‘প্রায়’ অবসরপ্রাপ্ত

হয়েও হল না শেষ। না,  হুমায়ূন আহমেনের ছোট গল্পের কথা বলছি না। বলছি ক্রিস্টোফর হেনরি গেইলের কথা। ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ খেলে ফেলেও তিনি ‘অবসরপ্রাপ্ত’ নন পুরোপুরি।

প্যাট কামিন্সের বলে ছক্কার হাঁকানোর পরের বলেই বোল্ড ক্রিস গেইল। ৯ বলে ১৫ রানের ইনিংস শেষে প্যাভিলিয়নের পথে তখন ক্যারিবিয়ান এই তারকা। ডাগ আউট থেকে সতীর্থরা তখন দাঁড়িয়ে অভ্যর্থনা দিচ্ছেন। চোখে সানগ্লাস, একহাতে হেলমেট আর আরেক হাতে ব্যাট উচিয়ে গেইল জানান দিলেন বিদায় বার্তার।

কমেন্ট্রি বক্স থেকে ইয়ান বিশপের কণ্ঠ ভেসে আসলো, ‘এটাই হয়তো ওয়েস্ট ইন্ডিজের জার্সিতে গেইলকে শেষবার দেখা!’ তাহলে কি ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে দিলেন প্রায় ২২ বছর বিশ্বক্রিকেট শাসন করা এই ক্যারিবিয়ান দানব? নাকি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজের শেষ ম্যাচ সেটি জানান দিলেন!

ম্যাচশেষে নিশ্চিত করলেন না এখনো ক্রিকেটকে তিনি বিদায় জানাননি। তবে বিশ্বকাপে নিজের শেষ ম্যাচ খেলে ফেলেছেন এটা গেইল নিজেও জানতেন। এমন ভরাডুবি আর হতাশাজনক পারফরম্যান্সের পর দলে টিকে থাকা যেখানে দায় সেখানে আরেকটি বিশ্বকাপ খেলা যেনো স্রেফ আকাশ কুসুম কল্পনা। তবে নামটা যে ক্রিস গেইল! তিনি যে সবই পারেন।

জানালেন ইচ্ছে থাকলেও হয়তো আরেকটি বিশ্বকাপে সুযোগ পাবেন না তিনি। তবে ঘরের মাটি জ্যামাইকায় একটি ম্যাচ পেলে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিদায় জানাবেন ক্রিকেটকে। গেইল জানান, ‘আমি আজকে মজা করেছি। আমি সমর্থকদের সাথে দেখা করেছি এবং মহা করেছি কারণ এটা হতে পারে আমার শেষ বিশ্বকাপ ম্যাচ। আমি আরো একটি বিশ্বকাপ খেলতে চাইবো কিন্তু আমার মনে হয় না তারা আমাকে আর নিবে। অসাধারণ একটা ক্যারিয়ার ছিলো। আমি এখনো অফিসিয়ালি অবসরের ঘোষণা দেইনি। আমি আমার হোম গ্রাউন্ড থেকে বিদায় নিতে চাই, যদি তারা আমাকে সেই সুযোগ করে দেয়। তাহলে আমি সমর্থকদের বলতে পারবো – ধন্যবাদ সবাইকে!’

তিনি আরো বলেন, ‘দেখা যাক কি হয়। যদি সুযোগ না পাই তাহলে আমি ঘোষণা দিয়ে দিবো। আমি ব্রাভোর সাথে অবসরের তালিকায় যুক্ত হবো এবং সবাইকে ধন্যবাদ জানাবো।’

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের শেষ ম্যাচে ৯ বলে ১৫ রান করেন গেইল। ম্যাচ থেকে ছিটকে যাওয়ার পর একদম অন্তিম মূহুর্তে মিশেল মার্শের উইকেট নিয়ে উল্লাসে মেতে উঠেন গেইল। উদযাপন করেন মার্শের উপর ঝাপিয়ে পড়েই! মার্শও হাসিমুখে মেনে নিলেন গেইলের খুনসুটি।

১৯৯৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জার্সিতে অভিষেক। দুই বিশ্বকাপ জয়ে দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন গেইল। ৭৯ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ২৮ গড়ে ১৩৭ স্ট্রাইক রেটে করেছেন প্রায় ১৯০০ রান। আছে ২ সেঞ্চুরি ও ১৪ ফিফটি! এই ফরম্যাটে মেরেছেন সর্বোচ্চ ১০৪৫ টি ছক্কা! বল হাতেও আছে ২০ উইকেট। পুরো টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে ৪৪৫ ম্যাচে ২২ সেঞ্চুরিতে করেছেন ১৪ হাজারেরও বেশি রান!

২০১৩ সালে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে ৬৬ বলে ১৭৫ রানের রেকর্ড গড়া ইনিংস খেলেন তিনি। ২০১৪ সালের পর আর সাদা পোশাকে দেখা যায়নি এই ক্যারিবিয়ান তারকাকে। সবশেষ ওয়ানডে খেলেছিলেন ২০১৯ বিশ্বকাপে। ১০৩ টেস্টে ৭ হাজারের বেশি ও ৩০১ ওয়ানডেতে ১০ হাজারেরও বেশি রান করেছেন এই কিংবদন্তি তারকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link