সাকিব-ক্যালিস, অতুলনীয় এক দ্বৈরথ

সাকিব নাকি জ্যাক ক্যালিস? শ্রেষ্ঠত্বের মানদণ্ডে এই প্রশ্ন অমূলকই বটে। সাকিব আল হাসান যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রেখেছেন, ততদিনে জ্যাক ক্যালিস কাটিয়ে ফেলেছেন প্রায় এক দশক। সমসাময়িক ক্রিকেটার না হওয়ায় তাই এ দুজনের মধ্যে তুলনাটা ঠিক যায় না। 

সাকিব নাকি জ্যাক ক্যালিস? শ্রেষ্ঠত্বের মানদণ্ডে এই প্রশ্ন অমূলকই বটে। সাকিব আল হাসান যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট পা রেখেছেন, ততদিনে জ্যাক ক্যালিস কাটিয়ে ফেলেছেন প্রায় এক দশক। সমসাময়িক ক্রিকেটার না হওয়ায় তাই এ দুজনের মধ্যে তুলনাটা ঠিক যায় না।

তবে রেকর্ডে, কীর্তিতে কিংবদন্তিদের ছাপিয়ে যাওয়াটাও কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। টেস্ট অলরাউন্ডারের শীর্ষস্থানটা নিয়ে কেউ যে জ্যাক ক্যালিসকে সরাতে পারেন—একসময় এই চিন্তাটাই কারো মাথায় আসতো না। কীভাবেই বা আসবে? টেস্ট অলরাউন্ডারের শীর্ষস্থানটা জ্যাক ক্যালিস অক্ষুণ্ণ রেখেছিলেন প্রায় এক দশক ধরে।

সেই ক্যালিসকে সরিয়ে শীর্ষে উঠে সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন সাকিব। ২০১০ এর পর প্রায় দুই বছর সাকিব-ক্যালিস দ্বৈরথের স্বাক্ষী হয়েছে বিশ্ব ক্রিকেট।কখনো সাকিব, কখনো বা ক্যালিস।

জ্যাক ক্যালিস আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছেড়েছেন প্রায় এক দশক হতে চলল। এ সময়কালে সাকিব কি তাঁকে পুরোপুরি ছাপিয়ে যেতে পেরেছেন? বোলার জ্যাক ক্যালিসকে ছাপিয়ে গিয়েছেন ঠিকই। তবে ব্যাটার জ্যাক ক্যালিসকে ছাপিয়ে যাওয়া এখন পর্যন্ত অসম্ভবের নামান্তর সাকিবের জন্য। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ক্যারিয়ারে ২৫ হাজারের বেশি রান করেছেন জ্যাক ক্যালিস। সেখানে সাকিব এখন পর্যন্ত পেরিয়েছেন ১৪ হাজার রানের মাইল ফলক।

বিশ্বকাপে অবশ্য ব্যাটিং, বোলিং- দুই বিভাগেই জ্যাক ক্যালিসকে টপকে গিয়েছেন সাকিব। এখন পর্যন্ত বৈশ্বিক এ আসরে ৩২ ম্যাচে সাকিব রান করেছেন ১২০১। সেখানে জ্যাক ক্যালিস ৫ বিশ্বকাপ মিলিয়ে করেছেন ১১৪৮ রান। উইকেট প্রাপ্তির দিক দিয়ে অবশ্য ২০১৫ বিশ্বকাপেই ক্যালিসকে টপকে গিয়েছিলেন সাকিব। এখন পর্যন্ত তাঁর ঝুলিতে আছে ৩৯ উইকেট। আর জ্যাক ক্যালিস নিয়েছেন ২১ টি উইকেট।

তবে বিশ্ব আসরে সাকিব এগিয়ে থাকলেও বেশ কটি জায়গায় জ্যাক ক্যালিস রয়েছেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। ওয়ানডে আর টেস্ট দুই ফরম্যাটের ১০ হাজারের অধিক রান রয়েছে তাঁর। টেস্ট ক্রিকেটে এখন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ব্যাটার হচ্ছেন এই প্রোটিয়া ক্রিকেটার। এ ছাড়া টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ বার ম্যাচ সেরা হওয়ার রেকর্ডও তাঁর। ১৬৬ টেস্টের ক্যারিয়ারে তিনি ম্যাচ সেরা হয়েছেন ২৩ বার। আর ৬৬ ম্যাচের ক্যারিয়ারে সাকিব ম্যাচ সেরা হয়েছেন ৬ বার।

সাকিব আর ক্যালিস, কারোর ভাগ্যেই জোটেনি বিশ্বকাপ শিরোপা। তবে ক্যালিসের ঝুলিতে রয়েছে একটি বৈশ্বিক শিরোপা। ১৯৯৮ আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। আর সে টুর্নামেন্টে টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার গিয়েছিল ক্যালিসের হাতে।

অবশ্য ক্যালিসের এমন অর্জনে শ্রেষ্ঠত্বের দিক দিয়েও একটুও আড়াল হচ্ছেন না সাকিব। তিনিই ইতিহাসের একমাত্র ক্রিকেটার যিনি একই সময়ে তিন ফরম্যাটের অলরাউন্ডারদের র‍্যাংকিংয়ে শীর্ষে ছিলেন। ক্যালিস টেস্ট র‍্যাংকিংয়ে রাজত্ব দেখিয়েছেন এক দশক। তবে সাকিব আবার ওয়ানডে ক্রিকেটে দাপট দেখিয়ে যাচ্ছেন ১৪ বছর ধরে।

অবশ্য ব্যক্তিগত অর্জনের স্বীকৃতি প্রাপ্তির দিক দিয়ে আবার ক্যালিসই কিছুটা এগিয়ে থাকছেন। ২০০৫ সালে আইসিসির সেরা ক্রিকেটার ও সেরা টেস্ট ক্রিকেটার, দুটো পুরস্কারই পেয়েছিলেন ক্যালিস। তবে এখন পর্যন্ত ক্যারিয়ারে কখনোই আইসিসির সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কারটা পাওয়া হয়ে ওঠেনি সাকিবের। উইজডেন বর্ষসেরা হয়েছেন, বেশ ক’বার বর্ষসেরা দলে সুযোগ পেয়েছেন, কিন্তু আইসিসির বর্ষসেরার পুরস্কারটা এখন পর্যন্ত অপ্রাপ্তির খাতাতেই থেকে গিয়েছে সাকিবের।

অলরাউন্ডার হিসেবে সাকিব আর ক্যালিস, দুই জন দুই ঘরানার। ক্যালিস পেস বোলিং অলরাউন্ডার, আর সাকিব স্পিনিং অলরাউন্ডার। তাছাড়া, একজন ডান হাতি, অন্যজন বাঁ-হাতি। সব মিলিয়ে অলরাউন্ডার পরিচয়ে দুজনকে এক সূত্রে মেলালেও আদৌতে তাঁরা দুজন দুই ধরন কিংবা ভিন্ন সময়ের ক্রিকেটার। শ্রেষ্ঠত্বের মানদণ্ডে স্বাভাবিক ভাবেই তাই চূড়ান্ত রায় আসে না।

তবে অলরাউন্ডার হিসেবে জ্যাক ক্যালিসকে নিয়ে আলোচনাটা যেন কিছুটা কমই হয়। তাঁর ব্যাটিং সত্ত্বা যতটা সামনে আসে, ঠিক সেভাবে আলোচনার টেবিলে উঠে আসে না তাঁর পেস বোলিং সত্ত্বা। অথচ তাঁর নামের পাশে রয়েছে, ৫৭৭ টা উইকেট।

সাকিব নিজেও অবশ্য একবার জানিয়েছিলেন, ক্যালিসকে নিয়ে যতটা আলোচনা হওয়া উচিৎ ততটা ঠিক হয় না। জাতীয় এক গণমাধ্যমে ক্যালিসকে নিয়ে এক কলামে তিনি লিখেছিলেন, ‘জ্যাক ক্যালিসের জন্ম যদি ভারতে হতো, শচীন টেন্ডুলকারের মতোই মাতামাতি হতো তাঁকে নিয়ে। ক্যালিসের দুর্ভাগ্য তিনি ভারতে জন্মাননি।’

অবশ্য সেটি না হলেও জ্যাক ক্যালিস যেভাবে রাজসিক বিদায় নিয়েছেন, তা খুব কম ক্রিকেটারের ভাগ্যেই জোটে। ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টে সেঞ্চুরি করেছিলেন। তার আগে অবসরের ঘোষণা দিয়ে টেস্ট সেঞ্চুরি রেকর্ড অস্ট্রেলিয়ার গ্রেগ চ্যাপেলের। তাও আবার সেটি হয়েছিল সেই ১৯৮৪ সালে।

সব মিলিয়ে ক্যালিসের মতো ধ্রুপদী টেস্ট খেলোয়াড় আর আসবে কিনা তা এখন পর্যন্ত ভাবনার মধ্যেই বন্দী থাকছে। তবুও সাকিবের মতো কিংবদন্তির পথে হাঁটা অলরাউন্ডাররা নিশ্চয় জ্যাক ক্যালিসকে মানদণ্ড ধরেই এগিয়ে যাবেন। হয়তো তাঁকে ছাপিয়ে যেতেও চোখ রাখবেন অন্তর্দৃষ্টিতে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...