সাকিবই সেই চরিত্র

এই ধরুণ মাস দেড়েক সময়। এর মধ্যে বাংলাদেশ ক্রিকেট ওলট-পালট হয়ে গেল। বাকিরা যখন বিশ্বকাপের নীলনকশা তৈরিতে ব্যস্ত সেই সময়ে বাংলাদেশ যেন নেতাহীন এক সৈন্যদল। যুদ্ধে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে সবাই। কিন্তু যুদ্ধের ময়দানের নেতৃত্ব দেওয়ার ছিল না কেউ।

অবশেষে, সেই সমস্যার সমাধান হল। সাকিব আল হাসানের হাতে তুলে দেওয়া হল দায়িত্ব। বিশ্বজয়ের নেশায় বুদ হয়ে থাকা একটা প্লাটুন পেলো যোগ্যতম নেতা। এখন হয়ত ধীরে ধীরে বাংলাদেশ দল নিজেদের গুছিয়ে নিতে শুরু করবে। এখন হয়ত তড়িঘড়ি করে হলেও একটা স্পষ্ট নীলনকশা তৈরি করে ফেলা যাবে।

দল নিয়ে কত কাহিনী। কে থাকবেন, কে থাকবেন না, সেসব স্থিরই করতে পারছিলেন না নির্বাচকরা। অধিনায়ক ঠিক কাদেরকে নিয়ে যাবেন লড়াইয়ে, তা নির্ধারণের গুরুদায়িত্ব যে থাকে অধিনায়কের উপর। এতদিন তো বাংলাদেশের সেই অধিনায়কই ছিলেন না। যাক তবে এবার হাফ ছেড়ে বাঁচা যাবে।

অবশ্য একটু দেরী করে বিসিবি ঘোষণা দিল। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ তো আগেভাগেই সাকিবকে অধিনায়ক হিসেবে মেনেই নিয়েছে। না নেওয়ার অবশ্য কোন উপায় তো নেই। সাকিবের মত ক্রিকেটীয় মস্তিষ্ক তো কালেভদ্রে একটি করে তৈরি হয়। বাংলাদেশের ক্রিকেটে আবার কবে এমন একজন আসবে, সেটা বলাও তো মুশকিল।

সে যাই হোক। কেবল মস্তিষ্কের কারণেই যে সাকিবকে বেছে নিয়েছেন জনগন। তা কিন্তু নয়। সাকিবের নেতৃত্ব গুণও সর্বজন সমাদ্রিত। ক্রিকেট খেলার বয়সটা তার এখন প্রায় শেষের দিকে। তবে এই সময়েও মাঠে তার সরব উপস্থিতি চোখে লেগে থাকে। প্রতিটা বলেই নিজের ক্রিকেট জ্ঞানের ব্যবহারটা তিনি মাঠে বসেই করতে জানেন।

তাছাড়া বিশ্বজয়ের স্বপ্ন দেখা একটা দলকে নেতৃত্ব দিতে একজন ‘বোল্ড’ চরিত্র দরকার। সাকিবের মত চরিত্র ঠিক আর কত জনেরই বা আছে। সাকিব মাঠে ও মাঠের বাইরে দলের প্রতিটা খেলোয়াড়কে যেমন আগলে রাখেন। তেমনি মিডিয়ার তীর্যক কথাও বেশ অবলীলায় সামলে নিতে জানেন। তিনি যেন অধিনায়কত্বের গুণাবলি নিয়েই বেড়ে উঠেছেন।

এতো গেল নেতৃত্বের কথা। একজন খেলোয়াড় হিসেবে সাকিবের জুড়ি মেলা ভার। সে কথা নতুন করে আর বলার কি আছে! ব্যাটে-বলে সমানতালে সাকিব উজ্জ্বল। বিশ্বের বাঘা-বাঘা সব খেলোয়াড়দের সাথে লড়াই চালিয়ে গেছেন। দীর্ঘ সময় ধরে নিজের দখলেই রেখেছেন এক নম্বর স্থান। যেখানে বয়স বাড়ার সাথে সাথেই অস্ত্রপচার টেবিলে চলে যায় বাকিদের পারফরমেন্স।

সেখানে সাকিব দিব্যি চমকে দেন সবাইকে। বিনোদনের খোরাক মেটাতে যেন তিনি ওস্তাদ। যখন যে রোলে দলকে তার প্রয়োজন তিনি তখনই সেই রোলে হাজির হন। বল হাতে উইকেট তুলে দেন। প্রতিপক্ষকে ভীষণ চাপে রেখে ইকোনমিকাল বোলিং করেন। ব্যাট হাতে ইনিংস বিল্ডআপ থেকে শুরু করে কার্য্যকর ক্যামিও খেলা সবটাই তো সাকিবের আয়ত্ত্ব করা।

ঠিক এমন একজনই প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের। মেধা আর নিজের দক্ষতা দিয়ে যে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবে দলকে। অন্তত তাকে আড়াল করতে ঢাল হতে হবে না অন্য কারো। সাকিব অবশ্য আড়াল হতে চাননা। তিনি সর্বদাই থাকতে চান আলোচনায়, থাকতে চান ভক্তদের মণিকোঠায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link