আশার অট্টালিকায় হতাশা বসতি

রাজশাহী শহরে জন্ম; বেড়ে ওঠা। ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ জন্মে সেই ছোট বেলাতেই। বাড়ির পাশের মাঠে বড় ভাইদের সাথে সময় কাটালেও খেলার সুযোগ পেতেননা তেমন! পাড়ার ক্রিকেট মানেই যেনো বড় ভাইদের কথামতো চলা। আর সেটাই মানতে হতো সাব্বিরকে। আর এভাবেই কাটতো সাব্বিরের কৈশোরের দিনগুলি।

মাঠে যাওয়া – আসা করতে করতেই একদিন বড় ভাইদের সাথে খেলার সুযোগ হয়ে যায় সাব্বিরের। সুযোগ পেয়ে করেছিলেন বাজিমাৎ; ম্যাচে অসাধারণ এক ক্যাচ নিয়ে নজর কাড়েন স্থানীয় কোচের। আর সেই ক্যাচটিই ভাগ্য বদলে দেয় ছোট্ট সাব্বিরের। কোচের কথায় যুক্ত হয় ক্রিকেটের সাথে, শুরু হয় জীবনের নতুন অধ্যায়!

রাজশাহীতে নিজেকে নিয়ে কাজ করতে থাকা সাব্বিরের সুযোগ হয়ে যায় নিজেকে প্রমাণের। ডাক পান বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব ১৯ দলের। অ-১৯ দল থেকেই সাব্বিরকে চিনতে শুরু করেন এদেশের ক্রিকেট প্রেমীরা। অনূর্ধ্ব ১৯ দলেই হার্ডহিটিং কারিশমা দেখিয়ে নজরে আসেন হাজারো ক্রিকেট পাগলের। অনূর্ধ্ব ১৯ দলের হয়ে ২০০৯-১০ মৌসুমে ২৬ ম্যাচে সর্ব্বোচ্চ ৫৩ রানে ৬০৪ রান করেন তিনি। এরপর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) নিজেকে প্রমান করেন। এভাবে চলতে থাকে বেশ কিছুদিন। এরপর ২০১৪ সাথে সফরকারী জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক হয়ে যায় তার।

ছোট বেলায় যেমন অভিষেক ম্যাচে বাজিমাৎ করেছিলেন ঠিক তেমনি এবার বড় মঞ্চের ক্রিকেট তথা স্বপ্ন পূরণের ম্যাচেও করেছিলেন বাজিমাৎ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেক ওয়ানডে ম্যাচেই খেলেছিলেন ঝড়ো ইনিংস! সেই থেকে বিশ্বকাপের দলে সুযোগ হয়ে যায় তাঁর। সময়ের সাথে সাথে নিজেকে মেলে ধরেন তিনি। নামের পাশে যুক্ত হয় হার্ড হিটার তকমা! এরপর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও দারুণ শুরু হয় তাঁর। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ জেতানো সেই ইনিংসটি এখনো চোখে ভাসে হাজারো ভক্তের। তাঁর একেকটা শর্টেও পাওয়ার ছিলো চোখে পড়ার মতো।

এইসবকিছুর সাথে সাব্বির রহমান পরিচিতি পেয়েছেন মিস্টার ব্যাড বয়ের। কারণটা সবারই জানা। বাজে অভ্যাসের কারণে কয়েকবার গুনতে হয়েছে মোটা অঙ্কের টাকা; নিষিদ্ধ হয়েছিলো প্রায় চার মাসের মতো। এরপর মাঠে ফিরে করেন ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি। এরপর ২০১৯ বিশ্বকাপের দলে জায়গা হলেও খেলা হয়নি খুব বেশী ম্যাচ। এরপর বাজে ফর্মের কারণে ছিটকে যায় দল থেকে।

জাতীয় দল থেকে বাদ পড়া সাব্বির নিজেকে বদলানোর চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। ফিরেছিলেন মাঠে, আবারো হতাশ হয়েছেন, হতাশ করেছেন তাঁর ওপর ভরসা রাখা সবাইকে। দিনশেষে নিজের ভুলে হারিয়ে যাওয়া এক তারকা ক্রিকেটারের নাম সাব্বির!

কিন্তু সাব্বির ছিলেন প্রবল হতাশার মাঝে একরাশ আশার প্রতিচ্ছবি, বজ্র শক্তির মতো গর্জনে লাল-সবুজের জার্সিতে হয়েছিলো রাজকীয় অভিষেক। ২৪ বলের অনবদ্য ৪৫ রানের ক্যামিও, স্লগ ওভারে বাংলাদেশি হিসেবে অন্যতম সেরা ইনিংস! সেদিন অনেকেই ভেবেছিলো একজন হার্ড হিটারের চিরকালীন আক্ষেপটা হয়তো এবার দূর হতে যাচ্ছে! অনেকেই বলেছিল বাংলাদেশও পেতে যাচ্ছে একজন ফিনিশার; একজন গেম চেঞ্জার! দিনশেষে এই কথাগুলো এখন শুধুই আফসোসে পরিণত হয়েছে।

বাদামি বর্ণের চোখ, মুষ্টিবদ্ধ হাত, অসাধারণ ফিটনেসের অধিকারী সাব্বির যেনো ক্ষিপ্র চিতাবাঘের মতো। তার অসাধারণ ফিল্ডিংয়ে প্রতিপক্ষের ডাবলকে সিঙ্গেল আটকে রাখতেন, শূন্যে লাফিয়ে উঠে অসাধারন ভঙ্গিতে বল তালুবন্দী করতেন! রোহিত শর্মাকে আউট করা সেই ক্যাচটি এখনো অনেকের চোখে ভাসে। কিন্তু সেই সাব্বির এখন একের পর এক ক্যাচ মিস, রান আউট মিস, স্লপি ফিল্ডিংয়ে নিজেকে বাজে ভাবে প্রমাণ করছে। হঠাৎ এমন ব্যর্থতার কারণ হয়তো একমাত্র তিনিই বলতে পারবেন।

সাব্বির; এক হতাশার নাম। হতাশা থেকে মুক্ত হতে সাব্বিরের সামনে অপেক্ষা করছে কঠিন চ্যালেঞ্জ! পাঁচ দলীয় টুর্নামেন্টে বেক্সিমকো ঢাকার হয়ে সুযোগ পাওয়া সাব্বির কি পারবে হতাশা থেকে মুক্ত হতে? পারবে কি নতুন ভাবে নিজেকে প্রমাণ করতে? উত্তরগুলো সময় হলেই পেয়ে যাবো আমার।

জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়াটা সাব্বির সামনে এখন সোনার হরিণ পাবার মতো! নিজেকে প্রমাণ করলেই হবেনা, হতে হবে ধারাবাহিক। সেই সাথে করতে হবে অসাধ্য সাধন। তবেই হয়তো জাতীয় দলে সুযোগ পেলেও পেতে পারেন!

টানা ব্যর্থ হওয়া সাব্বির হারিয়ে যায়নি, আলোচনায় থাকেন সবসময়ই। কেননা তার হিটিং অ্যাবিলিটি মুগ্ধ করে সবাইকে। ব্যাট হাতে দারুণ সব বাউন্ডারি আর ওভার বাউন্ডারি মুগ্ধ করে সবাইকে। কিন্তু দিনশেষে এই হিটিং অ্যাবিলিটি দিয়ে তো আর জাতীয় দলে নিয়মিত হওয়া যায়না! নিয়মিত হতে হলে চাই পারফরম্যান্স। কিন্তু সেখানে সাব্বির ব্যর্থ; অধারাবাহিক।

বয়স খুব বেশি নয়, প্রতিভা অনুযায়ী এখনও সাব্বির রহমানের অনেক কিছু দেওয়ারই বাকি আছে সাব্বিরের। সাব্বিরের মধ্যে সেই দেওয়ার তাড়নাটা আছে তো?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link