খোলসবন্দী সাকিবের অজানা রূপ

রানের খোঁজে থাকা সাকিব রান পেয়েছেন। পেরিয়েছেন চল্লিশ। তবে সেই রান আদৌ দলের কতটা কাজে আসলো? প্রশ্নবাণে বাংলাদেশের ইনিংসকে যেমন জর্জরিত করা যায়, ঠিক তেমনি সাকিবের খোলসবন্দি ব্যাটিংকেও দাঁড় করানো যায় সমালোচনার কাঠগড়ায়।

এবারের বিশ্বকাপে আগের ৫ ম্যাচের ৪ টিতেই সাকিব আউট হয়েছেন শর্ট বলে। এমন পরিসংখ্যান যখন চোখ রাঙানি দিচ্ছে, ঠিক তখনই হারিসের শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে মিডউইকেটে ক্যাচ তোলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ৫০ থেকে ৭ রান দূরেই থামে সাকিবের ইনিংস।

অথচ আগের ওভারেই ইফতিখারকে টানা ৩ চার মেরে খোলস ছেড়ে নিজেকে একটু একটু করে গুছিয়ে নেওয়ার পথে হাঁটছিলেন। বাংলাদেশের ইনিংসকে লড়াই করার মতো একটা পুঁজিতে পৌছে দেওয়ার জন্য তখন সাকিবকে নিতে হতো গুরু দায়িত্ব। কিন্তু ম্যাচ পরিস্থিতি বিবেচনায়, সবচেয়ে বাজে সময়ে আউট হলেন সাকিব। এরপর মাত্র ১৯ রানই যোগ হয়েছে দলের খাতায়। ২০৪ রানে গুঁটিয়ে যায় বাংলাদেশ।

চলতি বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে সময়টা একদম ভাল যাচ্ছে না সাকিবের। পাকিস্তান ম্যাচের আগে ৫ ইনিংসে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছিল মাত্র ৬১ রান। বৈশ্বিক আসরে দলের অধিনায়কের যখন এমন ব্যাটিং ভগ্নদশা ফুটে ওঠে, তখন চারদিক থেকে সমালোচনার স্রোত বইবেই। দলগত ব্যর্থতাসহ নিজের ব্যাটিং ব্যর্থতায় তাই সাকিবও পতিত হয়েছিলেন আলোচনা, সমালোচনার ডুব সাতারে।

তবে সমালোচনা যখন ঘিরে ধরে, সাকিবকে তখনই দেখা যায় সেরা রূপে। এমনটাই হয়ে আসছে সাকিবের ১৭ বছরের ক্যারিয়ারের সিংহভাগ সময়ে। কিন্তু এবারের হচ্ছে তাঁর উল্টোটা। পাকিস্তানের বিপক্ষে ইডেনে লিটন দাস আউট হয়ে ফিরে গেলে উইকেটে এসেছিলেন সাকিব।  শুরুতে রয়েশয়ে ব্যাটিং শুরু করেছিলেন। ব্যাটিংয়ে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হচ্ছিল, বিশ্বকাপে রানখরা সাকিবের আত্মবিশ্বাসেও একটা ধাক্কা দিয়েছে।

আর সেই ধাক্কা যে সাকিব যে কাটিয়ে উঠতে পারেননি, তা আরো স্পষ্ট হয় সাকিবের খোলসবন্দী ব্যাটিংয়ে। নিজের খেলা পঞ্চাশ বল পর্যন্ত সাকিবের স্ট্রাইকরেট ছিল পঞ্চাশেরও নিচে। আর তাঁর মাশুলও গুণতে হয় দলকে ১১ থেকে ২০ ওভারের মাঝে বাংলাদেশ দল যেখানে তুলেছিল ৫৯ রান, সেখানে সাকিব ব্যাটিংয়ে আসার পর ২১ থেকে ৩০ ওভারের মাঝে বাংলাদেশের ইনিংসে যুক্ত হয় মাত্র ৩২ রান।

সাকিব স্ট্রাইক রোটেট করতে পটু। বাংলাদেশ ক্রিকেট এ কথা যেন সর্বজনসীকৃত। সেই সাকিব কিনা এ ম্যাচে স্ট্রাইক বদলাতেও হিমশিম খাচ্ছিলেন। তবে সাকিব নিজের খোলস ছেড়েছিলেন একবার। আক্রমণাত্বক হয়ে উঠেছিলেন ইফতিখারের করা নবম ওভারে। টানা ৩ বলে ৩ চার মেরে ব্যাট হাতে আগ্রাসী রূপে ফেরার আভাস দিচ্ছিলেন। তবে সেই আভাস দিনশেষে বাস্তব হয়ে ধরা দেয়নি। আক্রমণাত্বক হয়ে ওঠা সাকিব এরপরের ওভারেই পরাস্ত হন হারিস রউফের করা শর্ট বলে।

বাংলাদেশ ক্রিকেটে দূর্যোগের দিনে সাকিব বরাবরই রক্ষাকবচ। তবে এবারের যাত্রায় সাকিব বোধহয় আর পেরে উঠছেন। পুরো বিশ্বকাপ জুড়েই আঁকছেন হতাশার প্রতিচ্ছবি। ২০১৯ বিশ্বকাপের সাকিব ২০২৩-এ এসে যেন ধরা দিচ্ছে বিবর্ণ সাকিব রূপে। এমন বিবর্ণ সাকিবে যেন আরো মলিন বাংলাদেশ। বাংলাদেশের এই হতাশার যাত্রার শেষ কোথায়, তার উত্তর বোধহয় এখন সাকিবের কাছেও নেই।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link