২০১৯ বিশ্বকাপের ঠিক আগ মুহূর্তে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং বাংলাদেশ আয়ারল্যান্ড সফর করে স্বাগতিকদের সাথে ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজ খেলার জন্য। পাঁচ মে ডাবলিনে স্বাগতিকদের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচে দুই উইন্ডিজ ওপেনার শাই হোপ আর জন ক্যাম্পবেল গড়েন ৩৬৫ রানের জুটি, যা কিনা ওপেনিং জুটিতে ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বোচ্চ।
ডাবলিনের ক্লিনটার্ফ ক্রিকেট ক্লাব মাঠে নতুন বলের সুবিধা কাজে লাগাতে টস জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন আইরিশ অধিনায়ক উইলিয়াম পোর্টারফিল্ড। তাঁর সিদ্ধান্ত যে এমনভাবে বুমেরাং হয়ে ফিরে আসবে সেটা হয়তো তিনি ঘুণাক্ষরেও কল্পনা করেননি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ভালো শুরু দেবার প্রত্যাশায় ওপেনিং করতে নামেন শাই হোপ আর জন ক্যাম্পবেল। জন ক্যাম্পবেলের ছিল ক্যারিয়ারের কেবল ষষ্ঠ ম্যাচ, আগের পাঁচ ম্যাচে বলার মতো তেমন কিছুই করতে পারেননি। আউট হয়ে গিয়েছিলেন শুরুতেই।
এই সিরিজেও খেলতে এসেছিলেন ক্রিস গেইলের ব্যাকআপ হিসেবে। তাদের শুরুটা ছিল নড়বড়ে! প্রথম বলেই রান আউটের হাত থেকে বেঁচে যান ক্যাম্পবেল। শুরুর ১০ ওভারে দলীয় সংগ্রহ ছিল মাত্র ৩৭! এরপরেই ক্যাম্পবেল হাত খুলে মারতে শুরু করেন।
অন্যদিকে, শাই হোপ বরাবরেই মতোই ধীরেসুস্থে ইনিংস বড় করার দিকে মন দেন। যদিও প্রথমে ফিফটিতে পৌঁছান হোপ-ই। বিশতম ওভারে জর্জ ডকরেলের বলে চার মেরে ৬৫ বলে ফিফটি করেন তিনি। পরের ওভারেই ফিফটিতে পৌঁছে যান ক্যাম্পবেলও।
ফিফটির পরে হাত খুলে মারতে শুরু করেন দুজনে। ৩৫তম ওভারে পিটার মুরতাঘকে চার মেরে সেঞ্চুরি তুলে নেন হোপ। পরের ওভারের প্রথম বলেই নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেন ক্যাম্পবেলও। সেঞ্চুরির পর দুজনেই হয়ে ওঠেন আরো বিধ্বংসী।
আইরিশ বোলারদের নাকের জল-চোখের জল এক করে বল পাঠাতে থাকেন সীমানার ওপারে। শুরুর ৩০ ওভারে দলীয় সংগ্রহ ছিল ১৮৫, সেখান থেকে পরবর্তী ১৭ ওভারে নেন ১৮০! সর্বকালের সর্বোচ্চ রানের পার্টনারশিপ থেকে কেবলমাত্র সাত রান দূরে থাকতে ক্যাম্পবেল আউট হলে ভেঙে যায় এই মহাকাব্যিক জুটি। একদিনের ক্রিকেটে যেকোনো উইকেটে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড ক্রিস গেইল ও মারলন স্যামুয়েলসের দখলে। ২০১৫ বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩৭২ রানের জুটি গড়েন এই দুই জন।
৪৮ ওভারের প্রথম বলে ব্যারি ম্যাকার্থির বলে পোর্টারফিল্ডের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন ক্যাম্পবেল। আউট হওয়ার আগে ১৫টি চার আর ছয়টি ছয়ের সাহায্যে ১৩৭ বলে করেন ১৭৯ রান। ওই ওভারেরই পঞ্চম বলে টাকারের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হবার আগে শাই হোপ করেন ১৫২ বলে ১৭০ রান।
এই ইনিংস খেলার পথে তিনি মারেন ২২টি চার এবং দুটি ছয়ের মার। এদিন আয়ারল্যান্ডের সব বোলারদেরই বেধড়ক পেটান এই দুই ব্যাটসম্যান। সবচেয়ে বেশি ঝড় গিয়েছিল বোধহয় মার্ক আডায়ারের উপর দিয়ে।এই বোলারের ১০ ওভার থেকেই তোলেন ৮৪ রান।
তাদের এই জুটির উপর ভর করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সংগ্রহ করে ৩৮১ রান। ৩৮২ রান তাড়া করতে নেমে আয়ারল্যান্ড কখনোই ম্যাচ জয়ের কক্ষপথে ছিল না। ৩৪.৪ ওভারেই ১৮৫ রানে শেষ হয় আয়ারল্যান্ডের ইনিংস। অ্যাশলে নার্স ও শ্যানন গ্যাব্রিয়েল যথাক্রমে চারটি ও তিনটি উইকেট নেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচ জিতে নেয় ১৯৬ রানে।
ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে এই ম্যাচ মনে থাকবে শাই হোপ আর জন ক্যাম্পবেলের ম্যাচ হিসেবে।