আরেক ব্রিটিশ স্বপ্ন

ডেথ ওভারে মিলসের দারুণ সব ভেরিয়েশন অবশ্যই ইংল্যান্ডের কাজে লাগবে। এছাড়া আদিল রশিদকে সাহায্য করার জন্য ভালো কোনো স্পিনারের অভাব কিন্তু আমিরশাহীর কন্ডিশনে বিপদে ফেলতে পারে ইংল্যান্ডকে। অলরাউন্ডার মঈন আলী ও লিয়াম লিভিংস্টোনকে বল হাতে সেজন্য আরো বেশি দায়িত্ব নিতে হতে পারে। যেখানে প্রতিদিন দলে দুই বা তার বেশি সংখ্যায় স্বীকৃত স্পিনার থাকছেন সেখানে ইংল্যান্ডে রশিদ ছাড়া স্বীকৃত স্পিনার না থাকাটা একপ্রকার অদ্ভুতই।

ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে বছর এগারো আগে যখন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসর বসেছিল তখন খুব কম মানুষই ভেবেছিলেন সেবার কাপ নিয়ে যেতে পারে ইংলিশরা, কিন্তু সত্যিই সবাইকে অবাক করে দিয়ে আহামরি কিছু দল না নিয়েও কাপ লন্ডনে নিয়ে গিয়েছিলো পল কলিংউডয়ের ইংল্যান্ড।

আর বছর পাঁচেক আগে ইডেনের ফাইনালে শেষ ওভারটা শুরুর আগে খুব কম মানুষই ভেবেছিলেন ওই সময় হারতে পারে ইংল্যান্ড, কিন্তু সেখান থেকে সবাইকে অবাক করে ব্রিটিশদের কাপ জয়ের স্বপ্ন চুরমার হয়ে গিয়েছিলো বেন স্টোকসের বল হাতে চারটে টানা ছক্কা খেয়ে।

পাঁচ বছর পরে আরো একটা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, মাঝে প্রথমবার একদিনের ক্রিকেটে বিশ্বসেরা হওয়ার তাজ উঠে গেছে ইয়ন মর্গ্যানের ইংল্যান্ডের মাথায়, কুড়ি বিশের ফরম্যাটেও কী রাজত্ব শুরু করবেন ব্রিটিশরা, নাকি ব্রিটিশ স্বপ্ন শেষ মুহূর্তে গিয়ে টেমস নদীর জলে ভাসবে, যেমন পাঁচ বছর আগে গঙ্গা নদীর পাড়ে!

গত কয়েক বছর ধরেই সবচেয়ে ছোট ফরম্যাটে দারুণ ভাবে ধারাবাহিক মরগ্যানের দল গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর নিজেদের খেলা ৫০ ম্যাচে জয় পেয়েছে ৩০টা ম্যাচে। আর টি-টোয়েন্টি বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে নম্বর দল হিসেবে খেলতে নামা ইংল্যান্ড মরু দেশে প্রত্যাশার চাপ সামলে কেমন ধারাবাহিকতা দেখাতে পারে সেদিকে নজর থাকবে গোটা ক্রিকেট বিশ্বের।

  • শক্তিমত্তা

ইয়ন মর্গ্যানের ইংল্যান্ড দলের মূল শক্তি তাঁদের পাওয়ার প্যাক্ড ব্যাটিং লাইন আপ। ওপেনিং এ জেসন রয়, জনি বেয়ারস্টো জুটি থেকে শুরু করে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বিশ্বের এক নম্বর ব্যাটসম্যান ডেভিড মালান, বা অধিনায়ক মর্গ্যান, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ৪২ বলে দুর্ধর্ষ সেঞ্চুরি করা নতুন তারকা লিয়াম লিভিংস্টোন বা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের অন্যতম সেরা উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান জশ বাটলার ব্যাটিং লাইনআপে থাকায় বিশ্বের যেকোনো বোলিং শক্তির বিরুদ্ধে বড় রান করার ক্ষমতা রাখেন যেকোনো কন্ডিশনে।

গত কয়েক বছরে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে নিজের ব্যাটিংকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন বর্তমানে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে র‌্যাংকিংয়ে বিশ্বের এক নম্বর ব্যাটসম্যান মালান। জো রুটের মতো ক্লাসিকাল ব্যাটসম্যান ও ইংল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি দলে সুযোগ পাননা, এতটাই গভীরতা ইংলিশ ব্যাটিং লাইনআপের। এরকম ব্যাটিং দিয়ে নিয়মিত বড় স্কোর করা বা বড় রান তাড়া করা ইংল্যান্ডের কাছে আশা করাই যায়।

এছাড়া বোলিং ব্রিগেডে ক্রিস জর্ডানের ডেথ ওভার বোলিং বা সাদা বলের ক্রিকেটে অন্যতম সেরা লেগ স্পিনার আদিল রশিদের ওপরও অনেকটাই নির্ভর করবে ইংল্যান্ড। এছাড়া বর্তমান সময়ে সাদা বলের ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের ধারাবাহিকতা ও একটা নির্দিষ্ট সেট আপ তাঁদের সাফল্যের ক্ষেত্রে বড় সহযোগী হতে চলেছে।

  • দুর্বলতা

গত বারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালের শেষ ওভারে চার ছক্কা হজম করে যিনি ইংল্যান্ডের ট্রফি স্বপ্ন চুরমার করে দিয়েছিলেন সেই বেন স্টোকস এবারের বিশ্বকাপে খেলছেন না মানসিক অবসাদ সংক্রান্ত সমস্যায়। মাঝের এই পাঁচ বছরে টেমস নদী দিয়ে যেমন অনেক জল গড়িয়ে গিয়েছে, তেমনই স্টোকস ও নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার হিসেবে, প্রায় একার হাতে ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনাল জিতিয়ে শাপমোচন করেছেন।

সেই স্টোকস এর এবারের বিশ্বকাপে না থাকার শূন্যতা সহজে হয়তো পূরণ হবে না। স্যাম কুরান বা ক্রিস ওকসকে দিয়ে ইংল্যান্ড হয়তো স্টোকসের অভাব পূরণ করার চেষ্টা করবে। অন্যদিকে ওয়ান ডে বিশ্বকাপ জেতানোর আরেক কারিগর ইংল্যান্ডের অন্যতম প্রধান স্ট্রাইক বোলার জোফরা আর্চার ও চোটের জন্য নেই, তাঁর বদলে দীর্ঘদিন বাদে দলে ফিরেছেন বাঁহাতি পেসার টাইমল মিলস।

তবে ডেথ ওভারে মিলসের দারুণ সব ভেরিয়েশন অবশ্যই ইংল্যান্ডের কাজে লাগবে। এছাড়া আদিল রশিদকে সাহায্য করার জন্য ভালো কোনো স্পিনারের অভাব কিন্তু আমিরশাহীর কন্ডিশনে বিপদে ফেলতে পারে ইংল্যান্ডকে। অলরাউন্ডার মঈন আলী ও লিয়াম লিভিংস্টোনকে বল হাতে সেজন্য আরো বেশি দায়িত্ব নিতে হতে পারে। যেখানে প্রতিদিন দলে দুই বা তার বেশি সংখ্যায় স্বীকৃত স্পিনার থাকছেন সেখানে ইংল্যান্ডে রশিদ ছাড়া স্বীকৃত স্পিনার না থাকাটা একপ্রকার অদ্ভুতই।

  • ইংল্যান্ড দল ও তাঁদের সম্ভাবনা

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে বাটলার ও বেয়ারস্টোর মতো উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান থাকার পরেও স্যাম বিলিংসকে দলে নেওয়ার যৌক্তিকতা ঠিক বোঝা যায় না, ঠিক তেমনই রহস্য থেকে যায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বল হাতে চোখ টানা নবাগত লেগস্পিনার ম্যাট পার্কিনসনের দলে না থাকা। আদিল রশিদের পাশে অতিরিক্ত স্পিনার হিসেবে পার্কিনসন কিংবা বাঁ-হাতি স্পিনার লিয়াম ডওসন (যদিও তিনি রিজার্ভ এ আছেন) মূল দলে থাকলে ইংল্যান্ড ব্রিগেড আরো বেশি ব্যালান্সড হতো।

মঈন আলী ও লিভিংস্টোন বিশ্বকাপে কেমন করেন বিশ্বকাপে সেদিকে অবশ্যই নজর থাকবে। এমনিতে এই বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড ‘গ্ৰুপ অফ ডেথে’ আছে বলা যায়। এখান থেকে অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ বা দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলের চ্যালেঞ্জ সামলাতে হবে ইংল্যান্ডকে সেমিফাইনালে যেতে গেলে।

এই তিন ম্যাচে বিশেষত কেমন পারফরমেন্স করে মর্গ্যান ব্রিগেড তার ওপরেই নির্ভর করবে তাঁদের কাপ স্বপ্ন। তবে যথেষ্ট ধারাবাহিক ও দারুণ সব ক্রিকেটারে ঠাসা ইংল্যান্ড অন্তত সেমিফাইনালে যেতেই পারে, নিজেদের সেরা খেলা মরু দেশে প্রদর্শন করলে।

  • ইংল্যান্ড স্কোয়াড

ইয়ন মরগ্যান (অধিনায়ক), জেসন রয়, জশ বাটলার, ডেভিড মালান, জনি বেয়ারস্টো, মার্ক উড, মঈন আলী, টম কুরান, ডেভিড উইলি, আদিল রশিদ, টাইমল মিলস, ক্রিস ওকস, স্যাম বিলিংস, লিয়াম লিভিংস্টোন, ক্রিস জর্ডান।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...