ওয়ানডেতে লামিছানে দ্রুততম

এই তো সেদিন, বিশ্রীরকম এক কাণ্ডের সাথে জড়িয়ে গিয়েছিলেন সন্দ্বীপ লামিছানে। তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারটা যেন মুহূর্তেই ধুলোয় মিশে যেতে উপক্রম। এমন এক পরিস্থিতি থেকে এখন তিনি ক্রিকেটের রেকর্ড বইয়ে। নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ তিনি রেখেছেন বিশ্ব ক্রিকেটের মঞ্চে।

সন্দ্বীপ লামিছানে, ক্যারিয়ারটা শুরু করেছিলেন একসমুদ্র সম্ভাবনা নিয়ে। আইসিসির সহযোগী দেশ নেপালের খেলোয়াড় তিনি। তাই হয়ত লাইমলাইট খানিকটা কম। তবে প্রতিভার আলো বেশ প্রখর। সে আলো দমিয়ে রাখা দায়। লামিছানের ক্ষেত্রেও ঘটেছে তাই।

তিনি নেপাল জাতীয় ক্রিকেট দলের হয়ে নিজের প্রতিভার সাক্ষর রাখতে থাকেন। লাইমলাইট পেতে খানিকটা বিলম্ব হল। তিনি ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের ঝলমলে দুনিয়াতে প্রবেশ করলেন। তবে আর আগে নেপালের জার্সি গায়ে সাদামাটা দলটাকে রাঙিয়ে দিলেন নিজের মত করে।

তাইতো আজ ওয়ানডেতে দ্রুততম সময়ে ১০০ উইকেট শিকারি বোলার তিনি। পেছনে ফেলেছেন রশিদ খান, মিচেল স্টার্কদের মত দুর্ধর্ষ বোলারদের। মাত্র ৪২ খানা ম্যাচেই উইকেটের শতক করে ফেলেছেন এই লেগ স্পিনার। নিকটে থাকা রশিদের খানের এই রেকর্ড গড়তে আরও দু’খানা ম্যাচ বেশি লেগেছে।

উইকেটের শতক করতে ওমানের বিপক্ষে একটি মাত্র উইকেটই প্রয়োজন ছিল লামিছানের। এদিন ব্যাট হাতে দূর্দান্ত পারফম করে গোটা নেপাল দল। বিশাল এক লক্ষ্যমাত্রা ছুড়ে দেয় ওমানের সামনে। আর সেই চাপ সামলে উঠার সুযোগটুকু যেন দিতে নারাজ ছিলেন নেপালের বোলাররা।

নিয়মিত বিরতিতে উইকেট তুলে নিতে থাকেন লামিছানে ও তার সতীর্থরা। লামিছানেকে নিজের শততম ওয়ানডে উইকেট পেতে অপেক্ষা করতে হয় প্রায় ১২ ওভার। তার শততম উইকেটে পরিণত হন ওমানের উইকেটরক্ষক ব্যাটার আদিল শফিক।

 

তাকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন লামিছানে। এতেই যেন রুপকথার নতুন পঙক্তিমালা যুক্ত করেন ডান তিনি। বনে ইতিহাসের অংশ। মাত্র ৪২ ম্যাচেই ১০০টি উইকেটের মালিক বনে যাওয়ার আনন্দটা নিশ্চয়ই শব্দের বেড়াজালে আটকে ফেলা যায় না।

অবশ্য লামিছানের এই আনন্দের স্রোতধারা চাইলেই বাঁধ দেওয়া যায়। তার নেওয়া অধিকাংশ উইকেট গুলোই সহযোগী দেশগুলোর বিরুদ্ধে। এমন এক ঠুনকো মানদণ্ডে ফেলে তার এই অর্জনকে খর্ব করা যেতেই পারে। তবে তা অনুচিত।

কেননা লামিছানের সক্ষমতা নিয়ে বাড়তি প্রশ্ন করা কিংবা সন্দেহ করবার অবকাশ নেই। নতুবা দেশ বিদেশের ফ্রাঞ্চাইজি টূর্নামেন্টগুলোতে তাকে ঘিরে আলোচনা হত না। একাদশের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যপদও তিনি লাভ করতেন না। ছোট্ট একটি দেশ নেপাল, সেই দেশের হয়েই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন লামিছানে।

তিনি হয়ত চাইলেই অন্য কোন এক দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে। বর্তমান ক্রিকেটের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি খুব বেশি কঠিনও হত না তার জন্যে। মানসম্মত লেগ স্পিনারদের কদর সর্বত্র। সেদিক বিবেচনায় অনায়াসে কোন এক মাঝারি মানের দলে নির্ঘাত জায়গা হয়ে যেত লামিছানের। তবে তিনি বেছে নিয়েছেন নিজের মাতৃভূমিকে।

মিচেল স্টার্কের মত ক্রিকেট সংস্কৃতিতে বেড়ে ওঠা এক দূর্ধর্ষ পেসারের ৫২ খানা ম্যাচ লেগেছে ১০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করতে। তাইতো লামিছানের এই কীর্তিকে মলিন করে দেখানোর বহু সুযোগ আসলেও, দিনের আলোর বর্ণিল রশ্মি হয়েই রয়ে যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link