বেটউইনারের কাজ হয়ে গেছে। সাকিব আল হাসানকে বেটউইনার নিউজের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর বানিয়ে তারা বেটউইনারের প্রচার চেয়েছিল। যে প্রচার তারা পেয়ে গেছে, আর কিছুর দরকার নাই। তাদের ব্যবসা এখন ‘চ্যালচ্যালাইয়া’ চলবে।
সাকিব আল হাসানেরও কাজ হয়ে গিয়েছে বলেই মনে হয়। কোম্পানি তুমুল প্রচার পেয়ে গিয়েছে। শেষ পর্যন্ত সাকিবের চুক্তি থাকুক বা না থাকুক, অর্থযোগ সাকিবের যথেষ্টই হওয়ার কথা।
শুধু বাংলাদেশ ক্রিকেটের কাজে কিছু লাগছে না। মাঠের ক্রিকেটে যাচ্ছেতাই অবস্থা, মাঠের বাইরে লারেলাপ্পা। এখন এশিয়া কাপের মতো একটা আসরের দল ঘোষণা নিয়ে ছ্যাড়াবেড়া অবস্থা।
বছরের পর বছর ধরে যে অপেশাদারীত্বের চর্চা করে আসছে বিসিবি, নানা অনিয়মের যে স্তুপ গড়েছে, সেটাই আজকে তাদের এই অবস্থায় ঠেলে দিয়েছে।
এই যেমন ধরুন, বেটিং সাইটের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সাকিবের চুক্তি নিয়ে তারা পড়ে আছেন। কিন্তু তার আগেও তো সাকিবের আরেকটা দায় আছে। বিসিবির নিয়ম অনুযায়ী, যে কোনো কোম্পানি-প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করলেই সেটি বোর্ডকে জানাতে হয়, অনুমতি নিতে হয়, এমনকি চুক্তিপত্র বোর্ডে জমা দিতে হয়। সাকিব এক্ষেত্রে তা করেননি। বিসিবি সভাপতি নিজেই তা বলেছেন।
সাকিব কেন এই চুক্তির কথা বোর্ডকে জানাননি, এটা তো বোধগম্যই। বেটিং-ফেটিং বাদ দিয়ে স্রেফ এখানেই সাকিবের কাছে জবাবদিহি চাইতে পারে বোর্ড। কিন্তু বেটিং সাইটের ইস্যু এত গুরুতর যে প্রথম ইস্যুই চাপা পড়ে গেছে।
কিংবা ধরুন, সাকিব চুক্তি থকে সরে এলো। তার পর? দুটি নিয়ম যে তিনি ভঙ্গ করলেন, কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে? চান্স খুব একটা দেখি না। তিনি সরে এলেও বিসিবি তৃপ্তির ঢেকুর তুলবে হয়তো।
যাই হোক, বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানের কথা ও অবস্থানের সঙ্গে একমত হওয়ার সুযোগ খুব একটা হয় না। তবে আজকে তিনি যা বলেছেন এবং বোর্ডের যা অবস্থান, তা প্রশংসনীয়।
বোর্ড সভাপতি বা সাকিব বা আপনি-আমি দেশের বাইরে গিয়ে সেই দেশের আইনে যা বৈধ, তা করতেই পারি। ক্যাসিনো খেলতে পারি, বাজি ধরতে পারি। ক্রিকেটাররা বা বোর্ডের কেউ দেশের বাইরে ক্যাসিনো খেললে বা ‘ভাত খেতে’ ক্যাসিনোতে গেলে সমস্যা দেখি না, যদি ওই দেশের আইনে বৈধ থাকে। আইসিসি ইভেন্টে বেটিং সাইট স্পন্সর হলেও সেটা গ্রহণযোগ্য, কারণ সেটা আইসিসির পলিসির ব্যাপার।
কিন্তু এই দেশে তো দেশের আইন মানতে হবে। ‘অমুক-তমুক এটা করে না, ওটা করে না’, এসব তো যুক্তি হতে পারে না। কোনো আইন ভঙ্গ করা মানে ভঙ্গ করাই। তেমনি বোর্ডের সব শর্ত মেনে চুক্তিতে সই করার পর বোর্ডের নীতিমালাও মানতে হবে। এটা সিম্পলেরও সিম্পল।
সাকিব বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার। বিজ্ঞাপনের বাজারেও তার চাহিদার শেষ নেই। একটার পর একটা লেগেই আছে। তার কেন বেটউইনার নিউজ আঁকড়ে ধরে রাখতেই হবে? টাকার অঙ্কটা অনেক বড় বটে (যদিও ১০ কোটির প্রচার থাকলেও আদতে এত নয় বলে জানতে পেরেছি), তবে সেই অঙ্ক তিনি অন্য কিছু স্পন্সরশিপ থেকেও আয় করতে পারেন।
এখনও যারা বেটউইনার নিউজকে স্রেফ নিউজ পোর্টাল মনে করছেন, তাদের জন্য বোর্ড সভাপতির কথা পরিষ্কার, ‘আমাদের কাছে কোনো সন্দেহ নেই যে এটা সারোগেট ব্র্যান্ড, একই ওরা। একেক নামে একেকটা দিচ্ছে, কিন্তু মূলত একটি বেটিং কোম্পানি, যারা গ্যাম্বলিং, ক্যাসিনো, এগুলো নিয়ে জড়িত। আমাদের ক্লিয়ার কাট বলা আছে, কিসের কিসের সঙ্গে সম্পর্ক থাকতে পারবে না। এই কোম্পানিটির তো সম্পর্ক আছে! আপনি বলতে পারেন, বেটউইনার নিউজ একটা নিউজ ওয়েবসাইট। কিন্তু বেটউইনারের তো বেটিং আছে, গ্যাম্বলিং আছে, সবই আছে। এটার তো অংশ। আমরা তো বলেছি এরকম সম্পর্কই থাকতে পারবে না। আমরা নিজেদের ভাবনায় পরিষ্কার। আলোচনারই কিছু নেই। এখন তাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে দেশের ক্রিকেটে থাকবে নাকি বেটিংয়ে থাকবে।’
বোর্ড সভাপতি যেটি বলেছেন, সেটিই মূল কথা। এখানে আলোচনারই সুযোগ নেই।
– ফেসবুক থেকে