শানিত হবেন শান

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ফাইনালে হারের জন্য সবাই-ই পাকিস্তানের প্রথম ইনিংসে যথেষ্ট রান তুলতে না পারাকেই দায়ী করছেন। ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক সহ দলের অনেক খেলোয়াড়ই বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাথে কথা বলার সময়ে স্বীকার করেছেন যে দলের রান যদি ১৫০ এর আশেপাশে হত তবে ম্যাচের ফলাফল ভিন্ন রকম ও হতে পারত।

এবার সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান শান মাসুদ দায়টা নিজের ঘাড়ে নিলেন। জানালেন, পিচে সেট হয়েও দলকে বড় সংগ্রহ এনে না দিতে পারায় তিনি নিজেও দোষী!

গত বছরের এই সময় চলাকালীন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শান মাসুদ ইএসপিএন ক্রিকইনফো’র হয়ে ধারাভাষ্য করছিলেন। এমনকি আজ থেকে দুই মাস আগেও, শান মাসুদ তাঁর ক্যারিয়ারে পাকিস্তানের হয়ে কোনো টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেননি। কিন্তু কপালের ফের এমনই যে, এই শান মাসুদকেই ঠিক এক বছর পরের আরেকটা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালের পর সাংবাদিকদের সাথে দলের পক্ষে সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে কথা বলতে আসতে হল।

ফাইনালে দলের এরকম হতাশাজনক ব্যাটিং এর ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করে হলে শান মাসুদ নিজেকে এবং শাদাব খানকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘যখন আমি এবং বাবর ব্যাটিং করছিলাম,আমরা দারুণ একটা ভিত্তি গড়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎই পরপর দুইটা উইকেট পড়ে যায়।কিন্তু আমি এবং শাদাব মিলে সেই পরিস্থিতিকেও সামলে নিয়েছিলাম। কিন্তু তারপর আমি মনে করি না যে আমরা ভাল খেলেছি এবং ইনিংসটা ভালমত শেষ করতে পেরেছি। এর জন্য আমি আমাকে এবং শাদাব কেই দায়ী করব।কেননা আমরা দুজন সেট হয়েও আউট হয়ে গিয়েছি এবং যার পরপরই মূলত  ইংল্যান্ড ইনিংসের নিয়ন্ত্রন নিয়ে নেয়।’

মাসুদ আরও বলেন, ‘এমনও পর্যায় ছিল যেখান থেকে আমরা অনেক বড় সংগ্রহ করতে পারতাম। এমন কি আমরা ১৭০ এর দিকে লক্ষ্য করেই এগোচ্ছিলাম। কিন্তু ইনিংস যেভাবে শেষ হয়েছে,আমাদের উচিত ছিল কোনো একজন সেট ব্যাটসম্যান কে ইনিংসের শেষ পর্যন্ত থেকে খেলে আসা।কেননা,আমি মনে করি এই পিচে ১৫৫-১৬০ যথেষ্ট ভাল স্কোর হত,যেখানে বোলাররা বেশ ভাল সহায়তা পাচ্ছিল।’.

শান মাসুদের ভাষ্যমতে, পিচ আসলেই বোলারদের বেশ সহায়তা করছিল। দ্বিতীয় ইনিংসের শুরতেই শাহীন আফ্রিদির এলেক্স হেলস কে আউট করা থেকে শুরু করে নাসিম শাহ এর নিয়মিত ব্যাটারদের ব্যাট কে মিস করা বল গুলো দেখলেই যা  বোঝা গিয়েছে সমস্ত ম্যাচ জুড়ে।

শান মাসুদ আরও বলেন, ‘আমাদের বোলাররা পুরো ম্যাচেই দারুণ বল করেছে। কিছু কিছু ডেলিভারি ছিল সত্যিই অসাধারণ। কিছু কিছু স্পেল ও অসাধারণ ছিল।কিন্তু সত্যিই এদিন আমাদের ভাগ্য সহায়তা করেনি। আর তাছাড়াও, আমাদের বোলাররা শুরুতেই বেশ কিছু রানও দিয়ে দেয়,যেটা না দিলেও হয়তোবা অন্যরকম হত।’

ম্যাচে শাহীন আফ্রিদির ইনজুরি নিয়েও আক্ষেপ করতে শোনা যায় মাসুদকে। তিনি বলেন, ‘ভাগ্য যে আমাদের সহায়তা করে নি তার বড় প্রমাণ ,ম্যাচের অমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে শাহীনের ইনজুরি।  ওরকম গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ওর দু ওভার বোলিং পুরো ম্যাচের দৃশ্যপটই পাল্টে দিতে পারত।’

ফাইনাল হেরে যাওয়ায় তার এবং দলের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে মাসুদ বলেন, ‘সত্যি বলতে আমরা কিছুটা হতাশ। কেননা,ম্যাচের কিছু গুরুত্বপূর্ণ সময় ছিল,যে সময় গুলোকে নিজেদের করে নেয়া উচিত ছিল।আমরা তা করতে পারিনি।ইংল্যান্ড পেরেছে। তাই দিন শেষে ওরা জিতেছে।’

পাকিস্তানের পুরো টুর্নামেন্ট নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে মাসুদ বলেন, ‘আমরা দুটো হার দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করেছি। আবার পরের তিনটা ম্যাচই জিতেছি। কিন্তু লক্ষ্য করলে দেখবেন আমরা যে ম্যাচ দুটি হেরেছি, খুবই ক্লোজ ম্যাচ ছিল দুটি। অপরদিকে যে ম্যাচ গুলো জিতেছি খুব ভালভাবে আরামেই জিতেছি। এমনকি ফাইনালও, ম্যাচটা আমাদের হাতের নাগালেই ছিল। একটা দল হিসেবে তো আপনি এমন পারফরম্যান্সই চাইবেন। কেননা যখন আপনি ক্লোজ ম্যাচ হারবেন এবং বড় ব্যবধানে জিতবেন, তখন বুঝবেন দল হিসেবে আপনারা সঠিক পথেই আছেন। অপরদিকে, ক্লোজ ম্যাচ গুলোর ফলাফল যেকোনো দিকেই যেতে পারত। তাই সেটা নিয়ে খুব বেশি হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আপনি যা পারেন সেটা হচ্ছে নিজের ভুলগুলো শুধরে নিতে। ভুল আপনি সব সময়ই করতে পারেন। একটা জেতা ম্যাচেও, আবার হেরে যাওয়া ম্যাচেও।’

মাসুদ আরও যোগ করেন, ‘গত বছর আমরা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলেছি, খুব ক্লোজ একটা ম্যাচ হেরেছিলাম। আবার এ বছর এশিয়া কাপের ফাইনালে খেলেছি এবং এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল। তাই বলা চলে দল হিসেবে আমরা সঠিক পথেই আছি। তাছাড়া বাবরের মত তারুণ্যদিপ্ত নেতৃত্ব, শাদাব-রিজওয়ানের মত ব্যক্তিত্ব এখান থেকে দলকে শুধু সামনেই নিয়ে যাবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।’

ফাইনালে শান মাসুদই ছিলেন পাকিস্তানের পক্ষে সেরা ব্যাটসম্যান। তার ২৮ বলে ৩৬ রানই এক সময় পাকিস্তানকে বড় সংগ্রহের আশাও দেখাচ্ছিল।

টি-টোয়েন্টিতে নিজের এই ক্যারিয়ার নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মাসুদ হেসে বলেন, ‘মজার হলেও গত বছর এসময় আমি ইএসপিএন ক্রিইনফোর হয়ে বিশ্বকাপে ধারাভাষ্য করছিলাম। আর আজ আমি এখানে ফাইনাল শেষে কথা বলছি। মানুষের জীবন যেকোন সময় মোড় ঘুরে যেতে পারে। আমারও সেরকম। তবে আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি, আমি যা শিখেছি তা আমাকে কেবলই আরও ভাল হতে শিখিয়েছে। আমি মনে করি,শেখার কোনো শেষ নাই আর এজন্য আমি অল্পতেই সন্তুষ্ট হতে চাই না।বরং প্রতিনিয়ত শিখে আমি একজন খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে আরও উন্নত করতে চাই।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link