সাকিব ‘টাইমড আউট’ শ্রীলঙ্কা

তাঁর জন্য খেলাটা আসলে যুদ্ধের থেকে কম কিছু নয়। বিশ্বকাপের আগেও এক বিস্ফোরক সাক্ষাৎকারে খেলাটাকে মিলিয়েছিলেন যুদ্ধের সাথে। অধিনায়ককে বলেছিলেন ‘কমান্ডর’। অথচ, বিশ্বকাপের শুরু থেকে সাকিব আল হাসানের সেই কমান্ডার পরিচয়ের দেখা মিলছিল না কোনো ভাবেই।

তবে, বিশ্বকাপের একদম শেষ বেলায় এসে সাকিব কিছুটা হলেও বোঝালেন – তিনি বাংলাদেশের সত্যিকারের কমান্ডর। বল হাতে উইকেট পেয়েছেন, ব্যাট হাতে রান পেয়েছেন, মাঠে দারুণ সব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন – মানে একজন সেনাপতির মাঠে থেকে যা যা করা উচিৎ তাঁর সব কিছুই সাকিব এদিন দেখিয়েছেন।

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের যে অধ:পতন – সেখানে সাকিবের নিজেরও দায় কম নয়। তামিম ইকবালকে দলে না রাখা, ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে আজব সিদ্ধান্ত নেওয়া – অনেক রকম স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্তই বিশ্বকাপে নিয়েছেন তিনি। মাঠে দল পারফরম করে দেখাতে পারলে হয়তো সাকিব এসব সিদ্ধান্তের জন্য বাহবাই কুড়াতেন।

তবে, সেটা হয়নি। দল কাটাচ্ছে নিজেদের স্মরণকালের সবচেয়ে বাজে বিশ্বকাপ। এমনকি নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষেও অসহায় আত্মসমর্পণ করতে হয়েছে বাংলাদেশ দলকে। বিশ্বকাপের মাঝপথে বিশেষ প্রশিক্ষণ নিতে সাকিব দেশে ফিরেছিলেন। সেটা নিয়েও সমালোচনা হয়। মিরপুরেই সাকিবের অনুশীলন শেষে ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে রব তোলে।

সাকিব সে সকল যন্ত্রনা সহ্য করে গেছেন নীরবে। যে ‘ড্যাম কেয়ার’ ভাব নিয়ে সাকিব বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিলেন ও বিশ্বকাপের শুরুতে দেখাচ্ছিলেন – সেটা ধরে রাখতে পারেননি, পারেননি দলের কড়া প্রটোকল ধরে রাখতেও। দলের ওপর তাঁর নিয়ন্ত্রন কমে গেছে অনেকটাই। এই সব কিছুর জন্য বিশ্বকাপ স্বপ্নটা পুনরুদ্ধার করা না গেলেও অন্তত সাকিবের একটা জবাব দেওয়ার দরকার ছিল। দরকার ছিল ২০১৯ বিশ্বকাপের একটা হারিয়ে যাওয়া ঝলক দেখানোর।

সেটা অবশেষে তিনি করতে পেরেছেন। নামের পাশে তাই দু’টি উইকেট। ১২৬-এর ওপর স্ট্রাইক রেটে খেলা দায়িত্বশীল ইনিংস। এমন দায়িত্বশীলতাটা আরও আগে দেখাতে পারলে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ যাত্রাটা আরেকটু ভিন্ন হত। জবাব দিতে একটু দেরিই করে ফেলেন সাকিব।

জবাবটা ম্যাচের পরিস্থিতি বিবেচনাতেও খুব জরুরী ছিল। সাকিবের এই বিচক্ষণতার কারণেই দিল্লীর এই ম্যাচে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথমবারের মত ‘টাইমড আউট’-এর দেখা মেলে। শিকার হন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস। সাবেক এই লঙ্কান অধিনায়ক কালক্ষেপণ করে উইকেটে নামতে আইসিসির বেঁধে দেওয়া দুই মিনিটের বেশি সময় নেন।

যদিও, এখানে হেলমেটের স্ট্র্যাপ ছিড়ে যাওয়ার ইস্যু সামনে চলে আসে। আইসিসি সেখানে ব্যাখ্যাও দেয়, যেখানে স্পষ্ট বলা আছে সাকিব যা করেছেন – তা আইসিসির রুল বুক মেনেই করেছেন। তবে, যারা সমালোচনা করেন – তাঁদের তো আর রুল বুক মানার দরকার হয় না!

আসলে, সাকিবের সমালোচনা করতে কখনওই কোনো নিয়ম কাজে লাগে না। আউট হয়ে যখন সাজঘরে ফিরলেন তখন নামের পাশে লেখা ৬৫ বলে ৮২ রান। আউট হলেন সেই অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের বলেই। ম্যাথুসের হাতে ঘড়ি না থাকলেও একটা বায়বীয় ঘড়ির দিকে আঙুল তাক করে ‘টাইম আউট’-এর নীরব প্রতিবাদ করলেন। কিন্তু, ততক্ষণে ম্যাচ থেকে খোদ শ্রীলঙ্কারই ‘টাইম আউট’ হয়ে গেছে।

আফসোস একটাই – আরেকটু আগে কি জ্বলে উঠতে পারতেন না সাকিব? যাই হোক, সাকিবের ভাষাতেই বলা উচিৎ – ‘বেটার লেট দ্যান নেভার!’

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link