বাংলাদেশ ক্রিকেটের পথচলা আজকের নয়, সেই ১৯৮৬ সালে ২২ গজে শুরু হয় বাংলাদেশ ক্রিকেটের পথচলা। আজ ২০১৯ সাল! এই সময়ের মধ্যে কতো ক্রিকেটার এসেছেন-গেছেন। কেউ নিজেদের প্রমাণ করেছেন, কেউ হতাশ করেছেন। এদের একজন ছিলেন আজহার হোসেন সান্টু। তবে সান্টু কোনো আক্ষেপের নাম নয়, এই নামটি বাংলাদেশের জন্য বয়ে এনেছিলো একটি নতুন ইতিহাস।
তবে! একটা দিক দিয়ে আক্ষেপ বলাই যায়, কেননা এই সান্টুর প্রতিভা নিয়ে কেউ কেনোদিন প্রশ্ন তোলেননি সেই সান্টু এতো দ্রুত হারিয়ে গিয়েছেলো কেনো? এটার উত্তর অজানা। অল্প সময়ে বাংলাদেশের হয়ে এমন কীর্তি গড়ে গেছেন যা অনন্তকাল মনে রাখবে ক্রিকেটপ্রেমীরা। কারণ এই সান্টু ছিলো বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম ওয়ানডে হাফ সেঞ্চুরিয়ান!
এই দিনটি ছিলো অনেক আগের, তখন বাংলাদেশ দলটিও ছিলো না তারকা সমৃদ্ধ। সেই উঠতি দলের সেরা ১১ জনের মাঝে তারকা বনে গিয়েছিলেন সান্টু। সময়টা ১৯৯০ সাল, শারজাতে প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিলো টিম বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে অন্য ব্যাটসম্যানদের যাওয়া-আসার মিছিলের মধ্যেও নজর কেড়েছিলো সান্টুর ব্যাটিং। খেলেছিলেন ১২৬ বলে ৫৪ রানের ইনিংস। যা তাকে নিয়ে গিয়েছিলো ইতিহাসের পাতায়।
এখানেই শেষ হয়নি সান্টুর ক্যারিয়ার, এই ম্যাচের পরেও কিছুদিন মাতিয়েছিলেন ক্রিকেটের ২২ গজ। ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর আগে লাল-সবুজের জার্সিতে ৭ ম্যাচে ৯৬ রানের পাশাপাশি নিয়েছিলেন ৪ উইকেট। যা দিনশেষে আক্ষেপে পরিণত হয়, কেনোনা সান্টু যদি ২২ গজ ছেড়ে না যেতেন তাহলে বাংলাদেশের সেরা পারফর্মারদের একজন হলেও হতে পারতেন!
এখানে শেষ হয়েছিলো সান্টুর ক্রিকেটীয় ক্যারিয়ার, তবে এই অল্প সময়ে তিনি স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন হাজারো তরুণদের। তাইতো নিজের ভাতিজাকে ২২ গজের জন্য তৈরি করতে থাকেন। সময়ের সাথে সাথে ভাতিজা ‘মেহরাব হোসেন অপি’ হয়ে ওঠেন পরিণত। চাচার মতো প্রথম হওয়ার ক্ষুধা তাকে তুখোড় করেছিলো, তাইতো তিনি হয়েছিলেন বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরিয়ান!
সময়টা ১৯৯৯ সালের ২৫ মার্চ। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মাঠে নেমে খেলেছিলেন তিন অংকের জাদুকরী ইনিংস। ১১৬ বলে ৯ চার ও ২ ছক্কায় সাজানো ১০১ রানের ইনিংসটি অপির ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিই নয়, আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্রিকেট বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম সেঞ্চুরি। এই একটি বীরত্ব গাঁথা ইনিংস তাকে ইতিহাসের পাতায় নিয়ে গিয়েছে। জায়গা করে নিয়েছিলেন কোটি ভক্তের হৃদয়ে।
দিনশেষে চাচা-ভাতিজা হয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রথম হাফ-সেঞ্চুরিয়ান এবং সেঞ্চুরিয়ান। হয়তো কোনো একদিন চাচা সান্টু মজার ছলে ভাতিজাকে বলবেন, ‘ভাতিজা আমরাই বাংলাদেশের প্রথম দুই হিরো!’