২০১৯ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতের টপ অর্ডারে ধ্বস নেমেছিল। কিন্তু মিডল অর্ডারের কেউই সেদিন রক্ষা করতে পারেননি দলকে; লম্বা সময় ধরেই মিডল অর্ডারে কাউকে ভরসা করার পায়নি টিম ইন্ডিয়া। সেই দুঃসময়, দুশ্চিন্তার অবসান ঘটিয়েছেন শ্রেয়াস আইয়ার – তাঁর উপস্থিতি ভোজবাজির মত বদলে দিয়েছে দলটির ব্যাটিং লাইনআপকে।
এই বিশ্বকাপে আইয়ার যেন থামতেই ভুলে গিয়েছেন; রীতিমতো ‘রান মেশিন’ হয়ে উঠেছেন। সেমিফাইনালে এবার হাঁকিয়েছেন দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি, তাতেই বৈশ্বিক আসরে ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরির মালিক বনে গিয়েছেন এই তরুণ। কিউইদের বিপক্ষে আউট হওয়ার আগে খেলেছেন ৭০ বলে ১০৫ রানের দারুণ এক ইনিংস।
শুভমান গিলের ইনজুরিতে মাঠে নেমেছিলেন তিনি। এরপর বিরাট কোহলির সঙ্গে গড়েন ম্যারাথন জুটি, তবে কোন সময়ের জন্যই তাঁকে রক্ষণাত্মক মনে হয়নি। মাত্র ২৫ বলেই ৩৮ রান তুলেছিলেন এই ব্যাটার, দশ বল পরেই ফিফটি পূর্ণ করেন তিনি। এটি ছিল তাঁর টানা চতুর্থ পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস।
অর্ধশতক করার পর আরো আগ্রাসী হয়ে ওঠেন এই ডানহাতি, কিউই বোলারদের তুলোধুনো করেন এসময়। প্রায় প্রতি ওভারেই বাউন্ডারি এসেছিল তাঁর ব্যাট থেকে, তাতেই ৬৭ বলে তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছে যান তিনি। অর্থাৎ ৫০ থেকে ১০০-তে যেতে মাত্র ৩২ বল লেগেছে শ্রেয়াসের।
দলকে পাহাড়সম রানের পুঁজি এনে দিয়ে শেষমেশ ৪৯তম ওভারে লং অনে ক্যাচ দেন তিনি। ততক্ষণে কাজের কাজটা ঠিকই করে গিয়েছেন; বলা যায় গত বিশ্বকাপে যেদিকে সবচেয়ে দুর্বল ছিল ভারত সেই দিকটাকেই শক্তির জায়গা বানিয়েছেন এই তারকা।
অথচ টুর্নামেন্টের শুরুটা ভাল হয়নি তাঁর, সেটা নিয়ে সমালোচনা কম হয়নি। একের পর এক ম্যাচে একাদশে সুযোগ পাওয়া নিয়ে অসন্তোষও দেখা দিয়েছিল। টুর্নামেন্টের শুরুর ছয় ম্যাচ তাঁর ছন্দহীন ব্যাটিং সেই সমালোচনার মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
তবে সব প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে তিনি ফিরেছেন চেনা রূপে, সেরা ছন্দে। এতটাই ধারাবাহিক হয়ে উঠেছেন যে এখন বাইশ গজে নামলেই রান বন্যার জন্য প্রস্তুত থাকতে হয় দর্শকদের। সব মিলিয়ে এই আসরে ৫২৬ রান করেছেন তিনি।
নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ফাইনালে আরো একটা বড় ইনিংস খেলে এই রান সংখ্য বাড়ানোর জন্য নিশ্চয়ই অধীর আগ্রহে আছেন আইয়ার। আর এই বিশ্বকাপে আইয়ারের যেমন পারফরম্যান্স – তাতে সারা জীবন তাঁকে মনে রাখবে ভারতীয় ক্রিকেট।