সাকিব, দ্য গ্রেটেস্ট এভার

সাকিব কেন আন্ডাররেটেড থাকবেন? হ্যাঁ, যুক্তি হতে পারে সাকিব কখনও বিশ্বকাপ জিততে পারেননি। হ্যাঁ, পারেননি - তবে সাকিব এক ২০১৯ বিশ্বকাপের ব্যাটে-বলে যা করেছেনম, সেটা একজন অলরাউন্ডারের আজন্ম স্বপ্ন। সাকিবকে বোধ করি তাই সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার বললে কেউ রাগ করবেন না!

একবার বলেছিলেন, যেদিন বুঝবেন দলের জন্য শতভাগ দিতে পারছেন না – সেদিনই বিদায় বলে দিবেন। এমন দিন বাংলাদেশ ক্রিকেটে কেউই দেখতে চাননি। অপয়া সেই দিনটি ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪। ক্রিকেটের অন্তত দু’টি ফরম্যাট থেকে বিদায় বলে দিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা তারকা।

শুধুই কি বাংলাদেশ? চাইলেই তাকে সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার বলা যায়। তাকে সর্বকালের সেরা বাঙালি ক্রিকেটারও বলা যায়। পরিসংখ্যানের মাপকাঠিতে তিনি ছাড়িয়ে গেছেন অনেক রথী মহারথীদেরও।

৭০ টেস্ট, ২৪২ টা উইকেট, চার হাজার ছয়শো রান – টেস্টের আঙিনায় এই হল সাকিবের পারফরম্যান্স। টেস্টের সেরা স্পিনিং অলরাউন্ডার হিসেবে যদি গ্যারি সোবার্সের নাম আসে, তাহলে এটুকু বলা যায়, সাকিবের চেয়ে তাঁর উইকেট সংখ্যা কম, ২৩ টি টেস্ট বেশি খেলে। সোবার্স রান করেছিলেন হাজার দু’য়েক বেশি।

কিন্তু, সোবার্সকে কখনওই ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টির চাপ নিতে হয়নি। খেলার ধরণে বা অ্যাডাপ্টিবিলিটি পাল্টানোর দরকার পড়েনি। তাহলে, সাকিবকে কেন সোবার্সের চেয়ে এগিয়ে রাখা হবে না?

হয়তো কেউ কেউ একালের বেন স্টোকসকেও এগিয়ে রাখবেন। স্টোকস সাড়ে ছয় হাজার রান করেছেন টেস্টে, উইকেট নিয়েছেন ২০০’র ওপর। কিন্তু, স্টোকস তো টেস্টে খেলেছেন ১০৫ টি। মানে সাকিবের চেয়ে ৩৫ টা টেস্ট বেশি। তাহলে, সাকিবের চেয়ে স্টোকসকেই বা কোন যুক্তিতে এগিয়ে রাখা হবে?

সাকিবের সাথে এরপর তুলনা আসতে পারে কপিল দেব, ইমরান খান, স্যার রিচার্ড হ্যাডলি কিংবা ইয়ান বোথামের। আশির দশকের সেরা চার অলরাউন্ডার। প্রত্যেকেই দলের অন্যতম সেরা পেসার ছিলেন। এরা মুড়ি মুড়কির মত উইকেট নিয়েছেন। এক কপিল দেবেরই টেস্ট উইকেট সংখ্যাই ৪৩৪ টি, হ্যাডলির ৪৩১ টি। ইমরান-বোথামের ৪০০’ নিচে হলেও সাকিবের নাগালের বাইরে।

রানের দিক থেকে কেবল কপিল দেবই আছেন সাকিবের ওপরে। কিন্তু, টেস্টের সংখ্যায়? কপিল দেব ১৩১ টা টেস্ট খেলে সাকিবের চেয়ে সামান্য কিছু রান বেশি করেছেন। সাকিবের চেয়ে অন্যদিকে, ইমরান খান, বোথাম ও হ্যাডলি যথাক্রমে ১৮, ৩২ ও ১৬ টেস্ট বেশি খেলেও রান করেছেন কম।

মোদ্দা কথা হল, কপিল, বোথাম বা হ্যাডলি – কেউই পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে ব্যাটিং আর বোলিং দুই বিভাগেই একটানা পারফর্ম করে যেতে পারেননি, যেটা পেরেছেন সাকিব। এই চারজনের মধ্যে সাকিবের কাছাকাছি ব্যাটিং গড়ে পৌঁছাতে পেরেছেন কেবল ইমরান খান। সাকিবের টেস্ট ব্যাটিং গড় ৩৮.৩৩, আর ইমরানের ৩৭.৬৯। আর ওয়ানডেতে সকল পরিসংখ্যানেই এই চারজনের চেয়ে সাকিব হাজার গুণে এগিয়ে।

ওয়ানডের পরিসংখ্যানে আবার চোখ কপালে উঠবে। সাকিবের রান এই চারজনের যে কারো চেয়ে বেশি। সাড়ে সাত হাজারের ওপরে রান তাঁর। সেটা তাঁর বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগও আছে। অন্যদিকে, উইকেট সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিনশো । আশির দশকের ওই চারজনের কেউ সাকিবের ধারের কাছেও নেই। ব্যাটিং গড় অবধারিত ভাবে সাকিবেরই বেশি। কাছাকাছি কেবল আছেন ইমরান খান।

একই সময়ে সাকিবকে টি-টোয়েন্টিও খেলতে হয়েছে। সেখানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আড়াই হাজারের ওপর রান আর ১৪৯ টি উইকেট সাকিবের। সব রকম টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট আনলে সাকিবের অলরাউন্ডারশিপ নিয়ে রীতিমত মহাকাব্য হতে পারে। বাকিদের হয়তো কোনো এক ফরম্যাটের সেরা বলাই যায়, কিন্তু যখন তিন ফরম্যাট মেলানো হবে – তখন সাকিবকে অবধারিত ভাবেই শীর্ষস্থানে রাখতে হবে।

এখানেও পরিসংখ্যানের আশ্রয় নেওয়া যায়। দীর্ঘ সময় সব ফরম্যাটের র‌্যাংকিংয়ে সেরা অলরাউন্ডার ছিলেন সাকিব। এই রেকর্ড বিশ্বের ইতিহাসে আর কারোই নেই।

হ্যাঁ, সাকিবের সাথে তুলনা চলতে পারে জ্যাক ক্যালিসের। এক ফরম্যাটে ১৩ হাজার, আরেক ফরম্যাটে ১১ হাজারের ওপর রান তিনি। সব মিলিয়ে উইকেটে তিনি আর সাকিব একই তালিকাতেই থাকবেন। কিন্তু, পুরোটা ক্যারিয়ার জুড়ে একটানা সব ভূমিকায় পারফর্ম করতে পারেননি ক্যালিস। র‌্যাংকিংয়েই সেই প্রমাণ পাওয়া যায়।

তাহলে, সাকিব কেন আন্ডাররেটেড থাকবেন? হ্যাঁ, যুক্তি হতে পারে সাকিব কখনও বিশ্বকাপ জিততে পারেননি। হ্যাঁ, পারেননি – তবে সাকিব এক ২০১৯ বিশ্বকাপের ব্যাটে-বলে যা করেছেনম, সেটা একজন অলরাউন্ডারের আজন্ম স্বপ্ন। সাকিবকে বোধ করি তাই সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার বললে কেউ রাগ করবেন না!

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Share via
Copy link