ক্রিকেট তাঁর ইতিহাসে পেয়েছে শচীন টেন্ডুলকার, ডন ব্র্যাডম্যান, ওয়াসিম আকরাম, ব্রায়ান লারার মতো অতিমানবদের যারা কিনা অনেকদিন যাবৎ দেশের হয়ে খেলেছেন। কিন্তু ক্রিকেটে অনেকেই ছিলেন যারা কিনা ইনজুরি, বাজে ফর্ম কিংবা বোর্ডের সাথে ঝামেলার জন্য ক্যারিয়ার দীর্ঘায়িত করতে পারেননি।
কিন্তু অল্প সময়ের জন্য ক্রিকেট খেললেও নিজেদের ছাপ রেখে যেতে সক্ষম হয়েছেন, দর্শকদের উল্লাসে ভাসিয়েছেন। আসুন দেখে নেয়া যাক এমন পাঁচ ক্রিকেটারকে যারা কিনা অল্প সময় ক্রিকেট খেললেও নিজেদের পারফরমেন্সের দ্বারা দর্শকদের মনে জায়গা করে নিয়েছেন।
- সাইমন জোন্স (ইংল্যান্ড)
এই ইংরেজ পেসার স্মরণীয় হয়ে আছেন ২০০৫ অ্যাশেজে দারুণ বোলিং করার সুবাদে। ইংল্যান্ডের হয়ে ১৮ টেস্ট খেলে ৫৯ উইকেট শিকার করেন তিনি। দারুণ গতি এবং রিভার্স সুইং দিয়ে ব্যাটসম্যানদের বিভ্রান্ত করতেন তিনি।
কিন্তু বাজে ইনজুরিতে পড়ায় তার ক্যারিয়ার বেশিদূর আগায়নি। ইনজুরি থেকে পুরোপুরি সেরে না ওঠায় ২০০৫ অ্যাশেজের পর দল থেকে বাদ পড়েন। পরবর্তীতে আর কখনোই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা হয়নি তার। তবে চার বছরের ছোট ক্রিকেট জীবনে যথেষ্ট ছাপ রেখে গিয়েছেন নিজের।
- রায়ান হ্যারিস (অস্ট্রেলিয়া)
সাবেক অস্ট্রেলিয়ান পেসার রায়ান হ্যারিস বিখ্যাত হয়ে আছেন ক্রমাগত শর্ট বল করে ব্যাটসম্যানদের নাভিশ্বাস তুলে ফেলার জন্য। অজিদের হয়ে ২৭ টেস্টে ১১৩ উইকেট শিকার করেন তিনি। পাশাপাশি রঙিন জার্সিতেও তিনি ছিলেন সমান উজ্জ্বল, ২১টি একদিনের ম্যাচ খেলে ৪৪ উইকেট শিকার করেন তিনি।
কিন্তু নিয়মিত ইনজুরিতে পড়ায় দীর্ঘদিন দলকে সার্ভিস দিতে পারেননি তিনি। পাশাপাশি বেশি বয়সে অভিষেক ঘটায় দলকে বিদায় বলে দিতে হয় অল্প সময় পরেই। অবশেষে ২০১৫ সালে ছয় বছর অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলার পর ক্রিকেটকে বিদায় জানান হ্যারিস।
- বিনোদ কাম্বলি (ভারত)
শচীন টেন্ডুলকারের চেয়ে বেশি প্রতিভাবান বলে বিবেচিত হওয়া বিনোদ কাম্বলির ক্রিকেট ক্যারিয়ার থেমে গিয়েছে প্রস্ফুটিত হবার আগেই। মাঠের বাইরের বিশৃঙ্খল জীবনযাপন আর বাজে ফর্মের কারণে মাত্র ২৪ বছর বয়সে ১৭ টেস্ট খেলেই ইতি টানতে হয়েছে ক্রিকেট জীবনের। প্রচারের আলোয় আসার পর মদ আর মেয়ে মানুষে ডুবে থাকতে থাকতেন তিনি।
ভারতের হয়ে টেস্টের চেয়ে ওয়ানডেটাই বেশি খেলেছেন। মোট ১০৪টি ওয়ানডে খেলেছেন, তাতে ৩২.৫৯ গড়ে দু’টি সেঞ্চুরি আর ১৪টি হাফ সেঞ্চুরিসহ করেন ২,৪৭৭ রান। আর ১৭ টেস্টে ৫৪.২০ গড়ে ১,০৮৪ রান করেন তিনি। ২০০০ সালে দল থেকে বাদ পড়ার পর আর কখনোই দলে ফিরতে পারেননি তিনি।
- স্টুয়ার্ট ম্যাকগিল (অস্ট্রেলিয়া)
ম্যাকগিলের ক্রিকেটে উত্থান হয়েছিল বড্ড ভুল সময়ে। কারণ তিনি যখন লেগস্পিন শুরু করেন ততদিনে বিশ্ব বুঁদ হয়ে আছে শেন ওয়ার্ন নামের এক মাদকতায়, যিনি ছিলেন সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে।
ম্যাকগিল হতে পারতেন ইতিহাসের অন্যতম সেরা বোলার, তার পরিসংখ্যানও সেই কথার সাক্ষ্যই দেবে। মাত্র ৪৪ টেস্টে শিকার করেছেন ২০৮ উইকেট। কিন্তু ১০ বছরের ক্রিকেট জীবনের প্রায় পুরোটা সময় কাটাতে হয়েছে সাইডলাইনে বসে, শেন ওয়ার্নের ছায়ায়। তবে যখনই সুযোগ পেয়েছেন তখনই নিজের প্রতিভার জানান দিয়েছেন। অবশেষে ২০০৮ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিতে বাধ্য হন।
- শেন বন্ড (নিউজিল্যান্ড)
তর্কসাপেক্ষে ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা পেসার শেন বন্ড। নিজের অভিষেক ম্যাচেই অজিদের ব্যাটিং লাইনআপকে ধসিয়ে দেন একাই, তুলে নেন মার্ক ওয়াহ, রিকি পন্টিং, মাইকেল বেভানের মতো ব্যাটসম্যানদের উইকেট। দুরন্ত গতির পাশাপাশি বলকে দুই দিকেই সুইং করাতে পারার ক্ষমতা ছিল বন্ডের। পাশাপাশি বলকে লেট সুইংও করাতে পারতেন।
কিউইদের হয়ে ৮২ ওয়ানডে খেলে শিকার করেছেন ১৪৭ উইকেট। কিন্তু বারবার ইনজুরির থাবায় ক্যারিয়ারটা লম্বা হয়নি বন্ডের। নয় বছরের ক্যারিয়ারে টেস্ট খেলেছেন কেবল ১৮টি!!তাতেই উইকেট নিয়েছেন ৮৭ টি, গড় মাত্র ২২.০৯। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যেন একটু বেশিই জ্বলে উঠতেন বন্ড। অজিদের বিপক্ষে ১৭ ম্যাচে নিয়েছেন ৪৪ উইকেট! চোটাঘাতে বারবার জর্জরিত না হলে ক্রিকেটকে দিতে পারতেন অনেক কিছুই। ক্রিকেটে তাই শেন বন্ড হয়ে আছে এক আক্ষেপের নাম।