কোহলি: ব্যাটসম্যান নাকি অধিনায়ক!
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যে কোন খেলোয়াড়েরই খেলায় সূক্ষ কিছু পরিবর্তন আসে। ওয়াসিম আকরাম কিংবা জহির খানের মতো বোলাররা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গতি কমিয়ে স্যুইং এর দিকে বেশি নজর দিয়েছিলেন। স্বয়ং শচীন টেন্ডুলকারের ব্যাটিংয়েও বিরাট পরিবর্তন এসেছিল সময়ের সঙ্গে। আগামী দিনে আমরা বিরাটের ব্যাটেও সেরকম কোনো পরিবর্তন হয়তো দেখবো। তাই তাঁর উপরের চাপ কমিয়ে তাঁকে ব্যাটিংয়ে আরও বেশি করে মনোসংযোগ করার সুযোগ করে দেওয়া হোক। তাতে আখেরে বিরাট কোহলি এবং ভারতীয় ক্রিকেট, দু-পক্ষই অনেক বেশি লাভবান হবে।
এর পক্ষে এবং বিপক্ষে, দুই রকম মতই আছে। এর পক্ষে মত পোষণ করেন এমন মানুষের সংখ্যা প্রচুর। আর খেলাটা যখন ক্রিকেট তখন অধিনায়ক যে বাড়তি গুরুত্ব পাবেন সেটা তো খুবই স্বাভাবিক। কারণ ফুটবল ‘কোচেস গেম’ হলেও ক্রিকেট প্রথম দিন থেকেই ‘ক্যাপ্টেনস গেম’। অধিনায়ককে মাঠে দাঁড়িয়ে পুরো খেলাটা এক কথায় পরিচালিত করতে হয় সময়ের আগে গিয়ে।
ক্রীড়া জগতে খুব পরিচিত একটা শব্দ ‘বার্নড আউট’। বিভিন্ন খেলার অনেক বড় বড় খেলোয়াড় এর শিকার। সময়ের অবাক আগেই তাঁদের প্রিয় ক্রীড়াভূমি তাঁরা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন।
প্রশ্ন হচ্ছে এসব হাবিজাবি কথা কেন লিখছি? ভারতীয় ক্রিকেট দলের ক্রীড়া সূচীর দিকে একটু তাকান। বছরে গড়ে প্রায় ১০টা টেস্ট, ২৫টা ওয়ান ডে, ১০/১২ টা টি-টোয়েন্টি আর সর্বোপরি দুই মাস ধরে নিংড়ে নেওয়া ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)। এই সবগুলোতে বিরাট কোহলি অবতীর্ণ হচ্ছেন দলের সেরা ব্যাটসম্যান এবং অধিনায়ক হিসেবে। দিনের পর দিন ধরে। ২০০৮ এর টিনএজ কোহলি আজকে ৩২ এর কোহলি। আর কতদিন ধরে এই দুটো ভূমিকায় সমান ভাবে তিনি টেনে যাবেন?
ব্যাটসম্যান কোহলি নাকি অধিনায়ক কোহলি? কাকে ভারতের বেশি দরকার? তাঁর অতি বড় সমর্থকও নিশ্চয়ই একথা বলবেন না যে দ্বিতীয় কোহলিকে ভারতের বেশি দরকার। অবশ্যই তিনি যথেষ্ট ভাল অধিনায়ক, যথেষ্ট সাফল্য তাঁর সঙ্গে আছে, তিনি ভারতীয় ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা ফাস্ট বোলিং বেঞ্চ তৈরির কারিগর। কিন্তু তাও বলছি, এই লেখার প্রথম লাইনটা তাঁর জন্য। তিনি কোনভাবেই সৌরভ, ধোনি, ইমরানের মতো জন্মগত অধিনায়ক নন। কমেন্ট বক্সে কোহলি ভক্তরা এসে যতই ঝড় তুলুন না কেন, দিনের শেষে এটাই সত্যি কথা।
কিন্তু ব্যাটসম্যান কোহলি? এ যুগের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। গাভাস্কার, শচীনের পরে ভারতীয় ক্রিকেটের ব্যাটিং পরম্পরার সুযোগ্য উত্তরসূরী। আর তাই ব্যাটসম্যান কোহলিকে অনেক অনেক বেশি করে ভারতীয় ক্রিকেটের দরকার। তাঁকে যত বেশিদিন সম্ভব সেরা ফর্মে ব্যাট হাতে দলের সেবা করার জন্য দরকার।
সামনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এই মুহূর্তে দলে বড় বদল আনা ঠিক নয়। তবে তারপরে যত দ্রুত সম্ভব সীমিত ওভারের ক্রিকেটে তাঁর অধিনায়কত্বের পদ থেকে সরে দাঁড়ান উচিত। টেস্টে যেমন করছেন করুন। যদিও তাঁর সমর্থক কূল, স্পনসররা এই বিষয়টা মানতে চাইবেন না। এমনিতেই বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন যে একজন ব্যাটসম্যানের সেরা সময় তাঁর ২৭ থেকে ৩২ বছর পর্যন্ত। সুতরাং এটাই সঠিক সময় তাঁর চাপ কিছুটা কমিয়ে আরও আরও বেশি করে ব্যাটিংয়ে মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যে কোন খেলোয়াড়েরই খেলায় সূক্ষ কিছু পরিবর্তন আসে। ওয়াসিম আকরাম কিংবা জহির খানের মতো বোলাররা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গতি কমিয়ে স্যুইং এর দিকে বেশি নজর দিয়েছিলেন। স্বয়ং শচীন টেন্ডুলকারের ব্যাটিংয়েও বিরাট পরিবর্তন এসেছিল সময়ের সঙ্গে। আগামী দিনে আমরা বিরাটের ব্যাটেও সেরকম কোনো পরিবর্তন হয়তো দেখবো। তাই তাঁর উপরের চাপ কমিয়ে তাঁকে ব্যাটিংয়ে আরও বেশি করে মনোসংযোগ করার সুযোগ করে দেওয়া হোক। তাতে আখেরে বিরাট কোহলি এবং ভারতীয় ক্রিকেট, দু-পক্ষই অনেক বেশি লাভবান হবে।