কার্স্টেন কোচ হবার সময় খুশি ছিলেন না শচীন

ঘরের মাঠে ২০১১ বিশ্বকাপে ভারতের ওপর চাপ ছিল পাহাড়সম। সেই ভারতীয় দলকে এক করেছিলেন দক্ষিন আফ্রিকান কোচ গ্যারি কার্স্টেন। তবে কার্স্টেন কোচ হয়ে আসার সময়ে ভারতের ড্রেসিংরুম খুব বেশি খুশি ছিল না বলে জানালেন এই কোচ। এমনকি শচীন টেন্ডুলকারও খুব বেশি খুশি ছিলেন না কার্স্টেন কোচ হয়ে আসার পর।

২৮ বছরের অপেক্ষা। সেই ১৯৮৩ সালের পর আর বিশ্বকাপ শিরোপা ছুঁয়ে দেখা হয়নি। এর মধ্যে ২০০৭ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কাছে হেরে গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায়। ঘরের মাঠে ২০১১ বিশ্বকাপে ভারতের ওপর চাপ ছিল পাহাড়সম।

সেই ভারতীয় দলকে এক করেছিলেন দক্ষিন আফ্রিকান কোচ গ্যারি কার্স্টেন। তবে কার্স্টেন কোচ হয়ে আসার সময়ে ভারতের ড্রেসিংরুম খুব বেশি খুশি ছিল না বলে জানালেন এই কোচ। এমন কি শচীন টেন্ডুলকারও খুব বেশি খুশি ছিলেন না কার্স্টেন কোচ হয়ে আসার পর।

দুনিয়া জোড়া সব বিখ্যাত কোচেরাই কাজ করেছেন ভারতীয় জাতীয় দলের হয়ে। তবে ভারতের কোচ হবার কাজটা যে মোটেও সহজ নয় তা আঁচ করা যায় সহজেই। প্রায় ১৪০ কোটি মানুষের প্রত্যাশার চাপ নিয়ে কাজ করতে হয় কোচের।

এছাড়াও ড্রেসিংরুমে একঝাঁক তারকাকে সামলাতে হয় তাঁকে। তাই ২০০৭ বিশ্বকাপ ব্যর্থতার পর গ্যারি কার্স্টেন কোচ হয়ে আসার পর তাঁর কাজও সহজ হয়নি। ড্রেসিংরুমে আসার পর অনেককেই অখুশি দেখেছেন তিনি। যদিও এরমধ্যে কার্স্টেনের জন্য ব্যাতিক্রম ছিলেন মাহেন্দ্র সিং ধোনি।

ইউটিউবের একটি আয়োজনে কার্স্টেন জানান, যখন ২০০৭ সালের শেষের দিকে তিনি কোচ হয়ে এলেন তখন দলের অবস্থা তখন খুব আদর্শ ছিল না। শচীন টেন্ডুলকারও খুবই অসুখী ছিলেন দলে। এমনি শচীন তখন অবসরের কথাও ভাবছিলেন।

২০০৭ বিশ্বকাপের পর শচীনের অবসর নিতে চাওয়াটা অনেকটাই ওপেন সিক্রেট ছিল কিন্তু কার্স্টেন কোচ হয়ে আসার সময়েও এই ভাবনা থেকে তখনো বের হয়ে আসেননি শচীন।

কার্স্টেন বলেন, ‘আমার কাছে তখন গুরুত্বপূর্ণ ছিল একজন নেতা খুঁজে বের করা যে এমন প্রতিভাবান একটা দলে বিশ্বজয়ী দলে পরিণত করতে পারবে। যখন আমি দায়িত্ব নিলাম তখন দলে অনেক সমস্যা ছিল। দলের অনেকেই খুশি ছিলো না। আমার কাছে তখন গুরুত্বপূর্ণ ছিল সব খেলোয়াড়কে বোঝা এবং দলে তাদের গুরুত্বটা বোঝানো যা তাদের আনন্দের সাথে দলের জন্য খেলতে সাহায্য করবে।’

শচীনের ব্যাপারে কার্স্টেন বলেন, ‘যখন আমি দলে যোগ দেই তখন শচীন মোটেই খুশি ছিল না। সে বিশ্বাস করত তাঁর দলকে আরো অনেক কিছু দেবার আছে কিন্তু সে তাঁর ক্রিকেট উপভোগ করছিল না। সে তখন ক্যারিয়ারের এমন এক পর্যায়ে ছিল যে তার মাথায় তখন অবসরের ভাবনাও ঘুরছিল। তখন আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল তাকে বোঝানো যে তাঁর এখনো দলকে অনেক কিছু দেবার আছে।’

ধোনি-কার্স্টেন এর জুটি ভারতকে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ শিরোপা জেতায়। ২০০৭ সালে তরুণ ধোনির নেতৃত্বে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতার পর ওয়ানডের দায়িত্বও দেয়া হয় ধোনির হাতে। এরপর দারুণ জমে কার্স্টেন-ধোনি রসায়ন। দুই মাস্টারমাইন্ডের যুগলবন্দিতে ২০০৭ বিশ্বকাপে গ্রুপপর্ব থেকে বাদ পড়া ভারত ২০১১ বিশ্বকাপে উঁচিয়ে ধরে শিরোপা।

কার্স্টেন মনে করেন, ভারতে ‘সুপারস্টার’ ধারণার কারণে অনেক খেলোয়াড়ই ব্যক্তিগত মাইলস্টোন অর্জনে গুরুত্ব দিতে গিয়ে ভুলে যান দলের জন্য খেলতে। এক্ষেত্রেই কার্স্টেনেট কাছে শচীনসহ সকলের চেয়ে আলাদা মাহেন্দ্র সিং ধোনি।

কার্স্টেন বলেন, ‘সব কোচই চায় খেলোয়াড়রা জার্সির পেছনের নামের জন্য নয়, জার্সির সামনের নামের জন্য খেলুক। ভারতে সুপারস্টার কালচারের জন্য এটি করা কঠিন ছিল। ধোনি ছিল এই ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। সে শুধুমাত্র দলের পারফরম্যান্স নিয়েই ভাবত। সে দলের জন্য শিরোপা জিততে চাইত এবং প্রকাশ্যেই এসব বলতো। ধোনির এই ধারণা দলের অন্য অনেক খেলোয়াড়কেই এই পথে নিয়ে আসে এবং শচীনও আবার তাঁর খেলা উপভোগ করতে থাকেন।’

ধোনির সাথে নিজের জুটি নিয়ে এখনো রোমাঞ্চিত কার্স্টেন, ‘এমএস আর আমি বিশ্ব ক্রিকেটে অভাবনীয় একটি কোচ-অধিনায়ক জুটি গড়ে তুলেছিলাম এবং আমরা দারুণ একটি সময় কাটিয়েছি।’

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...