকতো বেশি খেলতে পারতাম। জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার পরে করোনার জন্য আমি আর ফিরতে পারি নাই। কারণ ঘরোয়া ক্রিকেট হলে আমি আবার ফিরতে পারতাম। ফিরতে পারিনি বলেই প্রত্যাশার কথা উঠছে। খেলা যখন শুরু হবে তখন দেখা যাক কি হয় ইনশাআল্লাহ।’
সাব্বিরের প্রতিভা নিয়ে কারোই সন্দেহ থাকার কথা নয়। শুধু ব্যাটিংই নয়, ফিল্ডিংয়েও দলের সেরা ফিল্ডারদের একজন তিনি। দলের প্রয়োজনে বোলিংও করতে পারেন টুকটাক। নিজের প্রতিভার প্রয়োগ কত টুকু করতে পেরেছেন তিনি? এমন প্রশ্ন করা হলে সাব্বির জানিয়েছেন এটা বিচার করার ক্ষমতা তার নেই। তবে তিনি মনে করেন প্রতিভার প্রয়োগ নির্ভর করে সফলতা ও ব্যর্থতার উপর।
সাব্বির বলেন, ‘প্রতিভা তো আসলে কেউ যাছাই বাছাই করতে পারে না কে কত টুকু দিয়েছে, না দিয়েছে, এটা সম্পূর্ন সময়ের ব্যপার। কখনো সময় খারাপ যায়, কখনো ভালো সময় যায়। আপনি যদি জীবনে রিস্ক নেন এবং সফল হন তবে আপনার প্রতিভাও সফল হবে। আর আপনি যদি সফল না হন আপনার প্রতিভা নষ্ট হবে। সেক্ষেত্রে এটা বিচার করার মতো ক্ষমতা আমার নাই।’
আগের সব কিছু ভুলে আসন্ন ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট ভালো পারফরম্যান্স করে আবার জাতীয় দলে ফিরতে চান সাব্বির রহমান। এখন অনেকেই ক্যারিয়ার লম্বা করার জন্য শুধু ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি খেলতে চাইলেও সাব্বির রহমান ভাবতে চান টেস্ট নিয়েও। টি-টোয়েন্টির এই যুগে এখনো সাব্বিরের কাছে গুরুত্বপূর্ণ টেস্ট ক্রিকেট।
এই ব্যাটসম্যান বলেন, ‘ক্রিকেটে তো মূল খেলাই হচ্ছে টেস্ট ম্যাচ। আলহামদুলিল্লাহ ৬ টা টেস্ট খেলেছি। অনেকেই বলেছে যে আমি টেস্ট খেলতে পারবো না। কিন্তু দেশের বাইরে টেস্ট খেলছি, টেস্ট প্লেয়ার হইছি বাংলাদেশের। তো টেস্ট নিয়ে অবশ্যই আমার চিন্তা আছে। টি-টোয়েন্টি তরুণদের বললেন, টি-টোয়েন্টি হলো ছয় চারের খেলা, আইপিএল দেখেন তরুণ ক্রিকেটাররা খেলতেছে। টি-টোয়েন্টি, ওয়ানডে, টেস্ট সব খেলাই আমার কাছে একই খেলা। সবচেয়ে আসল হচ্ছে টেস্ট খেলা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’