আফ্রিদির কামড় কৌশল!

অস্ট্রেলিয়ার শিরিষ কাগজের কথা ভুলে যান, শাহিবজাদা মোহাম্মদ শহীদ খান আফ্রিদি রীতিমত বলের ওপর কামড় বসিয়ে দিয়েছিলেন। সেটাও আবার অধিনায়ক থাকা অবস্থাতে।

এমনিতেই, বল টেম্পারিংকে একটা সময়ে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা। আর সেখানে হুট করেই যেন নতুন শিল্পীর আগমন ঘটে। আর সেই শিল্পী হলেন বুম বুম খ্যাত শহীদ আফ্রিদি।

২০০৯-১০ মৌসুমের ঘটনা। পার্থে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের শেষ ওয়ানডে ম্যাচ। আফ্রিদি দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন, মোহাম্মদ ইউসুফের অবর্তমানে। পাকিস্তান প্রথম চারটা ওয়ানডে হেরে গিয়েছিল বেশ খানিকটা ব্যাকফুটে। ম্যাচ বাঁচানোর জন্য আফ্রিদি ঘৃণ্য এক কৌশলের আশ্রয় নেন।

সেদিন ছিল ৩১ জানুয়ারি। পার্থের মাঠের সেদিনকার ঘটনা বেশ সাড়া ফেলেছিল। ফিল্ডিং করতে গিয়ে আফ্রিদি বল ধরে সোজা কামড় বসিয়ে দেন, একবার নয় – কয়েকবার ঘটে সেই ঘটনা। উদ্দেশ্যটা পরিস্কার, বলের আকৃতি পাল্টে ফেলে স্যুুইং আদায়ের চেষ্টা।

সেই দৃশ্য তখন সরাসরি দেখা গিয়েছিল টেলিভিশনে। টেলিভিশন রিপ্লে দেখে বিষয়টা নিশ্চিত হওয়া যায়। মাঠের দায়িত্বরত আম্পায়ারকে ঘটনাটা জানান টেলিভিশন আম্পায়ার।

আম্পায়াররা মাঠেই কথা বলেন আফ্রিদির সাথে। পরে তখনই বলটা পাল্টে ফেলা হয়। পাকিস্তান ম্যাচটা হারে দুই উইকেটে। সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়। এখানেই শেষ নয়। পার্থের এই কাণ্ডের পর আফ্রিদিকে দুই টি-টোয়েন্টি ম্যাচের নিষেধাজ্ঞাও দেওয়া হয়।

দলের কোচ তখন ইন্তিখাব আলম। তিনি সাফ দায়ী করেন আফ্রিদিকে, ‘এটা মেনে নেওয়া যায় না। এটা কোনো ভাবেই কাম্য নয়। যা হয়েছে সেটা আর ফিরিয়ে নেওয়া যাবে না। ওর (শহীদ আফ্রিদি) জন্য আমি দু:খ বোধ করতে পারি, এর বেশি কিছু নয়। দলের অধিনায়ক হিসেবে তাঁর এসব কিছুর ঊর্ধ্বে থাকা উচিৎ, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে ও এটা করে ফেলেছে।

সিরিজ শেষে অনুসন্ধান চালানো হয়, এতে দলের আর কেউ জড়িত কিনা। সেই অনুসন্ধানে অবশ্য আফ্রিদি ছাড়া আর কারো দায় খুঁজে পাওয়া যায়নি। শোনা যায়, এই ঘটনার পর সতীর্থদের সাথে আফ্রিদির কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়েছিল।

ঘটনার পর অবশ্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চান আফ্রিদি। পাকিস্তানের একটা টেলিভিশন চ্যানেলে এসে বলেন, ‘এটা আমার করা উচিৎ হয়নি। কিভাবে যেন এটা হয়ে গেছে। আমি বোলারদের সাহায্য করতে চেয়েছিলাম। ম্যাচটা জিততে চেয়েছিলাম, একটা মাত্র ম্যাচ।’

তবে, আফ্রিদি এটাও দাবি করেছিলেন যে, বিশ্বজুড়ে কম বেশি সব দলই বল টেম্পারিং করে থাকে। তিনি বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে এমন কোনো দল নেই যারা বল টেম্পারিং করেন। হ্যাঁ, আমার কৌশলটা ভুল ছিল। আমি এর জন্য লজ্জিত, অনুতপ্ত। এটা করা উচিৎ হয়নি। আমি শুধু জিততে চেয়েছিলাম, শুধু জেতার কৌশলটা ভুল ছিল।’

এর ঠিক আগের বছরই পাকিস্তানকে এক হাতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতিয়েছিলেন আফ্রিদি। তবে, এক বছরের কম সময়ের ব্যবধানে তিনি হিরো থেকে জিরো বনে যান।

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link