মুখ থুবড়ে পড়া প্রবল স্বপ্নের ত্রাণকর্তা

যেই ভয়টা ছিল, সেটাই হয়েছে। দলের ওপেনিং ছিল একেবারেই নড়বড়ে। অভিষেক হওয়া তানজিদ হাসান তামিমের সাথে মোহাম্মদ নাঈমের যুগলবন্দী খুব একটা ফলপ্রসূ হয়নি। ভরসার প্রতীক সাকিব আল হাসান ফিরেছেন দ্রুতই। তাওহীদ হৃদয় ইনিংস শুরু করেছিলেন কিন্তু সেটা দীর্ঘায়িত করতে পারেননি তরুণ এই তুর্কি।

ব্যাটিং ধ্বস। ৩৬ রানে ৩টি উইকেট নেই বাংলাদেশের। ৯৫ রানে নেই চারটি। তবে এতসব কিছুর মাঝে একজন ছিলেন অনড়। তিনি নাজমুল হোসেন শান্ত। টপ অর্ডার ব্যাটারদের মধ্যে একমাত্র শান্তই পেয়েছেন রানের দেখা। শুধু যে তার ব্যাট থেকে রান এসেছে তা নয়। বরং তার ব্যাটে ভর করেই বাংলাদেশ নিজেদের ব্যাটিং বিপর্যয়ের ধাক্কাটা সামলে নেওয়া চেষ্টা করেছে।

ইনিংসের শুরুটা একেবারে রয়েসয়েই করেছেন শান্ত। এতে অবশ্য উইকেটও খানিকটা দায়ী। ম্যাচের আগে সবাই ধারণা করেছিল, রান প্রসবা হবে উইকেট। তবে নিতান্ত স্লো এক উইকেট হয়ে ধরা দিয়েছে পাল্লেকেল্লের বাইশ গজ। তাতে আর যাই হোক দ্রুত রান করা যায় না। শান্ত সেই চেষ্টাও করেননি। বরং তিনি নিজের ইনিংসটি দীর্ঘায়িত করেছেন।

চেয়েছেন ম্যাচের আরও গভীরে পৌঁছাতে। তিনি গিয়েছেন বহুদূর অবধি। ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারে নামা শান্ত আউট হয়েছেন ৪২ তম ওভারে। দীর্ঘ একটা সময় তিনি আগলে রেখেছিলেন একটা প্রান্ত। তবে কাজের কাজটা করতে পারেননি। দলকে একটা ভাল জায়াগয় আর নিয়ে যেতে পারেননি।

নিজের ইনিংসের ৬৭তম বলে ফিফটির দেখা পেয়েছিলেন শান্ত। লঙ্কান অধিনায়ক দাসুন শানাকার বলটা একটু দেরীতে কাট করে পাঠিয়েছিলেন পয়েন্ট অঞ্চলের সীমানার বাইরে। এরপর ধীর গতিতেই ইনিংসটা বড় করছিলেন। শেষ অবধি দেখতে চেয়েছিলেন শান্ত। তবে ১২২ তম বলটা কাল হয়ে দাঁড়ায় শান্তর জন্যে।

এর আগে অবশ্য শান্ত আউট হতে গিয়েও হননি। মেহেদী হাসান মিরাজের সাথে ভুল বোঝাবুঝি। তাতে রানআউটে নিজের উইকেটটি হারান মিরাজ। হারাননা ঠিক, আত্মত্যাগই করেন মিরাজ। কেননা শান্ত ছিলেন সেট ব্যাটার। স্বাভাবিকভাবেই নিজেকে বলি দেওয়াটাই ছিল মিরাজের জন্যে সহজ সমাধান। তখন শান্তর রান ছিল ৭৬। সেখান থেকে খুব বেশি দূর এগোতে পারেননি শান্ত। ৮৯ রানেই থামতে হয়েছে তাকে।

তবে তাকে আউট করা মাহেশ থিকসানার বলটি ছিল দূর্দান্ত। ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে, বল গিয়ে আঘাত করে স্ট্যাম্পে। দারুণ খেলতে থাকা শান্তর অসহায় প্রস্থান। তবে তাতে কোনভাবেই শান্তর এই ইনিংসের মাহাত্ম্য কমে যায় না। কেননা দলকে চক্ষুলজ্জা এড়ানোর মত একটা সংগ্রহ এনে দিতে সহয়তা করেন। ব্যাটিং বিপর্যয়ের দিনে, শান্তর এই ইনিংসই আসলে বাংলাদেশকে একেবারেই ছিটকে দেয়নি ম্যাচ থেকে।

ব্যাট হাতে শান্তর সময়টা দারুণই যাচ্ছিল এই বছর জুড়ে। তবে এশিয়া কাপের ঠিক আগ মুহূর্তে তাঁর অফফর্মের একটা গুঞ্জন উঠেছিল। কিন্তু সেসবকে এক তুড়িতেই উড়িয়ে দিলেন শান্ত। দলের সবচেয়ে কঠিন সময়েই তিনি নিজের স্বরুপে হাজির হলেন। বাংলাদেশ দল নিজেদের প্রথম ম্যাচে থেমেছে ১৬৪ রানে। যার অর্ধেক রান একা শান্তই করেছেন। নতুবা পরিস্থিতি আরও দৃষ্টিকটু হতে পারত। ত্রাণকর্তা শান্ত নিশ্চয়ই আক্ষেপ নিয়ে শেষ করেছেন নিজের ইনিংস।

কেননা তিন অঙ্কের সেই ম্যাজিকাল ফিগারটা তো আরও একবার ছুঁয়ে দেখার সুযোগ ছিল তাঁর। তবে খুব কাছে গিয়েও রয়ে গেলেন বড্ড দূরে। শান্ত নিশ্চয়ই অপেক্ষা করছিলেন নিজের তৃতীয় ওয়ানডে শতকের। তাতে অবশ্য বাংলাদেশের রানও আরও কিছুটা বৃদ্ধি পেত। তবে তা হয়নি। কিন্তু শান্ত নিশ্চিতভাবেই এবারের এশিয়া কাপে নিজের এই ফর্মটা ধরে রাখার চেষ্টা চালাবেন। তবে ব্যাটিং ইউনিটের বাকিদেরও আসলে তাকে সঙ্গ দেওয়া প্রয়োজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link