টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রায় অর্ধেকটা পথ পাড়ি দেওয়া শেষ। বৃষ্টির অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপকে ছাপিয়ে মাঠের লড়াইটা জমেছে বেশ। বিশেষ করে গ্রুপ-২ তে। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে একটা ধারণা করা হয়েছিল এই গ্রুপ নিয়ে।
সেমিফাইনালের লড়াইটা হবে মূলত তিন দলের মাঝে। বাকিরা কেবল ওই তিন দলের পথের কাটা। যা সহজে উপড়ে ফেলা যাবে। তবে না, তেমনটা আর হলো না। বরং পাশার দান উল্টো গেল। এখন সেমির দৌড়ে রয়েছে পাঁচ দল।
ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা সেই সাথে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপ শুরু হবার আগে এই ছিল নির্ধারিত গ্রুপ সদস্য। বাকি নেদারল্যান্ডস ও জিম্বাবুয়ে এসেছে প্রথম পর্বের বাঁধা অতিক্রম করে। তাইতো ভারত, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার মাঝেই হবার কথা ছিল মূল লড়াই। তবে দৃশ্যপটে, বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ে নিজেদেরকে এখনও টিকিয়ে রেখেছে।
গ্রুপ দুইয়ের প্রতিটা দলের তিনটি করে ম্যাচ ইতোমধ্যেই শেষ। ফলাফল নিশ্চিত কেবল নেদারল্যান্ডসের। তিনটি ম্যাচের তিনটিতে হেরে ইতোমধ্যেই বাড়ির টিকিট কেটে ফেলেছে নেদারল্যান্ডস। তাঁরা কেবল এখন অপেক্ষায় কোন এক অঘটন ঘটিয়ে দেবার। তেমনটা না করতে পারলে শূন্য হাতেই বাড়ি ফিরতে হবে ডাচদের।
অন্যদিকে এবারের বিশ্বকাপে দারুণ ছন্দে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। জিম্বাবুয়ের সাথে প্রথম ম্যাচটা তাদের ভেসে গেছে বৃষ্টির জলে। দ্বিতীয় ম্যাচ বাংলাদেশকে নিয়ে ছেলেখেলা করেছে প্রোটিয়ারা।
আর নিজেদের তৃতীয় ম্যাচটায় ভারতের বিপক্ষে শ্বাসরুদ্ধকর এক জয় নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ অবস্থানটা নিজেদের দখলে রেখেছেন টেম্বা বাভুমার দল। গ্রুপ- ২ থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার সেমিফাইনাল খেলবার সম্ভাবনা প্রবল। তাদের পরবর্তী ম্যাচ নেদারল্যান্ডস ও পাকিস্তানের বিপক্ষে।
নেদারল্যান্ডসের হারাবার কিছু নেই। অন্যদিকে পাকিস্তানকে নিজেদের সবগুলো ম্যাচ জিততে হবে। এই দুই দলের কেউই হয়ত ছেড়ে কথা বলবে না। তবে সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনায় অনায়াসে জয় পেয়ে যাবার কথা প্রোটিয়াদের। আর তাছাড়া সমীকরণের তো কোন অন্ত নেই। দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং-বোলিং দুই ইউনিটই রয়েছে দুর্দান্ত ফর্মে। সুতরাং তাদেরকে এগিয়ে রাখতেই হচ্ছে।
এরপরের অবস্থানেই রয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত। দুই দলের পয়েন্ট সমান চার। বাংলাদেশ জিম্বাবুয়ে আর নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে পেয়েছে জয়। ভারতের ক্ষেত্রে জয়টা এসেছে পাকিস্তান ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। দুই দলই হেরেছে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে।
আর এই দুই দলই মুখোমুখি হবে নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে। বলাই যায় সেই ম্যাচের বিজয়ী দলই সেমিফাইনাল দৌড়ে এগিয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে অবশ্য ভারতের পাল্লাটাই সবচেয়ে ভারি। ভারতের বিপক্ষে বলার মত তেমন পারফরমেন্স বাংলাদেশের নেই বললেই চলে।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মঞ্চে ভারতকে কখনোই হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। তবে সম্ভাবনার কোন অন্ত নেই। চমক হয়ত দেখিয়ে দিতে পারে সাকিব বাহিনী। তবে সেই ম্যাচ জিতলেও বাংলাদেশের স্বস্তির তেমন সুযোগ নেই।
রানরেটের হিসেবে বেশ খানিকটা পিছিয়ে রয়েছে টাইগাররা। তাছাড়া তাদের শেষ ম্যাচ পাকিস্তানের বিপক্ষে। দলটার বিপক্ষেও বাংলাদেশের পরিসংখ্যান খুব একটা সুখকর বার্তা দেয় না। অপরদিকে ভারতের প্রতিপক্ষ পক্ষান্তরে সহজ, জিম্বাবুয়ে। তবে জিম্বাবুয়ে বাংলাদেশকে বেশ ভুগিয়েছে, পাকিস্তানকে হারিয়ে দিয়েছে বিশ্বকাপের আসরে। তাদেরকে একেবারেই হেলা করতে চাইবে না ভারত।
এরপরের অবস্থানে জিম্বাবুয়ে ও পাকিস্তান। দুই দলই এক ম্যাচ করে জিতেছে। জিম্বাবুয়ের একটি ম্যাচ ভারতের বিপক্ষে, সে ম্যাচে লড়াই করাটা বেশ কঠিনই হবে সিকান্দার রাজাদের। তাছাড়া পরবর্তী ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জয় পাওয়ার দাবিদার জিম্বাবুয়ে। তাদের পক্ষে সাম্প্রতিক পারফরমেন্স কথা বলে। সবচেয়ে নড়বড়ে পরিস্থিতিতে রয়েছে পাকিস্তান।
শিরোপা প্রত্যাশী দল হয়েও পাকিস্তানকে এখন অপেক্ষা করতে হচ্ছে অন্য দলগুলোর উপর। তাছাড়া তাদের পরবর্তী ম্যাচ জিততেই হবে সেমিফাইনালের পথটা সংকীর্ণ হলেও খুলে রাখার জন্যে। কিন্তু তাদের বাঁধা দিতে অপেক্ষামান এই টুর্নামেন্টের অন্যতম ধারাবাহিক দল দক্ষিণ আফ্রিকা। তাছাড়া সেমিফাইনালের গন্ধ পাওয়া বাংলাদেশও নিশ্চয়ই ছেড়ে কথা বলবে না। চিরপ্রতিদ্বন্দী ভারতের কাছে হার দিয়ে শুরু।
চমকে দিয়েছে তাদের জিম্বাবুয়ে। একটিমাত্র জয় এসেছে নেদারল্যান্ডসসের বিপক্ষে। সেখানেও ব্যাটিং দূর্বলতা স্পষ্ট। তবুও শেষ অবধি লড়াই করতে চাইবে পাকিস্তান। কিন্তু শেষমেশ কতদূর এগোতে পারবে তাঁরা তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। প্রোটিয়াদের শক্ত বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে নাজেহাল হবার সম্ভাবনাই বেশি পাকিস্তানের।
গ্রুপ-২ এর লড়াইটা জমজমাট। অধিকাংশ ম্যাচ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও এখনও নিশ্চিত নয় সেমিফাইনালের কোন দল। এমন পরিস্থিতি নিশ্চয়ই টুর্নামেন্টের উত্তেজনা বাড়ায়। অন্তত বৃষ্টি বাগড়া না দিলে এই গ্রুপের মাঠের ক্রিকেট বিনোদনের সম্পূর্ণ খোরাক মেটাবে তা নিয়ে সন্দেহের বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই।
উত্তেজনায় ঠাসা এই গ্রুপ থেকে কোন দুই দল শেষ অবধি সেমিফাইনালের টিকিট কাটে সেটাই এখন দেখবার পালা।