এবার তিনি ট্র্যাজেডির হিরো

সাকিব ছুটিতে, সাকিব খেলবেন না; সাকিব ম্যান অব দ্য ম্যাচ। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে টেস্ট খেলতে চান না বলে ছুটি চাইলেন,  ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) দল পেলেন না, সংবাদ সম্মেলনে এলেন না, শোনা গেলো পেটে ব্যাথা, কেউ বললো, জিমে আছেন; সাকিব আসলে বিজ্ঞাপন করছিলেন, জৈব সুরক্ষা বলয় ভঙ্গ করেছেন – চারিদিকে নানাকরকম গুঞ্জন, নানা লোকে বলছে নানা কথা।

সাকিব, সাকিব, সাকিব।

ক্রিকেট মাঠে, ক্রিকেটের বাইরে, সংবাদ মাধ্যমে, ফেসবুকে; কেবল সাকিব আল হাসান। বিরতিও যেন মেলে না। হোক সেটা আলোচনা বা সমালোচনা, হোক সেটা তর্ক কিংবা বিতর্ক। সাকিব কোনো না কোনো ভাবে আছেনই। এর মাঝে একটু ফুসরত। আর সেই ফুসরতে আমরা চোখ খুলে দেখি, তার মুকুটে আরেকটা পালক যোগ হয়ে গেছে।

না, এবার আর পালকটা যুক্ত হয়নি। এবার সাকিবকে নীরবে সইতে হয়েছে হারানোর বেদনা। অসাধারণ একটা টুর্নামেন্ট কাটিয়ে শেষ ম্যাচে এসে ড্রেসিংরুমের দরজায় দাড়িয়ে দেখলেন দলের আত্মসমর্পন। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) আরেকটা শিরোপা ছুতে পারলেন না। জয়টা দুয়ারেই ছিল। কিন্তু, মাত্র একটা রান সব হিসাব এলোমেলো করে দিল।

আপনি ঠিক মনে করতে পারবেন না, সাকিব সর্বশেষ কবে আলোচনায় ছিলেন না। ক্রিকেট থেকে এক বছর নিষিদ্ধ থেকেছেন, ছুটিতে থেকেছেন, বিরতি নিয়েছেন; কিন্তু আলোচনা থেকে দূরে থাকেননি; থাকতে পারেননি।

এই বিপিএলের কথাই ধরুন।

বিপিএলের আগে সাকিবকে নিয়ে বহুমুখী আলোচনা ছিলো, তার মধ্যে একটা ছিলো যে, সাকিব কী ফুরিয়ে যাচ্ছেন? এই প্রশ্নের জবাব তো মাঠের বাইরে দেওয়া যেতো না। তাই এই জবাবটা মাঠেই দিলেন। ব্যাটে-বলে আবার টুর্নামেন্টের সেরা আকর্ষণ হয়ে উঠলেন। টানা পাঁচ ম্যাচে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হলেন; একটা বিশ্ব রেকর্ডই হয়ে গেলো।

সাকিব ছাড়া আর কোনো খেলোয়াড় স্বীকৃত কোনো টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে টানা পাঁচটি ম্যান অব দ্য ম্যাচ পুরষ্কার জিততে পারেননি। কিন্তু গল্পটা এখানে থামলে তো চলবে না। লোকটা যে, সাকিব।

এর একদিন পরই খবর, সাকিব আইপিএলে দল পাননি। আইপিএলে অনেকদিন ধরে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে রয়েছেন তিনি। গত বছর কয়েক অবশ্য পারফরম্যান্স খুব ভালো না। তারপরও দলই পাবেন না, এটা ভাবা কঠিন ছিলো।

নিলামের প্রথম দিন সাকিব দল পাননি। দ্বিতীয় দিনে তাই বলে বেজ প্রাইস কমাননি। ফলে দল পাওয়ার সম্ভাবনাও নষ্ট হয়ে যায়। সাকিব তো এমনই!

এখানেই শেষ?

নাহ। ফাইনালের আগের জন্য কিছুটা জমিয়ে রেখেছিলেন। ফাইনালের আগে ফটো শুট ও সংবাদ সম্মেলনে এলেন না। কেনো? বরিশাল দল বললো, পেটের সমস্যা। সংবাদ সম্মেলনে আসা নুরুল হাসান সোহান বললেন, জিমে আছেন।

আসলেই কোনোটাই না। সাকিব তখন বিজ্ঞাপনের শুটিং করছিলেন।

এই নিয়ে আরেক দফা সাকিব নিয়ে আলোচনা খুব জমলো। সাকিবের সে সব নিয়ে ভাবতে খুব বয়ে গেছে। তিনি ফাইনালে নামলেন। এখান থেকে রূপকথা হবে, সেটাই স্বাভাবিক ছিলো। কিন্তু না। আরেকটু চমক বাকী রয়ে গেলো। সাকিব নিজেও জ্বলে উঠতে পারলেন না। নিষ্প্রভ হয়ে থ্রিলার হারলো তার দল।

এবার সাকিব ট্র্যাজেডির নায়ক হলেন। এই অভিজ্ঞতাটা সাকিবের জন্য নতুন!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link