সাকিবের পাঁচে পাঁচ

এই পাঁচ ম্যাচের প্রথমটি ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত হওয়া সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে কার্ডিফে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। পরের তিনটি ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং আফগানিস্তানের বিপক্ষে। আর সর্বশেষটি গতকাল চলমান টি-টোয়েন্ট বিশ্বকাপের কোয়ালিফায়ার রাউন্ডে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ওমানের বিপক্ষে।

ক্রিকেট দুনিয়ার যে প্রান্তেই বাংলাদেশ লড়াই করুক না কেন সেখানেই চাতক পাখির মতো চেয়ে থাকেন সমর্থকরা; স্বপ্ন বুনেন বিজয় উল্লাসের। আর সেই স্বপ্ন দেখতে গিয়ে একটু আলাদা করেই নজরে রাখেন দলের সেরা তারকা সাকিব আল হাসানকে। বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডারও তাদের হতাশ করেন খুব কমই।

বড় মঞ্চেও সাকিব যেন অনন্য। বৈশ্বিক আসরে বাংলাদেশ সর্বশেষ যে পাঁচটি ম্যাচ জিতেছে তাঁর সব গুলোরই ম্যাচ সেরা ছিলেন সাকিব। অর্থাৎ, ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) ইভেন্টে বাংলাদেশের জেতা সর্বশেষ পাঁচ ম্যাচেই জয়ের নায়ক ছিলেন এই অলরাউন্ডার।

এই পাঁচ ম্যাচের প্রথমটি ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত হওয়া সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে কার্ডিফে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। পরের তিনটি ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং আফগানিস্তানের বিপক্ষে। আর সর্বশেষটি গতকাল চলমান টি-টোয়েন্ট বিশ্বকাপের কোয়ালিফায়ার রাউন্ডে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ওমানের বিপক্ষে। দেখে নেওয়া যাক কেমন ছিল এই পাঁচ ম্যাচে সাকিবের পারফরম্যন্স

  • প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড (আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০১৭)

২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ উইকেটে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের দেওয়া ২৬৮ রান তাড়া করতে নেমে মাত্র ৩৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকেই ছিটকেই গিয়েছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকেই পঞ্চম উইকেটে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে ২২৪ রানের জুটি গড়েন সাকিব।

অনবদ্য সেঞ্চুরি করে ১১৫ বলে ১১৪ রানের দারুণ ইনিংস খেলে মাঠ ছাড়েন সাকিব। তিনি যখন আউট হন জয় থেকে তখন মাত্র ১২ রান দূরে ছিল বাংলাদেশ, হাতে ছিল ২১ বল। এই ম্যাচে সেঞ্চুরি করে অপরাজিত ছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও। এই ম্যাচে বল হাতে ১০ ওভারে ৫২ রান দিয়ে উইকেট শূন্য ছিলেন সাকিব। ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হন তিনিই।

  • প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা (বিশ্বকাপ ২০১৯)

২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। সাকিবের ৮৪ বলে ৭৫ রান, মুশফিকুর রহিমের ৮০ বলে ৭৮ রান ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ৩৩ বলে ৪৬ রানে ভর করে ৩৩০ রানের বড় পুঁজি পেয়েছিল বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে তখন এটিই ছিল বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ।

বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশের বোলারদের দারুণ বোলিংয়ে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ৩০৯ রান সংগ্রহ করে ২১ রানে ম্যাচ হারে দক্ষিণ আফ্রিকা। বল হাতে বিপজ্জনক হয়ে ওঠা এইডেন মার্করামকে ফিরিয়ে দেন সাকিব। ১০ ওভারে ৫০ রান দিয়ে এক উইকেট শিকারের পাশাপাশি একটি ক্যাচও নেন এই অলরাউন্ডার। এই ম্যাচেও ম্যাচ সেরার পুরুস্কার ওঠে সাকিবের হাতেই।

  • প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ (বিশ্বকাপ ২০১৯)

২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে প্রথমে ব্যাট করে বাংলাদেশকে ৩২২ রানের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বল হাতে ৮ ওভারে ৫৪ রান দিয়ে দুই উইকেট পেয়েছিলেন সাকিব। এর আগে এতো রান তাড়া করে কখনোই জয় পায়নি বাংলাদেশ। তাই শুরু থেকেই চাপে ছিল বাংলাদেশ।

চাপ থাকলেও বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে সাকিবের অনবদ্য সেঞ্চুরিতে সহজেই জয় নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। ৯৯ বলে ১২৪ রান করে অপরাজিত ছিলেন এই অলরাউন্ডার। এই ম্যাচে লিটন দাসও অপরাজিত ছিলেন ৬৯ বলে ৯৪ রান করে। বিশ্বকাপে টানা দ্বিতীয় বারের মত ম্যাচ সেরা হন সাকিব।

  • আফগানিস্তান (বিশ্বকাপ ২০১৯)

২০১৯ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ তৃতীয় জয় পেয়েছিল আফগানিস্তানের বিপক্ষে। তৃতীয় জয়েও ম্যাচ সেরা ছিলেন সাকিব। এই ম্যাচে মুশফিকের ৮৭ বলে ৮৩ রান ও সাকিবের ৬৯ বলে ৫১ রানে ভর করে ২৬২ রান সংগ্রহ করেছিল বাংলাদেশ।

রান তাড়া করতে নেমে আফগানিস্তান উড়ন্ত সূচনা পেলেও সাকিবের ঘূর্ণিতে বিধ্বস্ত হয়ে ২০০ রানে অলআউট হয়ে ৬২ রানের বড় ব্যবধানে হারে আফগানরা। বল হাতে ১০ ওভারে মাত্র ২৯ রান দিয়ে ৫ উইকেট শিকার করেন সাকিব। যেটি ওয়ানডেতে এখনো সাকিবের ক্যারিয়ার সেরা বোলিং।

  • প্রতিপক্ষ ওমান (২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ)

আইসিসির ইভেন্টে সাকিব সর্বশেষ ম্যাচ সেরা হয়েছেন গতকাল ওমানের সাথে। চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কোয়ালিফায়ার রাউন্ডে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ওমানের বিপক্ষে ১৭ রানের জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। বাঁচা মরার এই লড়াইয়ে সাকিবের ২৯ বলে ৪২ ও নাঈম শেখের ৫০ বলে ৬৪ রানে ভর করে ১৫৩ রানের পুঁজি পেয়েছিল বাংলাদেশ।

রান তাড়া করতে নেমে ওমান এক পর্যায়ে জয়ের পথে থাকলেও বাংলাদেশের বোলারদের দারুণ বোলিংয়ে শেষ পর্যন্ত হেরে যায়। ৪ ওভারে ২৮ রান দিয়ে ৩ উইকেট শিকার করেন সাকিব। ওমানের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক যতিন্দর সিংকেও ফিরিয়ে দেন এই অলরাউন্ডার।

এছাড়া বল হাতে দুর্দান্ত ছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান, মেহেদী হাসান ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। এই জয়ের ফলেই এবারের বিশ্বকাপের মূল ওঠার সম্ভবনা এখনো বেঁচে আছে বাংলাদেশের। এখন গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে জয় পেলেই সুপার টুয়েলভ প্রায় নিশ্চিত হয়ে যাবে বাংলাদেশের।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...