রিজওয়ান ও ব্যাটিং গড় নামের মিথ

টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি। ব্যাট হাতে সবচেয়ে বেশি ডেলিভারিও খেলেছেন তিনি। টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ তিনটি হাফ সেঞ্চুরি এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে। এই এশিয়া কাপের মাঝ পথেই তিনি টি-টোয়েন্টির ব্যাটিং র‌্যাংকিংয়ের চূড়ায় উঠেছেন। এটুকু শুনেই রায় দেওয়া যায় যে, পাকিস্তানকে এশিয়া মহাদেশের সর্বোচ্চ ক্রিকেট সম্মাননা এনে দিতে মোহাম্মদ রিজওয়ান চেষ্টার কোনো কমতি রাখেননি। কিন্তু, এই পরিসংখ্যানটাই আসলে বিরাট এক শুভঙ্করের ফাঁকি।

কারণ, তিন হাফ সেঞ্চুরিতে ২৮১ রান করা রিজওয়ানের ব্যাটিং গড় যতই ৫৬.২০ হোক না কেন, স্ট্রাইক রেট মোটে ১১৭.৫৭। মোদ্দা কথা হল, টি-টোয়েন্টির মেজাজটা ধরতে পারছেন না মোহাম্মদ রিজওয়ান। ২০ ওভারের ক্রিকেটে একজন ওপেনারের যেমন ধুমধাড়াক্কা  ব্যাটিং করা দরকার, সেটা এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার একদমই করতে পারছেন না। তিনি পরিস্থিতির দাবি, টি-টোয়েন্টির দাবি মেটাতে পারছেন না।

পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে এর ছোট ছোট খেসারত পাকিস্তানকে দিতে হয়েছে। ফাইনালে দিতে হল সবচেয়ে বড় খেসারত। হারতে হল ২৩ রানের বড় ব্যবধানে। মোহাম্মদ রিজওয়ান একা হাতে শ্রীলঙ্কাকে এশিয়া কাপের ট্রফিটা উপহার দিলেন। ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, ভানুকা রাজাপাকশে কিংবা প্রমোদ মাদুশান নয়, শ্রীলঙ্কার টার্নিং পয়েন্টই হলেন ওই রিজওয়ান।

অথচ, টস জিতে বোলিং নেওয়া বাবর আজমের দলের জন্য জয়ের মঞ্চটা তৈরিই ছিল। বিশেষ করে, এশিয়া কাপের এই আসরে, টস জেতা মানেই যে জয়টা অর্ধেক নিশ্চিত হয়ে যাওয়া, সেখানে বাকি অর্ধেক কাজটা ঠিকঠাক মত করতে পারেনি পাকিস্তান।

সেখানে ক্যাচ মিস, ফিল্ডিং মিসের সাথে বড় দায় ওই রিজওয়ানের। প্রতিপক্ষ যখন বোর্ডে ১৭০ রান জমা করে, তখন একজন ওপেনার কি করে ৪৯ বলে ৫৫ রানের ইনিংস খেলেন। ম্যাচটা তো সেখানেই শেষ। ভারতীয় ক্রিকেট বিশ্লেষক হার্শা ভোগলে যেমন টুইটারে বলেই দিলেন, ‘১৭০ রানের জবাবে আপনি কোনো ভাবেই টি-টোয়েন্টিতে ৪৯ বলে ৫৫ রান করতে পারেন না।’

ব্যাটিং গড় যাই হোক না কেন, সেটা নিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বড় কোনো প্রভাব রাখা যায় না। বিশেষ করে যতক্ষণ ব্যাটিং গড়টা দলের জয়ে প্রভাব না রাখছে ততক্ষণ সেটা অর্থহীন। রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেস খ্যাত শোয়েব আখতারও তেমনই মত দিলেন, ‘(মোহাম্মদ) রিজওয়ানের ব্যাটিং নিয়ে প্রশ্ন তোলাই যায়, কারণ তিনি ম্যাচগুলো শেষ করতে পারছেন না। তাঁর বলে বলে রান করার ইনিংসগুলোতে দলের কোনো উপকার তো হচ্ছেই না বরং ক্ষতি হচ্ছে।’

আসলে, রিজওয়ানের এই সমস্যা নতুন কিছু নয়। গোটা টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার জুড়েই স্ট্রাইক রেট ইস্যুতে তিনি সমস্যায় ভুগেছেন, সমালোচিত হয়েছেন। কমপক্ষে ২০টি টি-টোয়েন্টি ইনিংস খেলেছেন এমন ব্যাটারদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গড় রিজওয়ানের। তিনি টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার জুড়ে ৫১.১২ গড়ে ব্যাট করেছেন। তাঁর ওপরে আছেন কেবল বিরাট কোহলি। অথচ, রিজওয়ানের স্ট্রাইক রেট মাত্র ১২৭.০৭।

টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটিং গড় বিষয়টাতেই একটা বিরাট ফাঁকি আছে। এখানে গড় বেশি বলেই একজনকে টি-টোয়েন্টিতে মানানসই ব্যাটার বলে রায় দিয়ে দেওয়া যায় না। ম্যাচ পরিস্থিতি আর স্ট্রাইক রেট জানা ছাড়া শুধুমাত্র রান সংখ্যা ম্যাচে কারো অবদান তুলে ধরতে পারে না। ২০ ওভারের খেলা টি-টোয়েন্টি।

এখানে ছোট ছোট, কিন্তু কার্যকর ইনিংসগুলো ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। রিজওয়ান সেটা অনেকদিন ধরেই পারছেন না। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগেই অন্তত এই সত্যটা বুঝে ফেলা দরকার পাকিস্তান দলের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link