আফগানিস্থান সীমান্তের খাইবার পাখতুনওয়াতে জন্ম তার। বেড়ে ওঠা প্রাদেশিক রাজধানী পেশোয়ারে। সেখানেই টেলিভিশনে প্রথম দেখেন সাকলায়েন মুশতাকের বোলিং।
পাকিস্তানি এই কিংবদন্তি বোলিং দেখেই মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। নিজেই নিজেকে বলেছিলেন, একদিন ওনার মত পাকিস্তান দলে খেলতে হবে। সেই সূদুর পেশোয়ারে বসে দেখা এই স্বপ্ন সত্যি হওয়াটা কঠিন ছিল। কিন্তু ক্রিকেট আসলে দূরত্ব বোঝে না।
তাই নিয়তির খেলা হয়ে সেই সাকলাইর মুশতাকের অধীনেই এখন জাতীয় দলে খেলছেন। আর সাকলাইনের চোখের সামনেই পাকিস্তানের টেস্ট ইতিহাসের চতুর্থ সেরা বোলিংটা করে ফেললেন সাজিদ খান। এ যেন গুরুদক্ষিণা দেওয়া।
এ বছরই পাকিস্তান দলে অভিষেক হয়েছে সাজিদের। এর আগে তিনটি টেস্ট খেলেছেন। কখনো ইনিংসে ৫ উইকেটও নিতে পারেননি। একবার কেবল ৩ উইকেট নিয়েছিলেন। সেই সাজিদ এবার ৮ উইকেট নিয়ে নায়ক হয়ে উঠলেন।
যদিও, পরিস্থিতিটা একটু কঠিন ছিল।
বৃষ্টিতে ভেসে গিয়েছিলো মিরপুর টেস্টের মাঝের দুটি দিন। চতুর্থ দিন শেষ বিকেলে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সামনে পেয়েছিলো পাকিস্তান। আকাশে তখনও মেঘ, চলছে আলো আধারির খেলা। পেস বোলারদের জন্য আদর্শ কন্ডিশন। কিন্তু আলো কম থাকায় ম্যাচ রেফারি শর্ত দিলেন পেস বোলাররা বল করতে পারবেন না। অগত্যা সাজিদ আর নোমান আলীতেই ভরসা করলেন বাবর আজম।
আর সাজিদ এই ভরসাটাকে নিলেন সুযোগ হিসেবে। গতকালই বাংলাদেশের যে সাতটি উইকেট পড়লো, তার ছয়টি তুলে নিলেন তিনি; একটি রানআউট। আজ সকালে নিলেন আরও দু’টি উইকেট। সব মিলিয়ে ৪২ রানে ৮ উইকেট।
বাংলাদেশের বিপক্ষে এটা যেকোনো বোলারের টেস্টের সেরা বোলিং ফিগার। স্টুয়ার্ট ম্যাকগিল, ক্রিস কেয়ার্নস, দানিশ কানেরিয়া কিংবা জহির খান – অনেক কিংবদন্তিকেই গেছেন ছাড়িয়ে।
এই পারফরম্যান্সের পর সাজিদ অবশ্য কৃতিত্বটা অনেককে ভাগাভাগি করে দিয়েছেন। বলছিলেন, অধিনায়ক আর কোচের কথামত বল করে সাফল্য পেয়েছেন। আর কৃতিত্ব দিলেন নোমান আলীকে।
অধিনায়কের কথা বলতে গিয়ে বলছিলেন, ‘ববি ভাই (বাবর আজম) বলেছিলো, যেমনই অবস্থা হোক, আমাদের জিততে হবে। এখান থেকেই জিততে হবে। সেভাবে বল করো। আমি তাই করেছি। আর ফল পেয়েছি।’
মাঠে নোমান আলীর কাছ থেকে খুব সমর্থন পেয়েছেন, সেটাও বড় করে বললেন সাজিদ, ‘নোমি ভাই সিনিয়র ক্রিকেটার। ওনার অনেক অভিজ্ঞতা। সেটা উনি কাজে লাগিয়েছেন। আমাকে বারবার বলেছেন, জায়গা ছাড়বেন না। চার-ছয় হতে পারে, কিন্তু ভালো জায়গায় বল করে যাবেন। আমি সেটাই করেছি।’
আর শেষ বেলায় এলো সেই গুরু সাকলায়েন মুশতাকের কথা। ভক্তের মত করেই বলছিলেন, ‘আমি যখন থেকে খেলা দেখতে শিখেছি, সাকলায়েন ভাইয়ের মত হতে চেয়েছি। ওনাকে দেখে স্পিনার হয়েছি। উনি আমাকে বলেছেন, একটা ভালো জায়গায় বল করে গেলে উইকেট আসবে। সেটাই করেছি। ওনার অনেক কৃতিত্ব আছে।’