মাতারা হারিকেন মানেই শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট তথা পুরো ক্রিকেট দুনিয়ার কাছে একটি নাম – সনাথ জয়াসুরিয়া। আধুনিক ক্রিকেটে যিনি যোগ করেছিলেন ভিন্ন এক মাত্রা। বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে নব্বইয়ের দশকে টি-টোয়েন্টির আমেজ নিয়ে এসেছিলেন তিনি। পাওয়ারপ্লেতে প্রতিপক্ষের বোলারের উপর চড়াও হয়ে খেলাটাও শুরু করেছিলেন এই লঙ্কান তারকা। পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে নিজেকে তিনি রেখে গেছেন সেরাদের কাতারে।
ক্রিকেট ছাড়ার পর যুক্ত হয়েছিলেন রাজনীতির সাথে। তবে এর বাইরেও চ্যারিটির হয়ে কাজ করেছেন তিনি। জাতিসংঘের শুভেচ্ছা দূত হিসেবেও কাজ করেন এই লঙ্কান তারকা। ছোট শহর থেকে উঠে এসে ক্রিকেট দুনিয়ার এক বড় নক্ষত্র বনে যান জয়াসুরিয়া।
এক সাক্ষাৎকারে জয়াসুরিয়া বলেছিলেন, ‘ক্রিকেটে না আসলে আমি হয়ত আমার এলাকায় ছোট কোনো চাকরি করতাম। আমার মা আমার নাম বলতে খুশি হয়।’
ছেলের নাম বলতে গর্ব হয় সেটার পেছনের কারণ স্রেফ ক্রিকেট না। জয়াসুরিয়া নামের কারণেই ২০০৪ সালের সুনামি বেঁচে যান তাঁর মা। ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বরে প্রথম ধাক্কায় বিপদে পড়ে উদ্ধারের আসায় ছিলেন জয়াসুরিয়ার মা। উদ্ধারকর্মীরা জয়াসুরিয়ার মা জানতে পেরে সেখান থেকে সরিয়ে তাঁকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে বিশেষ সেবা করেন। ভয়াবহ সেই সুনামিতে অনেকেই প্রাণ হারান। হাজার মানুষসহ জয়াসুরিয়ার কিছু কাছের বন্ধুরাও তেমন একটা সহযোগিতা পাননি।
সেই ঘটনা মনে করে জয়াসুরিয়া একবার বলেছিলেন, ‘এখনও অনেক মানুষ সুনামির নাম শুনলে ভয় পেয়ে যান। কিন্তু আমার মা যখন এটা শুনে সে এখনও আগের মতই দৌড়ান না।’
১৯৯১ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক। ২২ গজে ব্যাট হাতে সবসময়ই দলের জন্য সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। অধিনায়ক হিসেবে প্রায় চার বছর দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও নিউজিল্যান্ড বাদে সব দলের বিপক্ষেই পেয়েছেন সেঞ্চুরির দেখা। এরপর ২০০৭ সালে সাদা পোশাককে বিদায় জানান এই তারকা।
শ্রীলঙ্কার ১৯৯৬ বিশ্বকাপজয়ী দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন এই ওপেনার। ২০০৫ সালে চতুর্থ ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডেতে ১০ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি। ওয়ানডে ক্রিকেটে তিনি সর্বকালের সেরা তারকাদের একজন। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও নিজের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের ছাপ রেখেছেন এই তারকা। আইপিএলের প্রথম আসরেই তিনি ছিলেন তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের যুগে টেস্ট আর ওয়ানডের জনপ্রিয়তা আগের চেয়ে বেশ কম বলা চলে। টেস্ট ক্রিকেটেও আগের সেই আমেজটা পাওয়া যায় না। সাবেক এই লঙ্কান তারকা বলছিলেন, ‘ক্রিকেট আসলে সারা বিশ্বব্যাপি এখন বেশ পরিবর্তন হয়েছে। মানুষের জন্যই ক্রিকেটে পরিবর্তন আনতে হয়েছে। টি-টোয়েন্টিতে মাত্র তিন ঘন্টায় দারুন উপভোগ করতে পারবেন আপনি। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) ক্রিকেটের জন্যও ভাল, ক্রিকেটারদের জন্যও ভাল। একদিনের ম্যাচের জনপ্রিয়তা সে হিসেবে কমে এসেছে।’
২২ গজে তিনি বরাবরই নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে এসেছে। বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছেন বারংবার। ২০০৩ সালে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ডের সাথে তিনি চুক্তিবদ্ধ হতেও অনীহা প্রকাশ করেন। এরপরই অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ান তিনি।
ক্যারিয়ারে এতদূর আসতে পারার পেছনে সবসময়ই পরিবার সহ কোচদের গুণকীর্তন গেয়েছেন মাতারা হারিকেন। এই লঙ্কান গ্রেট একবার বলেছিলেন, ‘আমার পরিবার, কোচ সবাই আমাকে বেশ সমর্থন করেছে। তাদের সমর্থন ছাড়া আমি এতদূর আসতে পারতাম না।’
সত্যিই তাই! সাধারণ এক জেলে পরিবারের ছেলের মাতারা হারিকেন হয়ে ওঠাটা সমর্থন ছাড়া সম্ভব নয়!