শান ফিরেছেন, শান ফিরবে পাকিস্তানের?

খুব কাছে গিয়েও এশিয়া কাপের শিরোপা ঘরে তুলতে পারেনি পাকিস্তান। এই ভরাডুবির কারণ খুঁজতে গিয়ে প্রায় সবাই শুরুতেই বলেছেন দলটির টপ অর্ডার সমস্যার কথা। ধারাবাহিকভাবে রান পেলেও ওপেনারদের ধীরগতির ব্যাটিং বিপদে ঠেলে দিয়েছে পাকিস্তানকে৷ আর তাই আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এমন সমস্যার সমাধান করতেই হতো পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে (পিসিবি)।

টপ অর্ডারে দ্রুত রান তুলতে পারে এমন কাউকে সুযোগ দিতে গিয়ে নির্বাচকদের পছন্দ হয়েছে শান মাসুদকে। স্বাভাবিকভাবেই পাকিস্তানের এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান ডাক পেয়েছেন বিশ্বকাপের জন্য ঘোষিত পনেরো সদস্যের দলে। অবশ্য নির্বাচকদের আগে নানান পর্যায়ের ক্রিকেট ভক্তদের সমর্থন ছিল শান মাসুদের পক্ষে। এশিয়া কাপের দলে এই ক্রিকেটারকে দেখতে চেয়েছিলেন তারা।

এই যেমন সাবেক পাক ব্যাটসম্যান আকিব জাভেদ বলেন, ‘তিন নম্বর পজিশনে শান মাসুদের ব্যাট করা উচিত।’ মূলত বর্তমান পরিস্থিতিতে পাক টপ অর্ডার পাওয়ার প্লে এর সঠিক ব্যবহার করতে নিয়মিত ব্যর্থ হচ্ছে। এই ব্যর্থতা দূর করতেই মূল একাদশে মাসুদের অন্তর্ভূক্তি চান আকিব জাভেদ।

এছাড়া আরো অনেক ক্রিকেট বিশ্লেষক প্রায় একই মত জানিয়েছেন, টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে শান মাসুদের ব্যাটিং দেখতে তারা সবাই বেশ আগ্রহী। অবশেষে সেই অপেক্ষার প্রহর ফুরিয়েছে, বিশ্বকাপ দিয়েই প্রথমবারের মত পাকিস্তানের টি-টোয়েন্টি দলে জায়গা করে নিয়েছেন শান মাসুদ।

এশিয়া কাপের আগে থেকেই শান মাসুদকে নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে, মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের টুর্নামেন্টে পাকিস্তানী টপ অর্ডার প্রত্যাশিত পারফর্ম করতে না পারায় সেই আলোচনা আরো বেগবান হয়েছিল। এই জনসমর্থন অবশ্য শান মাসুদের প্রাপ্য বটে, ঘরোয়া টি-টোয়েন্টিতে এই ব্যাটার অন্যতম সেরা। তবু সুযোগ মেলেনি এতদিন।

টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে এখন পর্যন্ত ১১৬ ম্যাচ খেলেছেন শান মাসুদ; এর মাঝে ব্যাটিং করেছেন ১১৪ ইনিংসে, যেখানে তাঁর রান সংখ্যা ২৯৮৫। ব্যাটিং গড় ২৭.৬৩ আর স্ট্রাইক রেট ১২৭ এর কাছাকাছি। এই বামহাতি ব্যাটসম্যানের নামের পাশে রয়েছে একটি সেঞ্চুরি এবং ২০ টি হাফসেঞ্চুরি।

পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান শান মাসুদ। এই ক্রিকেটার পিএসলএলে এখন পর্যন্ত ৩৪ ম্যাচে করেছেন ১০৮২ রান। এই টুর্নামেন্টে তাঁর ব্যাটিং গড় ৩২.৭৮ এবং একই সাথে ১৩৬ এর বেশি স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করেছেন তিনি।

পরিসংখ্যানের হিসেবে পাকিস্তানের বর্তমান ওপেনার বাবর আজম এবং মোহাম্মদ রিজওয়ানের সঙ্গে তেমন একটা পার্থক্য নেই শান মাসুদের। তবে পার্থক্য রয়েছে ব্যাটিং অ্যাপ্রোচে। অন্য দুইজনের মতো ইনিংসের শুরুটা এত রয়ে-সয়ে করেন না এই বামহাতি। বরং ফিল্ড রেস্ট্রিকশনের সুবিধা কাজে লাগিয়ে যতটা সম্ভব দ্রুত রান তোলা তাঁর ব্যাটিংয়ের মূল লক্ষ্য।

ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ টি-টোয়েন্টির সাথে মানানসই হওয়াতেই পাকিস্তানের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গা করে নিয়েছেন শান মাসুদ। ব্যাটিং ছাড়াও মিডিয়াম পেস বোলিং করতে পারেন তিনি; অস্ট্রেলিয়ার মত পেস বান্ধব পিচে পার্ট-টাইম বোলার হিসেবে অধিনায়কের পছন্দ হলেও হতে পারেন এই ৩২ বছর বয়সী ক্রিকেটার৷

বিশ্বকাপ মানেই ভিন্ন অনুভূতি, পনেরো জন একটা পতাকাকে প্রতিনিধিত্ব করে বিশ্ব মঞ্চে। তাই প্রত্যাশার চাপটা সবসময়ই থাকে, তবে শান মাসুদের জন্য সেই চাপটা এখন একটু বেশি। দেশের সবার আস্থার কেন্দ্রে ছিলেন তিনি, বাইশ গজের লড়াইয়ে সেই আস্থার প্রতিদান দেয়াটাই শান মাসুদের প্রধান চ্যালেঞ্জ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link