টেস্ট ক্রিকেট, আভিজাত্যের খেলা। যদিও এখন আর টেস্ট ক্রিকেটটা নিয়মিত খেলেন না তিনি। তবুও তিনি ইতিহাসের সেরাদের একজন কিনা তা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হয়। এখনো যখন লাল বল হাতে নিয়ে বোলিং প্রান্তে দাঁড়ান তখন তিনি একটা রহস্যের চাঁদরে ঘেরা থাকেন। সাকিব আল হাসানের আঙুলে খুব বেশি রহস্য আছে তা বলা যাবে না, তবে সাকিব তাঁর রহস্যের মায়াজালটা ছড়ান নিজের ক্রিকেট মস্তিষ্ক দিয়ে।
সাদা পোশাকের ক্রিকেটে তাঁর এই ক্রিকেট মস্তিষ্কের ব্যবহার দেখা গেল ঢাকা টেস্টেও। ৮০ রান নিয়ে ব্যাটিং করে যাচ্ছিলেন দ্বিমুথ করুনারত্নে। প্রায় চার ঘন্টা ধরে ব্যাটিং করছিলেন এই উইকেটে। নিজের একটা নিয়ন্ত্রণ তৈরি করে নিয়েছিলেন বাইশ গজে। আর এই করুনারত্নেকেও ক্রিকেট মেধায় হার মানালেন সাকিব। সাকিবের পাতা ফাঁদে পা দিলেন এই ব্যাটসম্যানও।
করুনারত্নে এমন কোন ব্যাটসম্যান নয় যাকে সহজেই বোকা বানানো যায়। টেস্ট ক্রিকেটে গত কয়েক বছরে তিনি সর্বোচ্চ রান স্কোরারদের একজন। ফলে লড়াইটা হয়েছিল লাল বলের ক্রিকেটের সেরাদের মধ্যে।
যদিও এই সিরিজ শুরু হবার আগে টেস্ট সিরিজটা সাকিবের খেলা নিয়েও ছিল শঙ্কা। প্রথমত এই ফরম্যাটে তিনি এখন আর খেলেন না বললেই চলে। এরপর এবার আবার সিরিজের আগেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেটাকেও হার মানিয়ে চট্টগ্রাম টেস্ট খেললেন।
এছাড়া গত কয়েকবছর তিনি ক্রিকেট খেলে যাচ্ছেন দুনিয়ার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ভ্রমণ করে। খেলায় একটু বিরতি পেলেই চলে যান আমেরিকায়, তাঁর পরিবারের কাছে। সেখান থেকে বিশাল জার্নি করে এসেই আবার মাঠে নেমে পড়েন।
এছাড়া লাল বলের ক্রিকেটে সর্বশেষ ম্যাচ খেলেছিলেন গতবছর। এরপর আর খুব সম্ভবত লাল বলটা হাতেও তুলেননি। এমনকি চট্টগ্রাম টেস্টের আগেও অনুশীলনে বোলিং করেননি। সরাসরি ম্যাচে এসে বোলিং করেছেন। সাকিব নিজের এত বছরের অভিজ্ঞতা আর ওই ক্রিকেট মস্তিষের উপর ভরসা করেছিলেন।
চট্টগ্রাম টেস্টে সেই পুরনো সাকিবের দেখাই মিললো। বল হাতে ব্যাটসম্যানদের নিয়ন্ত্রণ করছেন। চট্টগ্রাম টেস্টে অসাধারণ বোলিং করার পর ঢাকা টেস্টেও একইরকম সাকিব। এই উইকেটেও এখন পর্যন্ত স্পিনারদের জন্য কোন সুবিধা নেই।
এছাড়া সাকিব খুব বড় টার্নারও নন। তবুও তিনি সাফল্যটা পাচ্ছেন এই ক্রিকেট মেধা দিয়েই। দ্বিতীয় দিন শ্রীলঙ্কা ব্যাট করতে নামলে দিনের শেষভাগে তুলে নিয়েছিলেন উইকেট। তবে সাকিবের নিজের আসল জাদুটা দেখান তৃতীয় দিন সকালে।
প্রথম সেশনে ব্যাট করতে নামেন লঙ্কান অধিনায়ক দ্বিমুথ করুনারত্নে। বাংলাদেশের সামনে সবচেয়ে বড় বাঁধা যিনি। তাঁকে আউট করার মত কঠিন কাজটা সাকিব করলেন পরিকল্পনা করে। পুরো ওভারটা সাকিব করেছেন করুনারত্নেকে ফাঁদে ফেলার জন্য। আর শেষ বলে ঠিকই নিজের শিকার তুলে নিয়েছেন।
একটু বাতাসে ভাসা বলটা দেখে করুনারত্নে সামনে এগিয়ে এসেছিলেন। কেননা সহজ কিছু রান দেখা যাচ্ছিল সেখান থেকে। এছাড়া ৮০ রান করা করুনারত্নে তখন পুরো আত্মবিশ্বাসের সাথে খেলছেন। তবে দ্বিমুথকে বাইরে টেনে এনেছিলেন আসলে সাকিবই। বলটা মাটিতে পড়েই ড্রিফট করে ভিতরে ঢুকে গেল।
দিনের শুরুতেই এই ব্যাটসম্যানের উইকেট এনে দিলেন সাকিব। পরিকল্পনা ও তাঁর পুরো বাস্তবায়ন। এন্ড দিস ইজ টেস্ট ক্রিকেট। আর এই সাকিবের প্রশংসা করে অ্যালান ডোনাল্ড বলেছিলেন, ‘আজ ডাগআউটে বসে কয়েকজনকে বলছিলাম, ডি ভিলিয়ার্সের মত ব্যাটার যখন বলে সাকিবকে খেলা কঠিন, তার মান সাকিবের বল খেলা কঠিন। সে স্মার্ট একজন খেলোয়াড়। সে খুব সূক্ষ্মভাবে তাঁর গতির পরিবর্তন করে, সেটা আজ আবার দেখাল।’