আমার কাছে নাজমুল হোসেন শান্ত একটা জটিল রহস্য। বাংলাদেশ দলে তাঁর অভিষেক হওয়ার পর বিগত পাঁচবছরে এমন কোনো কোচ নেই যিনি তাঁর ব্যাটিংয়ে মোহগ্রস্ত হননি। বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন হেডকোচ, ব্যাটিং কোচ থেকে শুরু করে বোলিং কোচের মুখে পর্যন্ত তাঁর ব্যাটিং সম্বন্ধে শুধু স্তুতিই শোনা গিয়েছে এতদিন।
শান্ত একজন প্রতিভাবান ব্যাটার। এ কথাটি বাংলাদেশ ক্রিকেটে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে তাঁর জাতীয় দলে জায়গা পাওয়ার আগেই। বলছি না, এটা বাড়িয়ে বলা। আমি নিজেও তা মানি এবং তাঁকে সেই যুব দলের সময়টা থেকে দেখে ও বুঝেশুনেই মানি। কিন্তু সে প্রতিভার সুফল এখন পর্যন্ত খুব সামান্যই ভোগ করতে পেরেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট।
এই শান্ত হলেন আমাদের বিরল ক্রিকেটারদের একজন যিনি বয়সভিত্তিক দলের সবগুলা সিঁড়ি ভেঙে জাতীয় দলে প্রবেশ করেছেন। তাঁর পেছনে বিসিবির বিনিয়োগও কম নয়। এমনকি এখনো ছন্দে না থাকার পরেও নিয়মিতই তিন সংস্করণে বাংলাদেশের হয়ে খেলে যাচ্ছেন তিনি। মাঝসাঝে দল থেকে বাদ পড়েন ঠিকই, তবে নিজেকে প্রমাণ না করেই পুনরায় দলে ফিরে আসেন অন্যদের ব্যর্থতায় এবং পাইপলাইনের দীনতায়।
‘নেটে শান্তর ব্যাটিং দেখা চোখের প্রশান্তি’ – কান পাতলে এ কথাটা নিয়মিতই শোনা যায় আমাদের ক্রিকেট পাড়ায়। এটা কিন্তু রাম-শ্যাম-যদু-মধুর কথা না। এখন পর্যন্ত সাবেক টিম ডিরেক্টর থেকে শুরু করে বর্তমান হেডকোচ, সাবেক ও বর্তমান একাধিক ব্যাটিং কোচ এবং হালের টেকনিক্যাল কনসালটেন্টেরও মুখ নি:সৃত কথা এটি।
তাঁরা যে ভুল, এমনটা বলছি না। একসময় নিয়মিত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার পর এত বছর ধরে ক্রিকেট কোচিংয়ে যুক্ত থাকা এই মানুষগুলা সবাই ভুল পর্যবেক্ষণ করবেন, এটা আমি বিশ্বাস করতে চাই না। তবে বরাবরই শান্তর সম্পর্কে আমাদের কোচদের প্রশংসাবাণীগুলা অতিরঞ্জিত মনে হয়েছে আমার কাছে। এর দায়টা অবশ্য শান্তরই।
দেখুন, শান্ত নেটে কী করেন, কেমন খেলেন- আমি জানি না। শান্তকে নেটে কখনোই দেখা হয়নি আমার। হয়তো তিনি নেটে খুবই সাবলীল থাকেন। কিন্তু আমার হিসাবটা মিলে না যখন ম্যাচে শান্তর ব্যাটিং দেখি।
একজন ব্যাটার নেটে বছরের পর বছর এত এত কোচকে তাঁর ব্যাটিংয়ে মুগ্ধ করার পরও বলতে গেলে নিয়মিতই জায়গায় ঠায় দাঁড়িয়ে কীভাবে অ্যাওয়ে ফ্রম দ্য বডি খেলতে গিয়ে পেছনে ক্যাচ দেন, আমার বুঝে আসে না! কিংবা পা না নাড়িয়ে অফ স্টাম্পের বাইরের বল খেলতে গিয়ে কীভাবে প্লেইড অন হন অথবা ব্যাট ও প্যাডের মাঝে ফাঁক তৈরি করে কীভাবে বলকে স্টাম্পে আঘাত হানার সুযোগ করে দেন, মাথায় ধরে না!
শান্তর এই সমস্যাগুলা অনেক আগে থেকেই। যে যা-ই বলুক না কেন, তাঁর ব্যাটিং টেকনিকে যথেষ্ট সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তারপরেও ধারাবাহিকভাবে রান না করে নিয়মিতই এরকম অর্ডিন্যারি ওয়েতে আউট হওয়া একজন ব্যাটারের নেট ব্যাটিংয়ে একের পর এক কোচকে নিয়মিত মুগ্ধ করে যাওয়ার ব্যাপারটা রহস্যই বটে!