স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়ছেন সাইফউদ্দিন। এমন দৃশ্য ক্রিকেট মাঠে সচারচর দেখা যায় না। কালেভদ্রে দেখা যাওয়া মানেই গুরুতর কিছু। হয়ত তেমন গুরুতর কোন ইনজুরি আবারও ক্রিকেট মাঠ থেকে ছিটকে দিতে পারে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকে।
বাংলাদেশ জাতীয় দলে একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডারের অভাবটা বহুদিন ধরে। সেই অভাব ঘোচাতেই যেন আগমন ঘটেছিল মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের। সম্ভাবনার আলোক প্রদীপ জ্বেলে স্বপ্নের জাতীয় দলের জার্সিও গায়ে চড়িয়েছিলেন তিনি।
তবে থিতু হতে পারেননি। কারণ অবশ্য বেশ কয়েকটি। তার মধ্যে অন্যতম তার ইনজুরি। এই ইনজুরির ভয়াল থাবায় কতশত খেলোয়াড় যে হারিয়ে গেছে স্মৃতির অতলে, কে জানে! সবাই ধরেই নিয়েছিল সাইফ সে অন্ধকার গলিতেই তলিয়ে যাবেন।
তবে না। তিনি ফিরে এলেন। ইনজুরি কাটিয়ে নানা বিতর্ক ঠেলে তিনি জায়াগা করে নিলেন আবাহানীর ডেরায়। তাদের হয়ে প্রায় প্রতিটা ম্যাচেই মাঠে নেমেছেন তিনি। এমনকি শেষ দিনে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের বিপক্ষে অলিখিত ফাইনালেও তিনি একাদশে জায়গা করে নিয়েছেন।
আবাহনীর একাদশটায় পরিপূর্ণ দারুণ সব খেলোয়াড় নিয়ে। এমন একটা একাদশে এমনি এমনি তো আর জায়গা পাননি সাইফউদ্দিন। পারফরম করেই তবে তিনি সেখানে থিতু হয়েছেন। বল হাতে এবারের ডিপিএলে দারুণ সময় পার করছিলেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।
আবাহনীর হয়ে শেষ ম্যাচেও একটি উইকেট বাগিয়েছেন তিনি। দূর্দান্ত খেলতে থাকা তাইবুর রহমানকে ফিরিয়েছেন তিনি। অর্ধশতক করা তাইবুর আউট হয়েছেন ৫৩ রানে। মূলত এদিন ইনজুরির একটা আশঙ্কা নিয়েই সাইফউদ্দিন খেলে যাচ্ছিলেন নিজ দল আবহানীর জন্যে।
প্রথম ইনিংসের ৪৭ তম ওভারের শুরুতেই তার অস্বস্তি ছিল স্পষ্ট। তিনি প্রথম দফা দৌড় শুরু করলেও থেমে গেছেন মাঝপথে। এরপর পায়ের মাংশপেশীতে খানিকটা জোর দিয়ে আবারও ফিরে যান বোলিং প্রান্তে। এরপর তিনি জিয়াউর রহমানের উদ্দেশ্যে বল ছোড়েন। তবে ঠিকঠাক ডেলিভারি করতে পারেননি। সাথে সাথে মাটিতে লুটে পড়েন সাইফউদ্দিন।
এরপর খানিকটা কাতরাতে থাকেন তিনি তপ্ত মাঠের মধ্যখানে। এরপর আবাহনী ফিজিও দ্রুত মাঠে প্রবেশ করে তার প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। যদিও তাতে উঠে দাঁড়াতে পারেননি সাইফ। তাইতো স্ট্রেচারে করেই তাকে মাঠ ছাড়তে হয়েছে। প্যাভিলনে ডোকার পথে তার চোখে-মুখে অস্বস্তি ছিল স্পষ্ট। আরও একটিবার যেন সম্ভাব্য সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেল সাইফউদ্দিনের।
জাতীয় দলের লোয়ার অর্ডারে একজন অলরাউন্ডারের অভাব বোধ করছে টিম ম্যানেজমেন্ট। সেদিক থেকে পেস বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে সাইফউদ্দিনের নাম সম্ভাব্য তালিকায় শোনা যাচ্ছিলো বেশ কিছুদিন ধরেই। এবারের ডিপিএলে ১৯ উইকেট শিকার করেছেন। পাশাপাশি ব্যাট হাতে শেষদিকে ১১০ এর আশেপাশের স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করেছেন।
এমন একজন খেলোয়াড় এই মুহূর্তে টাইগারদের মূল একাদশে ভারসাম্য এনে দিতে পারতো। সেদিক থেকে দীর্ঘ একটা বিরতির পর আবারও হয়ত সাইফউদ্দিনকে দেখা যেতো জাতীয় দলের জার্সিতে। তবে তার ইনজুরি প্রবণতা তাকে পিছিয়ে বড্ড দূরে।
তবে ইনজুরি কাটিয়ে আবার হয়ত মাঠে ফিরবেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। কিন্তু নিজের এই ফর্মেই তিনি আবার ফিরবেন কি না, সে প্রশ্ন থেকেই যায়।